সংক্ষিপ্ত
শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপ। গঙ্গার মর্ত্যে প্রত্যাবর্তন ও সাগর রাজার পুত্রদের জীবন বিসর্জনের লোকগাঁথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই বিখ্যাত তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর। এখানে ছিল সাংখ্যদর্শনের আদি-প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম।
'সব তীর্থ বার বার গঙ্গাসাগর একবার', কুম্ভমেলার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা হল গঙ্গাসাগর মেলা। বাংলার সাগর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিল মুনির আশ্রমে প্রতি বছর মক্রর সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এই ধর্মীয় উৎসব ও মেলা। হিন্দুদের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান। প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন এখানে বহু পূণ্যার্থী তীর্থস্নান করতে আসেন। গঙ্গা নদী ও বঙ্গোপসাগরের এই পবিত্র মিলনস্থলে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব।
বিখ্যাত তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর-
বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত অবাঙালি পুণ্যার্থীদের ভিড়ই হয় সর্বাধিক। এটি একদিকে তীর্থভূমি আবার অন্যদিকে মেলা প্রাঙ্গণ। এই দুইয়ের মেলবন্ধনে জম-জমাট হয়ে ওঠে গঙ্গাসাগর-মেলা। শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপ। গঙ্গার মর্ত্যে প্রত্যাবর্তন ও সাগর রাজার পুত্রদের জীবন বিসর্জনের লোকগাঁথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই বিখ্যাত তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর। এখানে ছিল সাংখ্যদর্শনের আদি-প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম।
গঙ্গাসাগর মেলা ২০২৩ পূণ্য স্নানের সময়সূচী-
এই মাসের ৮ জানুয়ারি রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এই মেলার। চলবে ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার অবধি। পূণ্যস্নানের সময় শুরু হবে ১৪ জানুয়ারি শনিবার সন্ধে ৬টা ৫৩ মিনিট থেকে। এই সময় থেকেই শুরু হবে মকর সংক্রান্তির পূণ্য স্নানের যোগ। এই যোগ থাকবে ১৫ জানুয়ারি রবিবার সন্ধে ৬টা ৫৩ পর্যন্ত।
গঙ্গাসাগর মেলার উৎপত্তি-
পুরাণ অনুযায়ী, একবার কপিলমুনির ক্রোধের আগুনে সাগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন এবং তাদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। সাগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সাগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন এবং তাঁদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন। মহাভারতের বনপর্বে তীর্থযাত্রা অংশে গঙ্গাসাগর তীর্থের উল্লেখ রয়েছে। পালবংশের রাজা দেবপালের একটি লিপিতেও তাঁর গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে ধর্মানুষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে।
কপিল মুনির আশ্রম-
লোক-কাহিনী অনুযায়ী এখানে কপিল মুনির একটি আশ্রম ছিল। এক সময় সেটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আশ্রমটিকে কেন্দ্র করে তার ভক্তদের সমাগম বাড়তে থাকে। প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি মকরসংক্রান্তি বা পৌষ-সংক্রান্তির পূণ্যতীথিতে লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটে। এই সমাগমকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিরাট মেলা যার নাম গঙ্গাসাগর-মেলা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গাসাগর মেলার জন্য করেছেন বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থা-
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এই বছর তীর্থযাত্রীদের জন্য ২,২৫০টি সরকারি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ৫০০ প্রাইভেট বাস, ৪টি বার্জ, ৩২টি জাহাজ, ১০০টি লঞ্চ, ২১টি জেটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, তিনি রেলওয়েকে মেলা চলাকালীন হাওড়া, শিয়ালদহ এবং নামখানায় অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর অনুরোধ করেন। কোনও ভক্তকে কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না। যাত্রীদের সুবিধার্থে নৌকার মাঝিরাও উপস্থিত থাকবেন। তারা যাত্রীদের সুবিধার দিকে খেয়াল রাখবে। যাত্রীরা একক টিকিটে গঙ্গাসাগর যেতে পারবেন।
গঙ্গাসাগর মেলা ২০২৩ থাকছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা
মেলা প্রাঙ্গণে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেজন্য একটি মেগা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হচ্ছে। সেখান থেকে পুরো মেলা মনিটরিং করা হবে। পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণে ১১৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। জিপিএস ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে, এর বাইরে ২১০০ সিভিল ডিফেন্স ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হচ্ছে। ১০টি অস্থায়ী ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হবে। যেখানে ২৫টি দমকল ইঞ্জিন রয়েছে। যাত্রীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য ১০ হাজারের বেশি টয়লেট নির্মাণ করা হবে। মেলা শেষ পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি ভিড় আশা করা হচ্ছে।