সংক্ষিপ্ত

সাপের কামড় থেকে রক্ষা পেতেই আপামর বাঙালীর ঘরে ঘরে মাটির সরায় দুধ-কলা দিয়ে দেবী মনসাকে পুজা করা হয়। সারা দিন উপবাস থেকে পুজা শেষে শাগু-দুধ-কলা ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে মা মনসার পুজা সম্পন্ন করে তবে উপবাস ভাঙ্গেন মহিলারা।

মনসা তার মন্ত্রবলে পৃথিবীতে নিজের কর্তৃত্ব বিস্তার করেন। এরপর মনসা শিবকে প্রসন্ন করেন। শিব তাকে বলেন নারায়ণ প্রসন্ন করতে। মনসার প্রতি প্রসন্ন হয়ে নারায়ণ তাকে সিদ্ধি নামক দৈবী ক্ষমতা প্রদান করেন। এর ফলে দেবী হিসেবে মনসার কর্তৃত্ব সুবিদিত হয়। পুরাণেই প্রথম মনসার জন্ম-সংক্রান্ত উপাখ্যানটি পাওয়া যায়।

পুরাণ মতে, মনসা ঋষি কশ্যপের সন্তান তথা কাশ্যপ গোত্রজ। উল্লেখ্য, মঙ্গলকাব্যে শিবকে মনসার পিতা বলা হলেও, পুরাণে সেই তথ্যের সমর্থন পাওয়া যায় না। একবার সাপ ও সরীসৃপরা পৃথিবীতে উৎপাত শুরু করলে, ঋষি কশ্যপ নিজের মন থেকে মনসা দেবীর জন্ম দেন। মন থেকে জন্ম বলে তার নাম হয় ‘মনসা’। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা তাকে সর্প ও সরীসৃপদের দেবী করে দেন।

সাপের কামড় থেকে রক্ষা পেতেই আপামর বাঙালীর ঘরে ঘরে মাটির সরায় দুধ-কলা দিয়ে দেবী মনসাকে পুজা করা হয়। সারা দিন উপবাস থেকে পুজা শেষে শাগু-দুধ-কলা ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে মা মনসার পুজা সম্পন্ন করে তবে উপবাস ভাঙ্গেন মহিলারা। সমাজে এই পুজার প্রচলিত হওয়ার জন্য রয়েছে প্রচলিত এক পুরান কাহিনি। ১৭ আগষ্ট বুধবার বাংলার ঘরে ঘরে শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজিত হবেন দেবী মনসা।

কশ্যপ ঋষি জরৎকারুর সঙ্গে মনসার বিয়ে দেন। জরৎকারু এই শর্তে মনসাকে বিবাহ করতে রাজি হয়েছিলেন যে , যদি মনসা তার কথার অবাধ্য হন , তবে তিনি মনসাকে পরিত্যাগ করবেন। একবার মনসা জরৎকারুর নিদ্রাভঙ্গ করতে দেরি করেছিলেন। এতে সেদিন জরৎকারুর পূজা করা হয়ে ওঠেনি। এই ঘটনায় দুঃখিত হয়ে জরৎকারু মনসাকে ত্যাগ করেন। পরে দেবতাদের অনুরোধে তিনি মনসার কাছে ফিরে আসেন এবং আস্তিক নামে এক পুত্রের জন্ম দেন।

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে পুরো শ্রাবণ মাস জুড়ে মনসা পূজা হয়। পুজা উপলক্ষে হয় পালা গান ‘সয়লা’। এই পালার বিষয় হল— পদ্মপুরাণ বা মনসা মঙ্গল। সারা রাত ধরে পালা আকারে ‘সয়লা’ গান গায়। পুরুলিয়ায় মনসা পূজায় হাঁস বলি দেওয়া হয়। রাঢ বাঁকুড়ায় জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে দশহরা ব্রত পালন করে মনসা পূজা করা হয়। তখন এখানে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। মনসা পূজার অঙ্গ হল অরন্ধন। রাঢ়ে চৈতন্যদেবের সময়ে মনসাকে মা দূর্গার এক রূপ মনে করা হত। তাই কোনও কোনও জায়গায় পূজায় বলি দেয়া হত। আজও অনেক পূজায় পাঠা বলি হয়।