সংক্ষিপ্ত
এই কয়েক মাস বয়সেই ছেলে না তাঁকে মুখ করে। এতেও রক্ষে নেই নুসরতের। কাজ থেকে ফিরতে দেরি হলে ছেলের বাবাও নাকি মেজাজ দেখায়। বলতে গেলে গত কয়েক মাসে ঈশানের জন্মের পর গৃহস্থলির জীবনটাই বদলে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন নুসরত।
দীপাবলিতে এক্কেবারে ফুরফুরে মেজাজে নুসরত জাহান। হাসি-মজা ঠাঠ্ঠা বরাবরই পছন্দ করেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। স্রোতের বিপরীতে হাঁটা থেকে একটু অন্যধরনের মনোভাব রাখা- নুসরতের এমন সব বিষয়ে বেশ খ্যাতি রয়েছে। প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে বরাবরই শিরোনামে উঠে এসেছেন নুসরত। সদ্য মা হয়েছেন। ঘরে একরত্তি ছেলে। এহেন পরিস্থিতিতে পার্টনার অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত-র সঙ্গে কাশ্মীরে গিয়ে একটি নাম ঠি না হওয়া ছবির গানের শ্যুটও সেরে এসেছেন। সেই কাজ থেকে ফিরতে না ফিরতেই কলকাতায় দীপাবলি দিন কয়েক আগে থেকে শুরু করে দিয়েছেন জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি-র শ্যুটিং-ও। নতুন ছবি থেকে ঘর-সংসার, বাচ্চা থেকে জীবনসঙ্গী- কেমন কাটছে নুসরতের দিনলিপি? এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি আরাত্রিকা দে-র সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিলেন নুসরত জাহান।
আরাত্রিকা, প্রতিনিধি, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- কলকাতায় ফিরেই শুরু করে দিয়েছো জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি-র শ্যুটিং, এই ছবিতে তোমার চরিত্রটা কেমন?
নুসরত জাহান- জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি-তে আমার চরিত্রটির নাম রাকা। যে খুব সহজেই সকলকে বিশ্বাস করে ফেলে। কোন একদিন এই মেয়েটি কিছু দুষ্টু চোরের পাল্লায় পড়ে এবং এই ক্রাইসিস থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে রাকা এই নিয়ে এগোবে ছবির গল্প। এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে আমারা একটা লাইট-হার্টেড কমেডি নিয়ে কাজ করছি।
আরাত্রিকা, প্রতিনিধি, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- এখন তোমার ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছে, ঘরে নতুন সদস্য, তাহলে শ্যুটিং-এর বিষয়গুলো সামলাচ্ছো কী করে?
নুসরত জাহান- আমার জীবনে সত্যি একটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। ছেলের সব প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখে কাজ ফেলতে হচ্ছে। চেষ্টা করছি যাতে ওর অসুবিধা না করে কাজটা করা যায়। সেইভাবে শ্যুটিং-এর রুটিন করার চেষ্টা করছি। বলতে গেলে আমার কাজ কর্ম সবকিছু ছেলের কথা মাথায় রেখে সাজাতে হচ্ছে। এক নতুন অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন- টলিপাড়ার বিজয়া দশমী, অভিনেত্রীদের সিঁদুর রাঙা পোস্টে শুভেচ্ছাবার্তার ঝড়
আরাত্রিকা, প্রতিনিধি, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- তার মানে তো বাড়ি ফেরার তাড়া এখন মারাত্মকরকমে! কাজের সঙ্গে সঙ্গে মাথায় রাখতে হচ্ছে যে সময় নষ্ট করা যাবে না, যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরতে হবে!
নুসরত জাহান- আর বলো না! এতো এখন সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি। ঈশান বড় হচ্ছে। ওর বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত আমি উপভোগ করতে চাই। কোনওভাবেই ওর কিছু আমি মিস করতে চাই না। ফলে কাজ থেকে বাড়ি ফেরার তাগাদাটা বড্ড বেশি এখন। সারাক্ষণ মাথায় রাখতে হয় যে শ্যুটিং-এর কাজ মিটলে আর দেরি করা যাবে না। এখানে আজ যথারিতি ১ ঘণ্টা লেট হয়ে গিয়েছে। আমি জানতামও না যে প্রেসের সঙ্গে কথা বলার আছে। তোরা তো আর ছাড়ছিস না (বলে বেশ খানিকটা হেসে উঠলেন)! আমায় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। কয়েকদিন পরে তোমরা দেখবে এই মোবাইল ফোনেই ও অ্যাঁ অ্যাঁ করছে।
আরাত্রিকা, প্রতিনিধি, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- তুমি যখন কাজে বের হচ্ছ তাহলে ঈশানের দেখভাল কে করছে? ওর কাছে কে থাকছে ?
নুসরত জাহান- না, ওকে একা ফেলে রেখে আমি বের হই না। আমি কাজে বের হলে ওর কাছে ওর বাবা থাকে। আর ওর বাবা বের হলে আমি থাকি। এইভাবেই ঈশানের দেখভাল চলছে। কেউ না কেউ ওর সঙ্গে সারাক্ষণ রয়েছে। এই আমি বাড়ি ফিরলে ঈশানের বাবা ছুটি পাবে। তাই কাজ সেরে বাড়ি ফিরতেই হবে। কাজ থেকে দেরি করে ফিরলে আর রক্ষে নেই! ছেলে ও ছেলের বাবা- দুজনের কাছেই বকা খেত হবে। ছেলে তো মা-এর গলা পেলেই বিভিন্ন মুখের অঙ্গ-ভঙ্গি করে ওর বিরক্তি প্রকাশ করবে। আর বাবা তার মতো করে রাগ দেখাবে। বাড়ি যদি দেরি করে ফিরি আমার ছেলেও আমায় মুখ করবে আর ওর বাবাও আমায় ছাড়বে না ।
আরও পড়ুন- যশের জন্মদিনে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলেন নুসরাত, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ফ্রেমবন্দি রোমান্স
আরাত্রিকা, প্রতিনিধি, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- তোমার জীবনে এমন এক গুরুতর দায়িত্ব, তারমধ্যে তোমায় ও যশ-কে কাশ্মীরে গিয়ে শ্যুটিং করতে হয়েছে, সে সময় ঈশানকে কি করে সামলালে?
নুসরত জাহান- কাশ্মীরে গিয়ে শ্যুটিং আমাদের করতেই হত। এই ছবির শ্যুটিং প্রায় শেষ। গানের দৃশ্যের শ্যুটিংগুলো বাকি ছিল। তাই আমাকে ও যশকে যেতেই হত। কোনও উপায় ছিল না। আমরা দুজনেই গিয়েছিলাম । শ্যুটিং ভালোই হয়েছে। তবে ঈশানকে ফেলে এমনভাবে আমরা কতটা যেতে পারব জানি না।
আরাত্রিকা, প্রতিনিধি, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- যশ ও তুমি অভিনয় জগতের সহকর্মী হলেও রাজনৈতিক মঞ্চের আঙিনায় তোমরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী, বাড়িতে এই নিয়ে সমস্যা হয় না?
নুসরত জাহান- না, আমরা কাজের জায়গা, রাজনীতি সব বাড়ির বাইরে ফেলে আসি। বাড়ির ভিতরে এসবের ঢোকা বারণ। আমারা কাজ নিয়ে সারাক্ষণ একে অপরের সঙ্গে কথা না বলারই চেষ্টা করি। রাজনীতি নিয়ে তো নয়ই। ও একটা রাজনৈতিক ভাবাদর্শে বিশ্বাসী, আমি আবার অন্য ভাবাদর্শে। কিন্তু তারমানে এই নয় যে বাড়ির ভিতরে এই নিয়ে দুজনেই নিজেদের মধ্যে সমস্যা করবো।
--- সাক্ষাৎকার শেষ। এবার নুসরতের বাড়ি ফেরার তাড়া। ঘরে মা-এর পথ চেয়ে ছোট্ট ঈশান। জীবনের অনেকটাই যে এখন বদলে গিয়েছে তা নুসরতকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ততক্ষণে। পড়িমরি করে ছুট লাগালেন নুসরত। দীপাবলির এই ক্ষণে এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রার্থনা- ভালো থাকুন নুসরত এবং সুন্দর হয়ে উঠুক ঈশান-কে ঘিরে প্রতিটি মুহূর্ত।
আরও পড়ুন- সাজগোজ- পেটপুজো-আড্ডা দেদার চলবে বাড়ির অন্দরেই, ঈশানের প্রথম পুজোর প্ল্যান জানালেন নুসরত