সংক্ষিপ্ত

শেষ দেখাই দেখতে পেলেন স্বামীকে। যখন শুনলেন স্বামী আর ফিরবেন না, তখন থেকেই হাহাকার করে চলেছেন সন্ধ্যা রায়। 

কতদিন গলা শুনিনি, কতদিন মানুষটাকে দেখিনি-এই আক্ষেপ এজন্মে বোধহয় মেটার নয় প্রখ্যাত পরিচালক তরুণ মজুমদারের স্ত্রী সন্ধ্যা রায়ের। যেদিন থেকে অসুস্থ ছিলেন পরিচালক, সেদিনই ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু চোখের দেখা দেখতে পাননি। বিশেষ নিরাপত্তায় চিকিৎসা চলছিল, ফলে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল সবারই। তাই শেষ দেখাই দেখতে পেলেন স্বামীকে। যখন শুনলেন স্বামী আর ফিরবেন না, তখন থেকেই হাহাকার করে চলেছেন সন্ধ্যা রায়। 

ষাট-সত্তরের দশক ছিল তরুণ মজুমদার-সন্ধ্যা রায় জুটির। শুরু ১৯৬৫ সাল থেকে। ‘একটুকু বাসা’ এবং ‘আলোর পিপাসা’ ছবি দু’টি বানিয়েছিলেন তরুণ মজুমদার। যথাক্রমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং বসন্ত চৌধুরী নায়ক। দু’টি ছবিতেই নায়িকা সন্ধ্যা রায়। এই জুটির জনপ্রিয় ছবি ‘ঠগিনী’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘পলাতক’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘কুহেলি’, ‘সংসার সীমান্তে’। এ ছাড়া, ‘বালিকা বধূ’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-সহ তরুণবাবুর প্রায় সমস্ত ছবিতেই সন্ধ্যা রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।

তবে এই জুটির কথা এখানেই শেষ করলে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে অনেক কথা। পরিচালক-অভিনেত্রীর প্রেম-পরিণয় নতুন নয়। তবে তরুণ মজুমদার ও সন্ধ্যা রায়ের প্রেম বহু ভাল ছবি, নতুন নায়ক-নায়িকার জন্ম দিয়েছে। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, রাখী গুলজার, তাপস পাল, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া রায়চৌধুরী, দেবশ্রী রায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ তরুণ মজুমদারের হাত ধরে উঠে এসেছেন। ‘ফার্স্ট লুক’ থেকেই প্রত্যেক নায়িকাকে যত্ন নিয়ে তৈরি করতেন সন্ধ্যা নিজে। অভিনয়ের প্রশিক্ষণও দিতেন দু’জনে। যার ফলাফল একমুঠো জনপ্রিয় ছবি। 

তরুণ মজুমদার সন্ধ্যা রায়ের জীবনে একাধারে স্বামী, পরিচালক, গুরুর ভূমিকা পালন করেছেন। এক সঙ্গে কাজ করতে করতে প্রেম। সেই প্রেম আরও গাঢ় সাতপাকের বাঁধনে। বাঁধন কেটে গেল আজ। তরুণ মজুমদার পাড়ি দিলেন দিকশূণ্যপুরের পথে। অতিমারির সময়ে খুব একটা ভালো ছিলেন না তরুণ মজুমদার। প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন তিনি। ১৫ জুন ফের তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। বার্ধক্য জনিত নানা অসুখে তিনি ভুগছিলেন। শনিবার থেকে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। রবিবার সমস্যাটা আরও বাড়ে। জানা যায় তিনি ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। তাঁর সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তাঁর ডায়ালিসিস শুরু হয়। তবে শেষ রক্ষা হল না। 

পরিচালক তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

'চাঁদের বাড়ি' আজ 'আলো'হীন- চোখের জলে প্রিয় পরিচালককে বিদায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের

ভিন্ন স্বাদের সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাণে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তরুণ মজুমদার। তাঁর চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার দর্শকদের বিমোহিত করে। তরুণ মজুমদার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র – বালিকা বধূ, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ফুলেশ্বরী, দাদার কীর্তি, ভালবাসা ভালবাসা, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা, শহর থেকে দূরে, পথ ভোলা, চাঁদের বাড়ি, আলো ইত্যাদি। তিনি পদ্মশ্রী, জাতীয় পুরস্কার সহ বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন BFJA পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। 

সোমবার সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে তাঁর জীবনাবসান হয়। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন তরুণ মজুমদার। পদ্মশ্রী সম্মানেও সম্মানিত হয়েছেন। তবে তাঁর সেরা প্রাপ্তি বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের ভালোবাসা।