সংক্ষিপ্ত
- উত্তমও একদিন চমকে গিয়েছিল ঘটকবাবু'র চমকে
- একদিকে সস্তার মদে চুমুক অন্যদিকে টান টান স্ক্রিপ্ট পড়া
- ঘটকবাবু পড়ছেন আর উত্তম মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছেন
- মানুষটা যে স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাচ্ছিলেন সেটা পুরোটাই ছিল নিজের মন গড়া
বাঙালির হার্টথ্রব উত্তম কুমার। মহানায়কের জীবনটাই যেন পুরো একটা সিনেমার গল্প। আজ তিনি আর নেই, পরে রয়েছে শুধু স্মৃতিটুকুই। তবে যা কিছু তিনি দিয়ে গেছেন, তা আর দ্বিতীয়টি গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। কারণ তিনি হলেন বাঙালির মহানায়ক। তাকে নিয়ে নানান গল্প রয়েছে বাঙালির মননে। তার মৃত্যু যেন বাঙালির সিনেমার এক অধ্যায়ের শেষের সূচনা। সকলেই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল তার মৃত্যুর খবরে। ঠিক তেমনই উত্তমও একদিন চমকে গিয়েছিল ঘটকবাবু'র চমকে। উত্তম কুমারকেও চমকানো যায়, এই প্রশ্নই হয়তো এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয়টি একটু খোলসা করে বলা যাক,
আরও পড়ুন-হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন সঞ্জয় দত্ত, কেমন আছেন বলিউডের 'মুন্নাভাই'...
সালটা ১৯৭০। মদের নেশায় চুর হয়ে রয়েছেন ঘটকবাবু। সারাদিন শুটিং শেষ করে সদ্যই বাড়ি ফিরেছেন উত্তম কুমার। পরের দিন আবার শুটিং, সুতরাং তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ার প্ল্যানও ছিল মহানায়কের। প্রায় ঘুমিয়েও পড়েছেন উত্তম। হঠাৎই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখেন দরজায় দাঁড়িয়ে একজন । অরুনবাবু একটু নামবেন কথা ছিলো, অরুন নামটা শুনে তড়িঘড়ি করে নেমে গেলেন উত্তম। একটা স্ক্রিপ্ট শোনাবো আপনাকে, তাই একটু আসতে হবে। সেই মতো ওনার কথা মেনে উত্তম এলেন বাড়ির কাছের মিন্টো পার্কে। পার্কের বেঞ্চে বসা এক দিস্তা কাগজ বের করে চিত্রনাট্য পড়তে শুরু করলেন মানুষটা। তিনি হলেন ঋত্বিক ঘটক। হঠাৎই যেন কোথা থেকে হাজির হয়ে গেল এক বোতল সস্তা মদ। একদিকে সস্তার মদে চুমুক অন্যদিকে টান টান স্ক্রিপ্ট পড়া, সমানে চলছে দুটোই। ঘটকবাবু পড়ছেন আর উত্তম মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছেন। আর তিনি মদ গিলে চলেছেন। যদিও তাতে তার পড়াতে একটুও ছেদ পড়ছে না। তিনি পড়ে চলেছেন অনড়গল।
মদের গন্ধে যেন ছেয়ে গেছে চারিদিক। নেশায় চুর হয়েও বাধ মানছে না স্ক্রিপ্ট পড়া। কোনওভাবেই যেন আটকানো যাচ্ছে না ঘটকবাবুকে। তার সঙ্গে উত্তমও পুরো মজে গেছেন তার অনবদ্য চিত্রনাট্যে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চললেও দেড় ঘন্টা পার হতেই নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না ঘটকবাবু। তড়িঘড়ি করে কাগজের স্ক্রিপ্টটি পাঞ্জাবির পকেটে ভরেই এলিয়ে পড়লেন বেঞ্চের মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গেই উত্তমও বলে উঠলেন, দাদা, আমার কাঁধে ভর দিন আর আজ রাত্তিরটা আমার বাড়িতেই থেকে যাবেন, এই কথা বলেই নিজের বাড়িতে প্রায় বয়ে নিয়ে এলেন এত বড় মানুষটাকে। মিন্টো পার্ক থেকে ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে নিয়ে এসেই সোফায় এনে শুইয়ে দিলেন মহানায়ক। আর শোয়াতে গিয়েই উঠল বিপত্তি। হঠাৎই পাঞ্জাবির পকেট সেই ক্রিপ্টের কাগজগুলি বেরিয়ে আসে। আর তা দেখা মাত্রই স্তম্ভিত হয়ে গেছিলেন উত্তম।
এক দিস্তে সাদা কাগজ যেখানে কলমের কোনও চিহ্নই নেই। এতক্ষন মানুষটা যে স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাচ্ছিলেন সেটা পুরোটাই নিজের মন গড়া। সেদিনের মহানায়ক ঋত্বিকের এহেন কান্ডেই চমকে গিয়েছিল। আর ঠিক এমনটাই হয়েছিল উত্তম কুমারের সঙ্গেও। মনে মনে হয়তো তিনি বলে উঠেছিলেন অবিশ্বাস্য। যদিও অবিশ্বাস্য হলেও তা সত্যিই বেদনাদায়ক।