সংক্ষিপ্ত
মণীশের ছবি মানেই সমাজের মাঝে বয়ে চলা এমন কিছু কথা, যার বহমানতায় সকলেই অভ্যস্ত কিন্তু তার শ্বাস-প্রশ্বাসকে অনুভব করার চেতনাটা কম। সব সময়ই মণীশের তৈরি করা সিনেমায় স্থান পেয়েছে মানুষের দীর্ঘশ্বাস, লড়াই করতে করতে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া স্বপ্নের চিতাগ্নি দেখে অথবা তথাকথিত এক অকেজো লোকের স্বপ্ন পূরণের চাহিদায় নিজেকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানোর গল্পে।
ঝুঁকি নিতে ভালোবাসেন না চেনা-জানা গণ্ডীর মধ্যেই ঘুরে বেড়ানোটা পছন্দ? এমনই এক সুরে এশিয়ানেট নিউজ বাংলার এডিটর দেবজ্যোতি চক্রবর্তীর সঙ্গে আলাপ চারিতায় মেতেছিলেন মণীশ কুন্দ্রা। কথা হচ্ছিল মণীশের নতুন ছবি সিয়া-কে নিয়ে। পরিচালক হিসাবে এটাই মণীশের প্রথম ছবি। যদিও, মণীশের প্রোডাকশন সংস্থা দৃশ্যম ফিল্মস ইতিমধ্যেই এমন এমন কিছু ছবি তৈরি করেছে যা বলিউড শুধু নয় আন্তর্জাতিক সিনেমাপ্রেমীদের মনেও গভীর ছাপ ফেলেছে। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- ধনক, মাসান, আঁখো দেখি, নিউটন, রামপ্রসাদ কি তেহর-বি। দৃশ্যম ফিল্মস ইতিমধ্যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যও ছবি এবং ওয়েব সিরিজ বানিয়েছে। এই সবের ক্ষেত্রে মণীশ বরাবরই ছিলেন একজন ক্রিয়েটারের ভূমিকায়। পরিচালক হিসাবে অভিষেকটা তিনি ঘটালেন সিয়া-তে।
মণীশের ছবি মানেই সমাজের মাঝে বয়ে চলা এমন কিছু কথা, যার বহমানতায় সকলেই অভ্যস্ত কিন্তু তার শ্বাস-প্রশ্বাসকে অনুভব করার চেতনাটা কম। সব সময়ই মণীশের তৈরি করা সিনেমায় স্থান পেয়েছে মানুষের দীর্ঘশ্বাস, লড়াই করতে করতে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া স্বপ্নের চিতাগ্নি দেখে অথবা তথাকথিত এক অকেজো লোকের স্বপ্ন পূরণের চাহিদায় নিজেকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানোর গল্পে। অথবা, গণতন্ত্রের মুখোশটাকে খুলে দিয়ে বেআব্রু করে দেওয়া রাষ্ট্রের কঙ্কালসার চেহারাটাকে তুলে এনেছেন সিনেমাটিক প্রয়োগে। সিয়া-র বিষয়বস্তুও এই সমাজের, রোজকার জীবনের- আর সেখান থেকেই শুরু হল এই সাক্ষাৎকার।
দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, প্রতিনিধি, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- সকলে বলছে মণীশ নিজের কমফোর্ট জোন থেকে না বের হওয়ার জন্যই সিয়া-র মতো বিষয় বস্তুতে পরিচালক হিসাবে আত্মপ্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মণীশ কুন্দ্রা, পরিচালক, প্রোডিউসার, সিয়া- প্রথমেই যেটা আমি বলব যে সিনেমা করে আমায় সংসার চালাতে হয় এমনটা নয়। সিনেমা আমার কাছে সমাজের একটা অংশ। যার মাধ্যমে আমরা সমাজের বিভিন্ন অদেখা জিনিসগুলো দেখতে চাই। অনুভব করতে চাই সেই সব অব্যক্ত কথাকে যা আমার মধ্যে সিনেমার প্যাশনটাকে জাগিয়ে তুলবে। তাই সিনেমা আমার কাছে একটা প্যাশনও বটে। মানুষের কথা বলার এবং মানুষ ইচ্ছে-অনিচ্ছাকে বোঝার। আমি চাই আমার সিনেমার লাইফ শেলটা যাতে দীর্ঘজীবি হয়। মানুষ যাতে আজ থেকে ২৫ বছর পরেও এই ছবিটা চালিয়ে দেখে, তেমন ইচ্ছে নিয়ে আমি ছবি বানাই যাতে সেটা কাল্ট হয়ে ওঠে। যার জন্য আজও মানুষ মাসানকে নিয়ে কথা বলে, আজও আঁখো দেখি সমাজতাত্বিক আলোচনায় উঠে আসে। মানুষ কথা বলে নিউটন-কে নিয়ে। শুধু এই কয়টি ছবি নয়, আরও কিছু ছবি আমাদের বাকেটে রয়েছে যা নিয়ে মানুষ রিলিজের পাঁচ-ছয় বছর পরও কথা বলছে। আর আমি চাই যেখানে অর্থ বিনিয়োগ করছি, সেটা যেন একটা সঠিক জায়গা হয়। স্বাভাবিকভাবেই আমি দৃশ্যম ফিল্মস-এর এখন পর্যন্ত তৈরি প্রতিটি ছবির প্রেক্ষাপট এবং তাদের সাফল্যের সমীকরণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সুতরাং, আমি এমন একটা জায়গাতেই কাজ করবো যা আমার কাছে পরিচিত এবং সাফল্য এনে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, প্রতিনিধি, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- আপনার এখন পর্যন্ত যত ছবি তৈরি করেছেন তার অধিকাংশতেই স্থান পেয়েছে অবেহেলিত মানুষদের গল্প এবং সেই গল্পকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রতিবাদ। সিয়া-র কাহিনি-কেও এই দিশাতে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন?
মণীশ কুন্দ্রা, পরিচালক, প্রোডিউসার, সিয়া- আমরা সব সময়ই এমন কিছু গল্পকে মেলে ধরার চেষ্টা করি যা আমাদের চারপাশে রোজ ঘটে চলেছে। এমন গল্পকে খুঁজে বের করি যার সঙ্গে সমাজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যার জন্য আমরা মাসানের মতো কাহিনি মেলে ধরতে পেরেছি, নিউটন থেকে শুরু করে আঁখো দেখি, রামপ্রসাদ কি তেহর-বি-র মতো সামাজিক কাহিনিকে সকলের মনের মতো করে পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে। সিয়া-ও এমন এক কাহিনি যা সমাজের নারী নির্যাতনের ছবিটাকে এক অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে তুলে ধরেছে। সিয়া-র মতো আরও কত সিয়া যে রোজ এই সমাজের বুকে নিস্পেষিত হচ্ছে তার ইয়াত্তাও নেই। এরা প্রত্যেকেই লড়ছে। এদের লড়াইকে মান্যতা দিতেই সিয়া-র মতো সিনেমা তৈরি করেছি। মানুষ যাতে বুঝতে পারে এক জন নারীকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে কতটা অসম লড়াই লড়তে হয়। এমনকি অধিকাংশ সময়েই সিয়ার মতো মহিলাদের লড়াইকে টুটি চিপে হত্যা করে দেওয়া হয়। দিনের পর দিন মহিলাদের উপরে নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি এনসিবি রিপোর্টেও তার উল্লেখ মিলছে। সিয়াতে দেখানো হয়েছে কীভাবে এক ধর্ষণের শিকার তরুণী সমাজের বিপরীত স্রোতে হেঁটে বিচারের জন্য লড়াই করছে। এই বিষয়টা আমি হৃদয় থেকে অনুভব করেছি। তাই সিদ্ধান্ত নেই যে সিয়া-র মতো বিষয়ে সিনেমা তৈরি করার।
দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, প্রতিনিধি, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- একজন পরিচালকের চোখ থেকে নয়, একজন সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে সিয়া চরিত্রকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মণীশ কুন্দ্রা, পরিচালক, প্রোডিউসার, সিয়া- এই নিয় বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় যে সিয়া আমাদের মধ্যেকার-ই একটা চরিত্র। সে আমাদের মেয়ে হতে পারে, বোন হতে পারে, মা হতে পারে- যা এমন এক অসহনীয় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে শুধু নয়, বিচার চাওয়ার প্রার্থনাকেই এক্কেবারে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। নারীদের জন্য আজও এই সমাজ কতটা নিরাপদ সেই প্রশ্নই তুলে ধরেছে সিয়া। পরিবারের সবসময়ই আমরা মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কুচিত হয়ে থাকি। সারাক্ষণ একটা চিন্তা লেগেই থাকে কীভাবে তাদের নিরাপদে রাখা যায়। আমার তিন বোন রয়েছে। একটা সময় সব সময় চিন্তা লেগে থাকত যে তাঁরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারল কি না, তারা কোনও বিপদের সম্মুখিন হল কি না। এই সমাজ যে এখন মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে অপরাগ সেই কথাই বলা হয়েছে সিয়া-র মধ্যে দিয়ে। অবশ্যই এটা উঠে এসেছে সঠিক যুক্তি-বিচার-বিশ্লেষণে, এমনটা নয় যে কোনও মন গড়া কাহিনি তৈরি করা হয়েছে। এই সিনেমা তৈরি করতে গিয়ে অনেক কেস স্টাডি করা হয়েছে। যে সব মহিলা বাস্তব জীবনে এমন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। দেখা করেছি। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। রিল লাইফের সিয়া-কে জীবন্ত করে তুলতে আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের নিংরে দিয়েছি। তাঁদের কথা শুনে, তাঁদের লড়াই-এর গল্প শুনে মনের মধ্যে দৃঢ় হয়েছে যে কীভাবে তাঁদের কন্ঠকে আরও শক্তিশালী করা যায়, কীভাবে তাঁদের লড়াই-এর আওয়াজকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। কারণ এই সমাজের দেখা উচিত নারীর উপর নির্যাতনে এবং তাঁদের কন্ঠরোধে কীভাবে নিরন্তর অত্যাচার হয়ে চলেছে।
আরও পড়ুন-
অস্কারের দৌঁড়ে 'কাশ্মীর ফাইলস'-'RRR'-কে পিছনে ফেলে দিল 'চেলো শো', কী প্রতিক্রিয়া প্যান নলিনের
শাড়ি আলতা চন্দন এখন আর শুধু মেয়েদের দখলে নয়, মোহময় পুরুষের ছবি শেয়ার করে টুইটারে আবেগতাড়িত তসলিমা নাসরিন
কেমন হবে অষ্টমীর লুক? নাকে নথ, শাড়ি-গয়নায় কোয়েলের মতো সাবেকি সাজে সেজে উঠতে পারেন আপনিও