সংক্ষিপ্ত
১৯৬৩ সালে কানপুরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম রাজুর। মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্ম হয়নি রাজুর, প্রতি পদে সাফল্যের ছোঁয়া পেতে পেরোতে হয়েছে দুর্গম পথ। রাজুর বাবা রমেশ চন্দ্র শ্রীবাস্তব ওরফে বলাই কাকা ছিলেন একজন কবি। অটো চলিয়ে কোনও মতে দিন গুজরান হত তাঁদের।
সময়টা ২০০৫ সাল, গ্ল্যামার জগতে সদ্য পা রাখা এক কমেডিয়ান রাজু শ্রীবাস্তব। মুখে হাসি ও দু'চোখে সারল্য নিয়ে মঞ্চ মাতিয়েছিলেন রাজু। শুধু হাসি দিয়েই জয় করেছিলেন হাজার হাজার দর্শকের মন। সেই থেকেই কমেডির দুনিয়ায় যাত্রা শুরু রাজুর। এরপর আর বিশেষ ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক শোতে ডাক পেয়েছেন কৌতুক শিল্পী। অল্পদিনের মধ্যেই পৌঁছেছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কমেডির পাশাপাশি হাতেখড়ি হয়েছে অভিনয়ও। অবশেষে ৪২ বছরের কমেডির যাত্রা শেষে মঞ্চ শূন্য করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাজু।
১৯৬৩ সালে কানপুরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম রাজুর। মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্ম হয়নি রাজুর, প্রতি পদে সাফল্যের ছোঁয়া পেতে পেরোতে হয়েছে দুর্গম পথ। রাজুর বাবা রমেশ চন্দ্র শ্রীবাস্তব ওরফে বলাই কাকা ছিলেন একজন কবি। অটো চলিয়ে কোনও মতে দিন গুজরান হত তাঁদের। তবে শিল্পী সত্ত্বা বড় বালাই। পেটের খিদে না মিটলেও মিটত মনের খিদে। বলাই কাকার কবিতা শুনতে পালাগানের মতো কবিতা শোনার আসর বসত প্রায়শই। গুণী ব্যক্তিরা ভিড় জমাতেন সেখানে। বাবার থেকে সেই শিল্পীসত্ত্বা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন রাজু। তবে ঠিক কবিতা নয়, রাজুর টান ছিল হাস্যরসেই। ছোট থেকেই সফল কমেডিয়ান হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। স্বপ্ন ছিল মায়ানগরীতে পাড়ি দেওয়ার, স্বপ্ন ছিল উত্তরপ্রদেশের ছোট শহর থেকে বি-টাউনের একজন হয়ে ওঠার।
পরিকল্পনা মাফিকই এগোচ্ছিল জীবন। গোল বাঁধল অন্য জায়গায়। খ্যাতনামা কবির ছেলে কিনা শেষে 'লোক হাসাবে'? তবু স্বপ্নের টানে সমস্ত প্রতিকূলতার বেড়া ভেঙে এগিয়ে গিয়েছিলেন রাজু। ১৯৮০ সাল নাগাদ প্রথম কমেডির দুনিয়ায় পা রাখেন তিনি। তারপর শুরু হয় সংগ্রামের পথে। বি-টাউনের আলোর নিচে নিজের জায়গা করে নেওয়ার লড়াই। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে কমেডিয়ানন হওয়ার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই।
স্ট্রাগলের মধ্য দিয়েই কেটেছিল দীর্ঘ ২০ বছর। অটো চালানোর সময় যাত্রীদের চুটকি শুনিয়ে মনোরঞ্জন করতেন। কখনও ডাক পেতেন এক আধটা ছোট অনুষ্ঠানে। মন খুলে মানুষকে হাসানোর বদলে মিলত কখনও ৫০, কখনও আবার ৮০ টাকা ।
‘টি টাইম মনোরঞ্জন’-এর হাত ধরে টেলিভিশনে যাত্রা শুরু রাজুর। তারপর হাতেখড়ি হয়েছে অভিনয়ও। ২০০৫ সালে গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জে অংশ নেন তিনি। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি রাজুকে। ছোট সিনেমা পার্শ চরিত্রের পাশাপাশি ম্যায়নে পেয়ার কিয়া থেকে বাজিগর, বম্বে টু গোয়া থেকে আমদানি আঠান্নি খরচা রুপাইয়ার মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন রাজু। ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ’ শোতে তাঁর ‘গজোধর ভাইয়া’র চরিত্রটির জন্য ‘কিং অফ কমেডি’ শিরোপাও পান তিনি। রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস’-এও অংশ নেন রাজু।
আরও পড়ুন - অবশেষে থামল দীর্ঘদিনের লড়াই, জীবনযুদ্ধে হেরে ৫৮ বছরে প্রয়াত হলেন রাজু শ্রীবাস্তব
শুধু কমেডি হয় রাজনীতির ময়দানেও পিছিয়ে ছিলেন না তিনি। ২০১৪ সালে কানপুর থেকে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী হন রাজু। তারপর সমাজবাদী পার্টি ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এ তাঁকে মনোনীত করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আরও পড়ুন - এখনও ভেন্টিলেটরে রয়েছেন রাজু , কতটা সুস্থ হয়ে উঠলেন কমেডিয়ান, মিরাকেলের অপেক্ষায় পরিবার
গত ১০ অগাস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয় হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, ভেন্টিলেশন যাবতীয় চেষ্টা সত্ত্বেও শেষরক্ষা হল না। ৪২ দিনের লড়াই শেষ করে ২১ সেপ্টেম্বর চির বিদায় নিলেন রাজু।
আরও পড়ুন - চিকিৎসার সামান্য উন্নতি, ধীরে ধীরে হাত পা নেড়ে কথা বলারও চেষ্টা করছেন কমেডিয়ান রাজু