সংক্ষিপ্ত
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনকের (Rishi Sunak) পদত্যাগ। তারপরই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী (Britain Prime Minister)বরিস জনসনও (Boris Jhonson)সরে গেলেন নিজের পদ থেকে। ব্রিটেনের রাজনীতিতে সবথেকে চর্চিত নাম তিনি। জেনে নিন তার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য।
ব্রিটেনের শাসক দল কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয় মুখ তিনি। দলের তরুণ প্রজন্মের নেতা হিসেবে রয়েছে যথেষ্ট খ্যাতি। ভারতীয় বংশোদ্ভুত এবং ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাই। গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, মাইক্রোসফটের সত্য নাদেল্লা, টুইটারের পরাগ আগরওয়াল, আইএমএফের ফার্স্ট ডেপুটি এমডি গীতা গোপীনাথ-সহ বিদেশে সফল ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হয় তাঁর নামও। তিনি ঋষি সুনক। ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে তার ইস্তফার পর বরিস জনসনের পদত্যাগ। ব্রিটেনের রাজনীতিতে এই মুহুর্তে সবথেক চর্চিত নাম। কিন্তু কে এই ঋষি সুনক। কীভাবে উঠে এলেন ব্রিটেনের রাজনীতি শীর্ষ স্তরে। জেনে নিন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনকের ইতি বৃত্তান্ত।
শিক্ষা জীবন-
১২ মে ১৯৮০ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি ব্রিটেনের সাউদাম্পটনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের উইনচেস্টার কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এর পরে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, যেখানে তিনি দর্শন ও অর্থনীতি অধ্যয়ন করেন। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ফুলব্রাইট স্কলার ছিলেন, যেখান থেকে তিনি এমবিএ করেন।
কর্মজীবন-
ঋষি সুনাক স্নাতকের পর গোল্ডম্যান শ্যাক্সের সাথে কাজ করেন এবং পরে হেজ ফান্ড ফার্মের অংশীদার হন। রাজনীতিতে আসার আগে ঋষি একটি বিলিয়ন পাউন্ডের গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই কোম্পানি ব্রিটেনে ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগে সহায়ক ছিল। রাজনীতিতে আসার আগে ঋষি একটি বিলিয়ন পাউন্ডের গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই কোম্পানি ব্রিটেনে ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগে সহায়ক ছিল।
পারিবারিক জীবন-
ঋষি সুনকের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। যতদূর জানা যায়, অনেক আগে সুনকের পূর্বপুরুষরা পাঞ্জাব থেকে পূর্ব আফ্রিকায় চলে যায়। পরে সেখান থেকে ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস শুরু করে। খুব সম্ভবত জীবিকার সন্ধানেই এভাবে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ছুটে বেরিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে ২০০৯ সালে নারায়ণমূর্তি ও সুধামূর্তির মেয়ে অক্ষতাকে বিয়ে করেন ঋষি। সুনকের বাবা ছিলেন পেশায় চিকিৎসক। আর তার মা ফার্মাসিস্ট। আর তার শ্বশুর নারায়ণমূর্তি হলেন তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস এর প্রতিষ্ঠাতা।
রাজনৈতিক জীবন-
রাজনৈতিক জীবনে ২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড কেন্দ্র থেকে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন ঋষি সুনক। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ‘লোকাল গভর্নমেন্ট’-এর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর গুরুত্ব আরও বাড়ে। এরপর সরাসরি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে। বর্তমানে অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টিতেও ঋষি সুনক জনপ্রিয় মুখ। তরুণ প্রজন্মের নেতা হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেইসাথে সরকারি মুখপাত্র হিসেবে টিভি-রেডিয়ো সাক্ষাৎকারে তাঁকেই পাঠান বরিস জনসন। ফলে ব্রিটেনের আম জনতার মধ্যেও তিনি অতি পরিচিত মুখ। প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম আস্থাভাজনও ছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম পূর্ণ মন্ত্রিসভা পদ অর্থাৎ রাজকোষের চ্যান্সেলর নিযুক্ত করা হয় ঋষিকে।মহামারী চলাকালীন ব্যবসা এবং কর্মচারীদের সাহায্য করার জন্য কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি বিশাল প্যাকেজ তৈরির পরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ঋষি। তখন কনজারভেটিভ পার্টির ওয়েবসাইটে তাঁকে ‘পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল।
বিতর্কেও নাম জড়িয়েছে ঋষি সুনকের-
ঋষি সুনকের স্ত্রী অক্ষতার কারণে বিতর্কে জড়িয়েছে ঋষি সুনকের নাম। ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসে তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির অংশীদারি এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত আয় বাবদ ব্রিটেনে কর না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি ব্রিটেনের কর ব্যবস্থায় অক্ষতা ‘নন-ডোমিসাইলড’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন। যাঁরা ব্রিটেনের স্থায়ী নাগরিক নন, তাঁদের এই তকমা দেওয়া হয়। বিদেশ থেকে তিনি যে আয় করেন তার জন্য ব্রিটেনে তাঁকে কর গুনতে হয় না। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ইনফোসিসে অক্ষতার ০.৯১% শেয়ার রয়েছে। যার মূল্য ৬৯ কোটি পাউন্ড (প্রায় ৬৮৩০ কোটি টাকা)। সেই শেয়ার বাবদ ডিভিডেন্ড হিসেবে হাতে আসবে ১.১৬ কোটি পাউন্ড। কিন্তু ‘নন-ডোমিসাইলড’ তকমার জন্য তাঁকে ব্রিটেনে কোনও করই দিতে হবে না। যেখানে ব্রিটিশ নাগরিক হলে গুনতে হত ৩৮.১% ডিভিডেন্ড কর।
বর্তমানে বরিস জনসনের পদত্যাগের পর ব্রিটেনের রাজনীতিতে বড় কোনও পটপরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেখানে ঋষি সুনকের রাজনৈতিক কেরিয়ার আর উচ্চতায় ওঠার সম্ভাবনাও প্রবল। কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূতের হাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দায়িত্ব যায় কিনা, তার উত্তর দেবে সময়।