সংক্ষিপ্ত

  • বর্ধমান রেল স্টেশনে বড়সড় দুর্ঘটনা
  • ভেঙে পড়ল স্টেশনের মূল ভবনের একাংশ
  • বরাতজোরে এড়ানো গেল বড় ক্ষয়ক্ষতি
  • বিপদ আন্দাজ করে নিরাপদ দূরত্বে সরে যান যাত্রীরা

পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আগে কম্পন। তাতেই সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন বর্ধমান স্টেশনের মূল প্রবেশদ্বারের আশেপাশে থাকা যাত্রীরা। তাই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেও শনিবার রাতে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেল বর্ধমান জংশন স্টেশনে। রেল এবং স্থানীয় প্রশাসনের খবর অনুযায়ী, ব্যস্ত সময়ে স্টেশনের মূল ভবনের বিরাট অংশ ভেঙে পড়লেও ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন দু' জন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

 এ দিন রাত ৮.১০ নাগাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বর্ধমান স্টেশনের দোতলা মূল ভবনের একটি বড় অংশ। যে অংশটি ভেঙে পড়েছে, সেটির নীচেই ছিল অনুসন্ধান কেন্দ্র। মূল প্রবেশদ্বার সংলগ্ন গাড়ি বারান্দার একাংশই ভেঙে পড়ে। ব্যস্ত সময়ে স্টেশনে বহু যাত্রী থাকায় প্রথমে অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যায় যে ধ্বংসস্তূপের নীচে কোনও যাত্রী সেভাবে চাপা পড়েননি। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, স্টেশনের দোতলা ভবনের ওই অংশটি এ দিন ভেঙে পড়ার আগে কেঁপে ওঠে। কংক্রিকের অংশ, কাচ খুলে পড়তে শুরু করে। এতেই সতর্ক হয়ে যান ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা মানুষ। পড়িমড়ি করে তাঁরা নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। তার মধ্যেই ছ' জন আহত হন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে দু' জনের আঘাত গুরুতর। তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি এই দু' জনের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। নিত্যযাত্রীদের অনেকেই বলছেন, বছরের অন্য সময় হলে দুর্ঘটনা আরও বড় আকার নিতে পারত। কারণ অন্যান্য সময়ে অনুসন্ধান কেন্দ্র সংলগ্ন ওই অংশে অনেকেই থাকেন। কিন্তু শীতের রাত হওয়াতেই এ দিন তা অনেকটা ফাঁকা ছিল। 

আরও পড়ুন- হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল মূল ভবন, বর্ধমান স্টেশনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

আরও পড়ুন- তাসের ঘরের মতো ভাঙল বর্ধমান স্টেশন ভবন, আতঙ্কে দিশেহারা যাত্রীরা

দুর্ঘটনার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল, পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে রেল পুলিশ এবং জিআরপি। ঘটনাস্থলে পৌঁছন পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা। উদ্ধারকাজ তদারকিতে যান জেলাশাসক বিজয় ভারতী। এছাড়াও ঘটনাস্থলে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। পাশাপাশি পূর্ব রেলের হাওড়ার ডিআরএম ইশা খান সহ ইঞ্জিনিয়ার এবং আধিকারিকদের একটি দলও ঘটনাস্থলে যায়।

আরও পড়ুন- বর্ধমানে ভেঙে পড়ছে স্টেশন ভবন, দেখুন সেই ভয়াবহ মুহূর্তের ভিডিও

মূল ভবনের যে অংশটি এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেটির অবস্থাও ভাল নয় বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। ওই অংশটিও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না, রেল এবং জেলা প্রশাসনের বিশেষজ্ঞরা তা পরীক্ষা করে দেখছেন। যাত্রীদের স্টেশনে যাতায়াতের জন্য অন্য দু'টি বিকল্প পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রাথমিকভাবে এক এবং দুই নম্বর প্ল্যাটফর্ম-এ কিছুক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হলেও পরে তা খুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন হাওড়ার ডিআরএম। দ্রুত ধ্বংসস্তূপ সরাতে জেসিবি মেশিন ব্যবহার করা হয়। যাতে ধ্বংসস্তূপের নীচে আর কেউ চাপা পড়ে রয়েছেন কি না, তা বোঝা সম্ভব হয়। 

হাওড়ার ডিআরএম জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ দশ দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এত বড় বিপর্যয় কি না, তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লেই তা স্পষ্ট হবে। আহত যাত্রীদের রেলের নিয়ম মেনেই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন ওই রেলকর্তা।