মাসিক বেতন কার্যকরভাবে ব্যবস্থাপনা করতে বাজেট তৈরি, ঋণ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং খরচ বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি খরচ কমানোও প্রয়োজন।

অনেকেই তাদের মাসিক বেতন কিভাবে সঞ্চয় করবেন তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। আপনার বেতন ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করার জন্য ৫০/৩০/২০ নিয়মটি অনুসরণ করা যেতে পারে। অর্থাৎ ৫০% জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় খরচের জন্য, ৩০% জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য এবং ২০% সঞ্চয়ের জন্য। তবে, এই নিয়ম সব ক্ষেত্রেই কার্যকর নাও হতে পারে। যেমন, বাড়ি কেনার জন্য ডাউন পেমেন্ট জোগাড় করতে হলে, কেবল ২০% সঞ্চয় করে পর্যাপ্ত অর্থ জোগাড় করতে অনেক সময় লাগতে পারে। তাই, অর্থ সঞ্চয় করার কিছু কার্যকর উপায় এখানে দেওয়া হল।

১. বাজেট তৈরি করুন

কার্যকর সঞ্চয়ের মূল ভিত্তি হলো বাজেট তৈরি। প্রথমে আপনার আয় এবং ব্যয়কে শ্রেণিবদ্ধ করুন। বাড়ি ভাড়া, ইএমআই, বিদ্যুৎ বিলের মতো স্থির খরচ এবং মুদিখানা, খাওয়া-দাওয়া, বিনোদন ইত্যাদি অন্যান্য খরচের তালিকা করুন। এরপর, প্রতিটি বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করুন এবং সে অনুযায়ী খরচ করুন। এটি আপনাকে আয়ের মধ্যে জীবনযাপন করতে এবং খরচ কমানোর উপায় খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

২. বিচক্ষণতার সাথে ঋণ নিন

ঋণ পাওয়া বর্তমানে সহজ হলেও, সামর্থ্যের বাইরে ঋণ আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। শিক্ষা, বাড়ি বা জরুরি প্রয়োজনের জন্যই কেবল ঋণ নিন। ইএমআই পরিশোধ আপনার মাসিক আয়ের সহনীয় শতাংশের বেশি না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। উচ্চ সুদের ঋণগুলি প্রথমে পরিশোধ করুন এবং অপ্রয়োজনীয় ঋণ এড়িয়ে চলুন।

৩. খরচ বিশ্লেষণ করুন

প্রতি মাসের শেষে আপনার খরচ পর্যালোচনা করুন। আকস্মিক অনলাইন কেনাকাটা বা ঘন ঘন বাইরে খাওয়ার ফলে সঞ্চয় কমছে কিনা তা খুঁজে বের করুন। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে সেই অর্থ সঞ্চয়ের দিকে নজর দিন।

৪. প্রথমে সঞ্চয়, পরে খরচ

বেতন পেলেই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয়ের জন্য আলাদা করে রাখুন। এটি স্বয়ংক্রিয় স্থানান্তর, RD বা SIP বিনিয়োগের মাধ্যমে করা যেতে পারে। সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার দিলে, অপ্রয়োজনীয় খরচ করার প্রবণতা কমে যাবে।

৫. বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খরচ কমান

অপ্রয়োজনীয় বাতি বন্ধ রাখা, জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার, এসি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মতো ছোট ছোট পদক্ষেপ বিদ্যুৎ বিল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, গণপরিবহন বা কারপুল ব্যবহার করে জ্বালানি খরচ বাঁচানো যেতে পারে।

প্রতি মাসে কত সঞ্চয় করা উচিত?

সাধারণত মাসিক আয়ের কমপক্ষে ২০% সঞ্চয় করা উচিত। এটি ৫০/৩০/২০ নিয়মের অংশ। তবে, আপনার আর্থিক লক্ষ্য, জীবনযাত্রা এবং দায়বদ্ধতা অনুসারে এই শতাংশ পরিবর্তিত হতে পারে। বৃহত্তর লক্ষ্য থাকলে (বাড়ি কেনা, অবসর) সঞ্চয়ের শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে।

আপনার বেতন থেকে অর্থ সঞ্চয় করার ১০ টি বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

  • স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় – বেতন পেলেই বিনিয়োগ বা সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয় স্থানান্তর করুন।
  • খরচের উপর নজর – ব্যাংকিং অ্যাপ বা হিসাব বই ব্যবহার করে মাসিক খরচ পর্যালোচনা করুন।
  • প্রধান খরচের খাতে কমানো – বাসস্থান, খাদ্য, ভ্রমণে খরচ কমান।
  • আকস্মিক কেনাকাটা এড়িয়ে চলুন – ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন।
  • প্রবণতার চাপ এড়িয়ে চলুন – ব্যয়বহুল ভ্রমণের পরিবর্তে বাড়িতে বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সাথে সময় কাটান।
  • দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য রাখুন – লক্ষ্য স্মরণে থাকলে খরচ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
  • 'ছোট পয়সার বয়াম' অভ্যাস – ছোট পয়সা, নোট একটি বয়ামে জমা করে পরে ব্যাংকে জমা দিন।
  • বাইরে খাওয়া সীমিত করুন – বাড়িতে রান্না করুন, টেকআউট কমান।
  • বিনোদনের জন্য কেনাকাটা বন্ধ করুন – প্রয়োজনেই কেবল কেনাকাটা করুন।
  • ক্রেডিট কার্ডের পুরষ্কার বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করুন – প্রয়োজনীয় খরচের জন্য ক্যাশব্যাক উপার্জন করুন।

শেষ কথা

আপনার বেতন কোথায় যাচ্ছে সে বিষয়ে সচেতন থাকুন। খরচ পর্যবেক্ষণ, বিল কমানো, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ এবং স্পষ্ট সঞ্চয় লক্ষ্য নির্ধারণ – এই সবকিছু প্রতি মাসে বেশি সঞ্চয় করতে সাহায্য করবে। ছোট ছোট পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে বড় সঞ্চয়ের কারণ হয়। নিয়মিত সঞ্চয় করাই সাফল্যের মূল মন্ত্র।