সংক্ষিপ্ত
- নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতাকে ফোন
- ফোন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
- প্রলয় পাল স্বীকার করেছেন তাঁর কাছে ফোন এসেছিল
- শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মমতা
প্রথম দফার ভোট শুরু হয়েছে। তারই মধ্যে ফাঁস হয়ে গেল একটি বিস্ফোরক অডিও ক্লিপ। যেখানে নন্দীগ্রামের স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রলয় পালের কাছে ভোটের জন্য সাহায্য চাইতে শোনা গেল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। যদিও অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তাঁকে ফোন করেছিলেন তা স্বীকার করেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রলয় পাল। নন্দীগ্রামের ভোট গ্রহণ আগামী ১ এপ্রিল।
ভোট বাংলার ব্যাটেল গ্রাউন্ড নন্দীগ্রাম। এই কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির হয়ে লড়াই করছেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনিতেই এই এলাকা অধিকারী পরিবারের গড় হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে শুভেন্দুর পরিচিতি ভূমিপুত্র হিসেবে। একটা সময় তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। কিন্তু তারপর ক্রমশই দূরত্ব বাড়তে থাকে। দল বদল করে শুভেন্দু এখন বিজেপিতে। শুধু শুভেন্দু অধিকারী নয়। নন্দীগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক নেতা কর্মী বর্তমানে গেরুয়া শিবিরের নাম লিখিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রলয় পাল। শুভেন্দু ঘনিষ্ট হিসেবেই তিনি পরিচিত তিনি। নন্দীগ্রামের লড়াই নেতাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে তাঁর নাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট যুদ্ধে তাঁকে সমর্থম করার আর্জি জানিয়ে ফোন করেছিলেন প্রলয় পালকে। মাত্র ১১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে মমতা প্রলয় পালকে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছেন। এক নজরে দেখে নিন তাঁদের মধ্যে কী কী কথা হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সত্যাগ্রহে সামিল হয়ে জেলে গিয়েছিলেন, ঢাকায় বললেন নরেন্দ্র মোদী ...
বাংলাদেশের যশোরেশ্বরী কালীবাড়ির ও মতুয়াধাম সফর, মোদীর অপেক্ষায় প্রহর গুণছে দুই তীর্থকেন্দ্র ...
অডিও ক্লিপের কথাবার্তাঃ
মমতাঃ তুমি ইয়ং ছেলে অনেক কাজ কর আমি জানি। তুমি ভোটে আমাদের একটু সাহায্য করে দাও না, দেখ কোনও অসুবিধে হবে না।
প্রলয়ঃ দেখুন আপনাকে দেখে কিন্তু আমি ও আমার পরিবার রাজনীতি করছি।
মমতাঃ জানি আমি
প্রলয়ঃ যেদিন রেজাল্ট ঘোষণা হয় সেদিনই বুঝেছিলেন আপনি ক্ষমতায় আসছে। পাঁচ জন ব্রাহ্মন ডেকে হোম যজ্ঞ করেছিলাম। খারাপ লাগে, যখন এত ত্যাগ করার পরেও প্রলয় পাল রেসিডেন্স সার্টিফিকেট পায় না-- এর থেকে লজ্জার আর কিছু থাকতে পারে না।
মমতাঃ এটা কে করেছিল? তুমি জানো তোমাদের লোকাল যে লিডার ছিল সে আমাদের নন্দীগ্রামে ঢুকতে দিত না। নন্দীগ্রামে যেতে দিত না। সারা মেদিনীপুরেই তাদের আধিপত্য ছিল। তুমিতো জান সবই ভাই।
প্রলয়ঃ আমি রেসিডেন্স সার্টিফিকেট পাব না, এটা হতে পারে?
মমতাঃ এটা যে করেছে সে অন্যায় করেছে।
প্রলয়ঃ আপনার মহাদেবের হাতে মার খেয়েছি আমি।
মমতাঃ আমি সবই জানি ভাই।আমি পরে সব শুনেছি। আমিতো আগে এত ডিটেলে খরব পেতাম না। এখন আমি গেছি, আমি সবার খবর রাখছি। তাই খবর পাচ্ছি।
প্রলয়ঃ দিদি আপনি এখন যাই মনে করুন না কেন আমি বিজেপিতে রয়েছি, যে দলটা করি, সেটার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করি না। আমি প্রাণ দিয়ে জীবন দিয়ে যে দলটা করি সেটা করি। আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে আঙুল তোলার মত কোনও ক্ষমতা আগেও ছিল নাএখন নেই। আগামী দিনেও হবে না।
মমতাঃ তুমি আমেকে এটা বল, যাদের জন্য করছ তারা তো কোনও দিন বিজেপি করেনি।
প্রলয়ঃ আমি মনে করি যতদিন দল ঠিক থাকবে তত দিন তাদের সঙ্গে থাকব। যখন অন্যায় হবে তখন কেন মানতে যাব?
মমতাঃ সেটাইতো আমি বলছি। আমি একটা কথা বলি, এখন যে তোমাদের ওখান থেকে লড়ছে সে কি সৎ?
প্রলয়ঃ দিদি ওই পরিবার, যখন আমি সিপিএমের কাছে অত্যাচারিত হতাম তখন ওই পরিবার পাশে ছিল। আমি এই জায়গা থেকে ওই পরিবারকে সমর্থন করি। শিশির বাবুর সঙ্গে বাবার দীর্ঘ ৪০ বছরের সম্পর্ক। যখন কেই অত্যাচারিত হত তখন কিন্তু পাঠিয়ে দিতাম। ওরাই তখন সাহায্য করত। আর কেউ ছিল না।
মমতাঃ সেদিনতো আমাদের সঙ্গে ছিল বলে ওরা করত। আমরা সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতাম।
প্রলয়ঃ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। দিদি আমাকে ক্ষমা করবেন। আপনি এত বড় নেতৃত্ব, সাধারণ কর্মীকে ফোন করেছেন। দিদি আমাকে ক্ষমা করবেন।
মমতাঃ তুমি ভেবে দেখ।
প্রলয়ঃ হু
মমতাঃ তুমি ভালো থেকে।
পরবর্তীকালে নন্দীগ্রামের প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনের কথা স্বীকার করেছেন প্রলয় পাল। তিনি বলেন মমতা চাইছেন তিনি যেন তৃণমূল কংগ্রেসের ফিরে যান। তিনি আরও বলেন অধিকারী পরিবারের প্রতি তিনি আগেও যেমন অনুগত ছিলেন, এখনও তিনি অনুগত থাকবেন। অধিকারী পরিবারকে ছেড়ে যাবেন না। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন মমতাকে তিতি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন কোনও দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। কিছুটা প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রলয় পাল জানিয়েছে নন্দীগ্রাম থেকে শুভেন্দুকে নবান্নে পাঠিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। আর তা পালন করবেন।