সংক্ষিপ্ত
কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের গতি ক্রমশ কমছে
তবে আসছে তৃতীয় তরঙ্গ
উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্টের উত্থান নিয়ে
তবে, স্বস্তির খবর শোনালো আইসিএমআর-এর গবেষণা
কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের গতি ক্রমশ কমছে। শনিবার দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ৫০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু, তাও চিন্তামুক্ত হওার উপায় নেই। উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্টের উত্থান এবং মহামারির সম্ভাব্য তৃতীয় তরঙ্গ নিয়ে। তবে, এই বিষয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর শোনালো ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ বা আইসিএমআর (ICMR) এবং যুক্তরাজ্যের ইম্পিরিয়াল কলেজ অফ লন্ডন-এর এর যৌথ মডেলিং গবেষণা। তাঁদের মডেল বলছে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের তীব্রতা যতটা ছিল, ততটাও ভয়ঙ্কর হবে না তৃতীয় তরঙ্গ।
ভারতের করোনার মহামারির প্রথম তরঙ্গটি আঘাত করেছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের শেষে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তা সংক্রমণের শিখরে পৌঁছেছিল। সেই তুলনায় অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ছিল দ্বিতীয় তরঙ্গটি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে মার্চ-এপ্রিলে তা চুড়ান্ত দাপট দেখিয়েছে। দ্বিতীয় তরঙ্গের মূল চালিকাশক্তি ছিল সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের আলফা ভেরিয়েন্ট অর্থাৎ B.1.1.7 এবং ডেল্টা ভেরিয়েন্ট B.1.617.2-এর মতো অতি সংক্রামক রূপগুলি।
আইসিএমআর এবং ইম্পিরিয়াল কলেজের যৌথ গবেষণা বলছে, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমমী বেশ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যেই উত্থান ঘটেছে করোনার তৃতীয় তরঙ্গের। তবে, প্রথম দুটি তরঙ্গেই ভারতে যে পরিমাণে সংক্রমণ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে করে দেশে তৃতীয় তরঙ্গ এলেও, তা দ্বিতীয় তরঙ্গের মতো তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিকেল রিসার্চ-এ প্রকাশিত নিবন্ধে গবেষকরা দাবি করেছেন, ইতিমধ্য়েই আগের সংক্রমণ এবং টিকাকরণের ফলে ভারতবাসীর মধ্যে, কোভিডের বিরুদ্ধে যে অনাক্রম্যতা তৈরি হয়েছে তাকে লঙ্ঘন করে তীব্র তৃতীয় তরঙ্গ আসতে গেলে একেবারে চরম কোনও পরিস্থিতি তৈরি হতে হবে।
কী রকম চরম পরিস্থিতি? গবেষকরা জানিয়েছেন, করোনা তৃতীয় তরঙ্গকে ধ্বংসাত্মক হতে হলে, আগে অনাক্রম্যতা লাভ করা ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ শতাংশকে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে হারাতে হবে। অথবা, ভাইরাসের নতুন এমন একটি রূপ বা ভেরিয়েন্টের উত্তান হতে হবে যার সংক্রমণ হার হবে ৪.৫ বা তার বেশি। অর্থাৎ, প্রত্যেক সংক্রামিত ব্যক্তির থেকে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে হবে। শুধু তাই নয়, এই ভেরিয়েন্টের উত্থান ঘটতে হবে দ্বিতীয় তরঙ্গ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। এমনটা বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতে সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা।
তবে, ভারতে তৃতীয় তরঙ্গের উত্থান, টিকাদান প্রক্রিয়ার ব্যপ্তি আরও বাড়িয়ে, যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস করা যেতে পারে বলেই জানিয়েছে এই মডেলিং গবেষণা। গবেষকরা জানিয়েছেন, ভারতে দ্বিতীয় তরঙ্গ এখন প্রায় শেষের দিকে। এই সময়ে এমনভাবে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চালাতে হবে যাতে আগামী ৩ মাসের মধ্যে, দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪০ শতাংশকে টিকার দুটি ডোজই দেওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে তৃতীয় তরঙ্গের প্রভাব ভারততে সেভাবে পড়বেই না। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একজায়গায় বেশি মানুষের ভিড় না করা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাকার মতো বিষয়গুলিও তৃতীয় তরঙ্গের প্রভাব কমাতে বড় ভূমিকা নিতে পারে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় তরঙ্গের শেষে আনলক কীভাবে কার্যকর করা হচ্ছে, তার উপরও অনেকটাই নির্ভর করছে তৃতীয় তরঙ্গের তীব্রতা।