সংক্ষিপ্ত
- করোনা ভ্যাকসিনের সাপ্লাই চেন নিয়ে বড় পদক্ষেপ
- করোনা প্রতিষেধক দ্রুত পৌঁছে দিতে বিশেষ পরিকল্পনা
- এই পরিকল্পা নিয়েছে ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রক
- এই কাজের জন্য সুইগি ও জোমাটোকেও কাজে লাগানোর ভাবনা
নভেম্বরের মধ্যেই ভারতের বাজারে প্রবেশ ঘটতে পারে বেশ কিছু করোনা ভ্যাকসিনের। এরমধ্যে বেশকিছু ভ্যাকসিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হতে পারে। আরও কিছু ভ্যাকসিন ভারতের বাজারে সহজলভ্য হতে পারে দেশীয় কিছু সংস্থার হাত ধরে। এখনও পর্যন্ত যদিও এই সব ভ্যাকসিন-এর সহজলভ্যতা নিয়ে ছবিটা পরিষ্কার নয়। তবে, সরকারের কিছু উদ্যোগে এই জল্পনা তৈরি হয়েছে। যেখানে সরকার নভেম্বরের মধ্যে ভারতের ঘরে ঘরে বেশকিছু ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া নিয়ে এক নতুন ধরনের বিলি-চ্যানেল খুলতে চাইছে। যার একটা খসড়াও ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- মহামারি কেড়ে নিয়েছে হাসি, নেটিজেনরা কি পারবে 'বাবা কা ধাবা'র দম্পতির পাশে দাঁড়াতে
এই খসড়ায় ভারত সরকার একটি কোল্ড-চেন স্টোরেজ ফেসিলিটি-র পরিকল্পনার কথা বলেছে। এই কোল্ড-চেন স্টোরেজ ফেসিলিটি-র জন্য খুব দ্রুত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষের কাছে করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব বলেও এই খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- পরীক্ষা করার আগে কী করে বুঝবেন আপনি করোনা আক্রান্ত, তারই হদিশ দিলেন বিশেষজ্ঞরা
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনা-কে কার্যকর করতে বেশকিছু বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথাও বলেছে বলে দাবি করা হয়েছে পিটিআই-এর এই রিপোর্টে। এই বেসরকারি সংস্থার তালিকায় সুইগি এবং জোমাটো-র মতো ফুড-ডেলিভারি সংস্থারও নাম রয়েছে। সুইগি ও জোমাটো সাধারণ রেস্তোরাঁ থেকে বাড়ি-বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়। অতিমারি এবং লকডাউনে এই দুই সংস্থাই রেস্তোরাঁর খাবারের সঙ্গে সঙ্গে গ্রোসারি এবং বিভিন্ন কাঁচা সবজি থেকে শুরু করে মাংস-মাছ, ডিম পর্যন্ত লোকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। ভারত সরকার সুইগি ও জোমাটোর এই ব্যাবসায়িক পরিধির বৃত্তের বাড়ন্তটাকে করোনা ভ্যাকসিন ডেলিভারি এবং কোল্ড- চেন স্টোরেজের ভাবনায় কাজে লাগাতে চাইছে। এমনকী বেশকিছু স্টার্টআপস-এর সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে।
এই পরিকল্পনাকে এতটাই দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যে পরের সপ্তাহ থেকে এর একটা খসড়া প্রকল্পকে ট্রায়াল রান হিসাবেও শুরু করা হতে পারে বলে খবর।
করোনা ভ্যাকসিন সরবরাহে এমন এক উষ্ণতা লাগবে যেখানে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৮০ ডিগ্রির মধ্যে যাতে থাকে। যদিও, এইসব ভ্যাকসিন ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও রাখা যাবে। এখন পর্যন্ত যা খবর তাতে অধিকাংশ ভ্যাকসিন তরল পদার্থের আকারে থাকবে। খুব কম সংখ্যক ভ্যাকসিনের আকার ঘন-বরফের আকারে থাকবে। এইসব ভ্যাকসিন হয় ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন বা রাউট অথবা দুটো ডোজের মাধ্যমে দিতে হবে। বেশিরভাগ ভ্যাকসিন মাল্টি-ডোজ ভায়ালে মিলবে। যার আবার বিভিন্ন মাপ থাকছে- কোনওটা ২.৫, কোনওটা ১০ অথবা ২০ এবং ৫০ ডোজ প্রতি ভায়াল।
ভারত সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ছয় মাসের মধ্যে অন্তত ১৮ শতাংশ নাগরিকের কাছে করোনা ভ্যাকসিন যাতে পৌঁছে দেওয়া যায়। যার জন্য ২ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত এবং মাইনাস ১৫ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রার কোল্ড-চেন স্টোরেজ তৈরির কথা বলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক এই কোল্ড-চেন স্টোরেজ ভাবনাকে কার্যকর করার পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল বলে খবর। এখন তারা অতিরিক্ত কোল্ড-চেন স্টোরেজের ভাবনাকে কার্যকর করার পথে এগোনোর উদ্যোগ নিয়েছে।
করোনা ভ্যাকসিন-কে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে ২ থেকে ৩ মাসের জন্য রাজ্যে রাজ্যে এবং আঞ্চলিক স্তরে একাধিক বৃহদাকার কোল্ড-চেন স্টোরেজ লাগবে। করোনা ভ্যাকসিন সরকারের হাতে চলে এলে যাতে বিপুলভাবে মাস-ভ্য়াকসিন-এর কাজ শুরু করা যায় তার জন্য পরিকাঠামো তৈরি রাখাটা প্রচণ্ড-ই জরুরি বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তাই যুদ্ধকালীন তৎপরতা কোল্ড-চেন স্টোরেজ ভাবনায় বেসরকারি সংস্থাকেও অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা বলে সূত্রের খবর।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের একটা ম্যাপ তৈরি হয়েছে, যেখানে যেখানে এই কোল্ড-চেন স্টোরেজ-এর ভাবনাকে কাজে লাগানো হবে। এই সব রাজ্যের তালিকায় রয়েছে- পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাট, কেরল, তেলেঙ্গানা, দিল্লি, অসম, ঝাড়খণ্ড, পঞ্জাব এবং ওড়িশা।
তালুক ধরে যে কোল্ড-চেন স্টোরেজ-এর ম্যাপ- তাও তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানিয়েছিলেন কোভিড-১৯-এর অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ভারত পেতে চলেছে এবং যার পুরোটাই ব্যবহার করা হবে। মনে করা হচ্ছে এই সংখ্যক ভ্যাকসিন দিয়ে অন্তত ২০ থেকে ২৫ কোটি মানুষকে ২০২১ সালের জুলাই মাসের মধ্যে প্রতিষেধক দেওয়া যাবে। এর জন্য ১৫ অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যগুলিকে একটি বৃহৎ আকারের স্টোরেজ এবং প্রতিষেধক সরবরাহের পরিকল্পনাকে তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
যদিও, করোনা প্রতিষেধকের ইমুনাইজেশন প্রকল্পে সরকার এখনও তার নিজস্ব ইউনিভার্সাল ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম বা ইউআইপি মেকানিজমকে অন্যতম ভরসা বলে মনে করছে। এই মুহূর্তে ইউআইপি-তে ২৭,০০০ সক্রিয় কোল্ড চেন পয়েন্টস রয়েছে। যার ৩ শতাংশ রয়েছে জেলা স্তরে। বাকিগুলি রয়েছে ব্লক বা তালুক ভিত্তিতে। কেন্দ্রীয় সরকারের ইউআইপি নিয়ে যে ২০১৮-২২ সালের মাল্টি-ইয়ার প্রকল্প রয়েছে, তাতে এই তথ্যের উল্লেখও রয়েছে। এমনকী এই প্রকল্পের সঙ্গে ৭৬,০০০ কোল্ড-চেন ইকুইপমেন্ট, ২.৫ মিলিয়ন স্বাস্থ্যকর্মী এবং ৫৫,০০০ কোল্ড চেন কর্মী ইতিমধ্যেই যুক্ত রয়েছেন।