সংক্ষিপ্ত

ওমিক্রন (Omicron) সবাইকে মেরে ফেলবে, লাশ গুণতে চাই না - লেখা ১০ পাতার নোটে। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে হত্যা করে পলাতক কানপুরের (Kanpur) ডাক্তার।  
 

গত দুই বছর ধরে বিশ্বজুড়ে চলছে করোনাভাইরাস মহামারি (Coronavirus Pandemic)। চতুর্দিকে মৃত্যুর মিছিল, আর সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। যা, ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলেছে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের (Mental Health) উপর। বিশেষ করে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে যারা কাজ করে চলেছেন, তারা বলতে গেলে একটু শ্বাস নেওয়ার অবসরও পাননি। করোনাভাইরাসের টিকা (Coronavirus Vaccine) আসার পর, ধীরে ধীরে এই মহামারির অবসান ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু, ওমিক্রনের (Omicron) নতুন রূপ ধরে মহামারি ফের আগের জায়গাতেই ফিরিয়ে দিতে চলেছে মানব সভ্যতাকে। আর এই চাপেই এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটিয়ে ফেললেন উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) কানপুরের (Kanpur) এক ডাক্তার। ওমিক্রনের আতঙ্ক সহ্য করতে না পেরে, তাঁর পুরো পরিবারকে হত্যা করেছেন তিনি, এমনটাই অভিযোগ। 

বছর ৫৫-র ওই ডাক্তারের নাম ডাক্তার সুশীল কুমার সিং। মান্ধানার (Mandhana) এক বেসরকারি মেডিকাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর ভাই, ডাক্তার সুনীল কুমার সিং, কানপুর দেহাত (Kanpur Dehat) জেলার এক সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আছেন। শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ করে ডাক্তার সুশীল কুমার বলেন, পুলিশকে খবর দিতে। কারণ, অবসাদের বশে তিনি তাঁর স্ত্রী চন্দ্রপ্রভা (৪৮), ছেলে শিখর (২১) এবং মেয়ে খুশি (১৬)'কে  হত্যা করেছেন। 

তৎক্ষণাৎ কল্যানপুর থানায় খবর দিয়ে দাদার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন ডাক্তার সুনীল কুমার। কানপুরের ইন্দিরানগর এলাকার এক অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে থাকলেন ডাক্তার সুশীল কুমার। সুনীল ও পুলিশ সেখানে পৌঁছে দেখেছিল দরদা বাইরে থেকে লক করা। তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাঁরা তিনটি ঘরে মা ও দুই ছেলে-মেয়ের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। তবে, তার আগেই সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত ডাক্তার। পুলিশ দেহ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। তারা জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের পর তাদের অনুমান, স্ত্রীকে গলা টিপে, এবং ছেলে-মেয়েকে মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মেরে হত্যা করেছেন ওই ডাক্তার। দেহগুলির পাশেই একটি রক্তমাখা হাতুড়িও ছিল।

তবে, সবথেকে কৌতূহলের ওই বাড়ি থেকে একটি ১০ পাতার নোট এবং ডাক্তার সুশীল সিং-এর একটি ডায়েরিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, ওই ১০ পাতার চিঠিতে হিন্দিতে লেখা আছে, 'আর কোনও কোভিড চাই না। এই কোভিড এখন সবাইকে মেরে ফেলবে। এখন আর লাশ গুণতে চাই না। আমার অসাবধানতার কারণেই কেরিয়ারের এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি,  যেখান থেকে বের হওয়া অসম্ভব। আমার কোন ভবিষ্যৎ নেই। আমি সম্পূর্ণ বিচক্ষণতার সঙ্গে আমার পরিবারকে শেষ করছি, নিজেকে শেষ করছি। এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়।'

ডায়েরিতে ডাক্তার সুশীল সিং আবার লিখেছেন, তিনি একটি দুরারোগ্য চোখের রোগে ভুগছেন। সেই কারণেই তাঁকে এমন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। শিক্ষকতা তাঁর পেশা। চোখ না থাকলে তা করতে পারবেন না। এই কাজের জন্য তাঁর আত্মা তাঁকে ক্ষমা করবে না। তবে, এ ছাড়া তাঁর আর কোনও উপায় নেই। তিনি তাঁর পরিবারকে কষ্টে রেখে যেতে পারবেন না। সবাইকে মুক্তি দেবেন। নিমেষেই সব ঝামেলা দূর হয়ে যাবে। আর কাউকে কষ্টে দেখতে হবে না। 

তাঁর ভাই, ডাক্তার সুনীল সিং জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরেই তিনি অবসাদে ভুগছিলেন। বিশেষ করে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত কিছু বড় ঘটনা ঘটলেই তাঁর অবসাদের মাত্রা বেড়ে যেত। ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের উত্থানের খবরেও তাইই হয়েছিল। এমনকী, মাঝে মাঝেই বলতেন, তাঁর স্ত্রীকে মেরে ফেলা উচিত। কিন্তু, ডা. সুশীলের চোখের অসুখ সম্পর্কে কিছু জানাননি সুনীল সিং। এই বিষয়ে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। খোঁজ চলছে পলাতক ডাক্তার সুশীল সিং-এর। 

ওমিক্রন (Omicron) সবাইকে মেরে ফেলবে, লাশ গুণতে চাই না - লেখা ১০ পাতার নোটে। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে হত্যা করে পলাতক কানপুরের (Kanpur) ডাক্তার।