সংক্ষিপ্ত
এর আগেও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে চিন, কিন্তু সরাসরি বাধা দেয়নি। কিন্তু, এবার সরাসরি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজে বাধ সাধল বেজিং।
এতদিন শুধুই বিবৃতি দিত চিন। এবার করোনাভাইরাসের উত্স সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরও তদন্তের আহ্বানের সরাসরি বিরোধিতা করল বেজিং। বৃহস্পতিবার, চিনের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কোনও প্রাণীর থেকে সম্ভবতঃ একটি মধ্যবর্তী হোস্টের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছিল নভেল করোনাভাইরাস। সাফ জানিয়ে দিল, চিনের গবেষণাগার থেকে ভাইরাসটি ফাঁস হয়েছিল, এই তত্ত্বের নিরিখে কোনো তদন্ত করতে দিতে তারা রাজি নয়।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে করোনা উৎস সন্ধানে একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল। তারপর সংস্থাটি জানিয়েছিল, বাদুড় অন্য কোনও প্রাণীর মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা। গবেষণাগার থেকে ভাইরাসটি ফাঁস হওয়া 'একেবারেই অসম্ভব'। তবে চলতি বছরের মার্চ মাসে হু-এর ডিরেক্টর টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইসুস বলেছিলেন, তাদের প্রথম তদন্তে ল্যাব দুর্ঘটনার সম্ভাবনা পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্লেষণ করা হয়নি। বিজ্ঞানীদের অন্তত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে জৈবিক নমুনা সহ সম্পূর্ণ তথ্যভান্ডার লাগবে। এর জন্য তিনি আরও সংস্থান খরচ করতে ইচ্ছুক ছিলেন।
হু-এর সঙ্গে আগের গবেষণায় কাজ করা চিনা বিশেষজ্ঞ দলের নেতা মহামারিবিদ লিয়াং ওয়ানিয়ান অবশ্য এদিন সাফ জানিয়েছেন, 'গবেষণাগার থেকে ফাঁস হওয়ার তদন্তে আরও সংস্থান খরচের কোনও দরকার নেই।' চিনা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের উপমন্ত্রী জেং ইয়িকসিন বলেছেন, '(করোনার) উত্স গবেষণার দ্বিতীয় ধাপের পরিকল্পনার মধ্যে এমন ভাষা রয়েছে যা বিজ্ঞান বা সাধারণ জ্ঞানকে সম্মান করে না। আমরা এই জাতীয় পরিকল্পনা অনুসরণ করব না।' তাঁর দাবি, নভেল করোনাভাইরাসের উদ্ভব উদ্ঘাটন করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কিন্তু এই গুরুতর বিষয়ের গবেষণা বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। হু-এর পরবর্তী পর্যায়ের গবেষণার 'রাজনৈতিক অবস্থান ও অহংকার প্রদর্শন'এর জন্য, এমনটাই তাঁদের দাবি।
আরও পড়ুন - অকাট্ট প্রমাণ দিলেন চিনা বাদুড় মানবী, উহানের ল্যাব থেকে ছড়ায়নি নভেল করোনাভাইরাস
আরও পড়ুন - ফের করোনা আক্রান্ত ভারতের প্রথম কোভিড রোগী - প্রথমবার জিতেছিলেন, এবার কী হবে
আরও পড়ুন - ফের বিদ্যুত গতিতে ছড়াচ্ছে করোনা - 'হারতে বসেছে গোটা বিশ্ব', সতর্ক করল WHO
বস্তুত, ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে, চিনা গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস লিক করার তত্ত্ব সামনে এলেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। তখন বাইডেন শিবির একে ষড়যন্ত্রে তত্ত্ব হিসাবে খারিজ করে দিয়েছিল। পরে, চিনের পক্ষ থেকে করোনা সংক্রমণের একেবারে প্রাথমিক সময়ের তথ্য দিতে অনীহা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। কয়েকজন ভাইরাসবিদ আবার দাবি করেন, ভাইরাসগুলিকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছিল উহানের গবেষণাগারে। তার থেকেই এই মহামারির উদ্ভব।
গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছিলেন, কোনও প্রাণীর থেকে মানুষের শরীরে এসেছে না গবেষণাগারে দুর্ঘটনার কারণে নভেল করোনাভাইরাসের উদ্ভব ঘটেছে, তাই নিয়ে বিভক্ত মার্কিন গোয়েন্দারা। অগাস্টের শেষেই এই বিষয়ে তিনি চুড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কাজেই বিষয়টি এখন চিন-মার্কিন ঠান্ডাযুদ্ধের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিন বরাবরই, তাদেপর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্তে বাধা দেওয়ার মতো এত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ, তারা এর আগে নেয়নি।