সংক্ষিপ্ত


বৃহস্পতিবার, দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa) করোনাভাইরাসের এক নতুন রূপভেদ (New Covid Variant) আবিষ্কারের কথা জানালো। বি.১.১.৫২৯ ভেরিয়েন্ট (B.1.1.529 Variant) বা বতসোয়ানা ভেরিয়েন্টের (Botswana variant) সামনে করোনাভাইরাস টিকাও (Coronavirus Vaccine) অকার্যকর হতে পারে। 

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারির তৃতীয় তরঙ্গের (Covid-19 Third Wave) আশঙ্কার মধ্যেই আরও এক খারাপ খবর এল। বৃহস্পতিবার, দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস বা এনআইসিডি (NICD) জানিয়েছে,  ৩০ টিরও বেশি স্পাইক অভিযোজন-সহ করোনাভাইরাসের এক নতুন রূপভেদ (New Covid Variant) মিলেছে। এখনও পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক করোনা রোগীর দেহেই এই নতুন ভেরিয়েন্ট দেখা গেলেও, করোনার এই নয়া রূপকে নিয়ে দারুণ উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা মনে করছেন করোনাভাইরাসের যে টিকাগুলি (Coronavirus Vaccine) দেওয়া হচ্ছে, সেগুলি এই নয়া ভেরিয়েন্টকে ঠেকাতে পারবে না। 

করোনার এই নয়া রূপভেদটি হল বি.১.১.৫২৯ ভেরিয়েন্ট (B.1.1.529 Variant) বা বতসোয়ানা ভেরিয়েন্ট (Botswana variant)।   প্রথমে এই ভেরিয়েন্টের খোঁজ বতসোয়ানাতেই (Botswana) পাওয়া গিয়েছিল বলে, এই নামকরণ। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকা এবং হংকং-এও (Hong Kong) এই ভেরিয়েন্টের দেখা মিলেছে। এনআইসিডি এদিন জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট ২২ টি ক্ষেত্রে বতসোয়ানা ভেরিয়েন্ট রেকর্ড করা হয়েছে। কাজেই তাদের কাছে করোনার এই নয়া রূপটি নিয়ে তথ্য একেবারেই সীমিত। তা সত্ত্বেও করোনার এই গুরুতর বিকল্প রূপটি এবং তার সম্ভাব্য প্রভাবগুলি সম্পর্কে জানার জন্য তাদের বিজ্ঞানীরা অতিরিক্ত সময় দিয়ে কাজ করে চলেছেন। 

এই নতুন বিকল্পটির কথা অবশ্য প্রথম জানা গিয়েছিল ২৩ নভেম্বর, মঙ্গলবারই। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের (Imperial College, London) ভাইরোলজিস্ট ড. টম পিকক, সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনার এই নয়া রূপটির বিশদ বিবরণ জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, এই কোভিড-১৯ ভাইরাসের এই রূপটিতে অবিশ্বাস্যরকম উচ্চ পরিমাণে স্পাইক অভিযোজন (Spike Mutation) ঘটেছে। যা, নতুন করে উদ্বেগের কারণ তৈরি করেছে। কারণ, অধিকাংশ পরিচিত মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলিই (Monoclonal Antibody) এই স্পাইক প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করার কাজই করে থাকে। সেটা করতে না পারলে, ব্যর্থ হবে সব করোনা টিকাই। টুইটারে ড. টম পিকক তাই বলেছিলেন, এই 'ভয়াবহ স্পাইক প্রোফাইল'এর জন্য, করোনার এই রূপভেদটিকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। দুদিম পর, একই কথা জানালো দক্ষিণ আফ্রিকাও। 

নতুন ভেরিয়েন্টটিতে, করোনার আগে পাওয়া অন্যান্য রূপান্তরের বেশ কিছু মিউটেশন বা অভিযোজন একিভূত হয়েছে। যেমন, আলফা, মিউ এবং কিছু গামা ভেরিয়েন্টে পাওয়া পি৬৮১এইচ মিউটেশন (P681H Mutation) রয়েছে এই ভেরিয়েন্টেও। একইভাবে আগের অনেক ভেরিয়েন্টেই পাওয়া - এন৬৭৯কে মিউটেশন (N679K Mutation), এন৫০১ওয়াই মিউটেশন (N501Y Mutation), ডি৬১৪জি মিউটেশন (D614G Mutation) রয়েছে বাতসোয়ানা ভেরিয়েন্টে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই প্রত্যেকটি মিউটেশন বা অভিযোজনই করোনার বিকল্প রূপগুলিকে আরও সংক্রমণযোগ্য করে তোলে। ভাইরাসটিকে মানুষের এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২ বা এসিই২ রিসেপ্টরগুলিতে (ACE2 Receptor) সহজেই ভাইরাসটি আটকে যেতে পারে। 

বর্তমানে, করোনাভাইরাসের মাত্র চারটি রূপভেদকে, উদ্বেগজনক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আলফা (B.1.1.7 বা ইউকে ভেরিয়েন্ট ), বিটা (B.1.351 বা দক্ষিণ আফ্রিকা ভেরিয়েন্ট), গামা (P.1 বা ব্রাজিল ভেরিয়েন্ট) এবং ডেল্টা (B.1.617.2)। এর মধ্যে করোনার মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গে ভারতকে ছাড়খাড় করে দিয়েছিল ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। এবার এই চারটির সঙ্গে নতুন পাওয়া বাতসোয়ানা ভেরিয়েন্টও যুক্ত হতে পারে। সবথেকে বড় কথা, টিকাকরণ শুরুর পর, যে মহামারি-মুক্তির আশা দেখা গিয়েছিল, তাতে আবার নতুন রূপান্তরের মেঘ জমল।