সংক্ষিপ্ত

ওমিক্রন (Omicron) এবং ডেল্টা (Delta) ভেরিয়েন্টের দ্বৈত প্রভাবে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে বলে, সতর্ক করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। হু প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস (Tedros Adhanom Ghebreyesus) জানিয়েছেন আর তরঙ্গ নয়, এবার সুনামি আসছে। 
 

ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা (Health Systems) তাদের ক্ষমতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। এর উপর ওমিক্রন (Omicron) এবং ডেল্টা (Delta) ভেরিয়েন্টের কোভিড-১৯ (COVID-19) কেসের 'সুনামি'র চাপে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে বলে, বুধবার, সতর্ক করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। হু বলেছে, বর্তমানে ডেল্টা এবং ওমিক্রন রূপান্তর বিশ্বে 'দ্বৈত হুমকি' সৃষ্টি করেছে। এর ফলে, বিশ্বজুড়ে নতুন করোনা-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছতে চলেছে এবং হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা - দুইই বাড়ছে।

হু-এর পরিসংখ্যান বলছে, গত এক সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন কেসের সংখ্যা ১১ শতাংশ বেড়েছে। হু-এর প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস (Tedros Adhanom Ghebreyesus) এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ডেল্টা ভেরিয়েন্টের উপস্থিতিতেই ওমিক্রনের মতো আরও বেশি সংক্রমণযোগ্য একটি ভেরিয়েন্ট সঞ্চালিত হচ্ছে বলে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এর ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সুনামি (Tsunami) আসতে চলেছে। 

আরও পড়ুন - ফের বিদ্যুত গতিতে ছড়াচ্ছে করোনা - 'হারতে বসেছে গোটা বিশ্ব', সতর্ক করল WHO

আরও পড়ুন - পরবর্তী অতিমারির জন্য প্রস্তুত হোক বিশ্ব, করোনার সেকেন্ড ওয়েভের মাঝেই নতুন হুঁশিয়ারি 'হু'-র

আরও পড়ুন - বিশ্ব থেকে কবে উধাও হবে করোনার প্রকোপ, এবার সময় জানিয়ে দিল 'হু'

তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্য কর্মীরা গত দুই বছর ধরে মহামারির (Coronavirus Pandemic) মোকাবিলা করতে করতে এখন অবসন্ন হয়ে পড়েছেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে। এই অবস্থায় কোভিড সুনামি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর অকল্পনীয় চাপ সৃষ্টি করতে চলেছে। হু-এর প্রধানের মতে, শুধুমাত্র নতুন করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্য়া বাড়ছে বলেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ বাড়ছে তা নয়, কোভিড-১৯'এ বিপুল সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এটাও অন্যতম কারণ। তবে এই অবস্থাটা করোনাভাইরাস টিকা (Coronavirus Vaccine) বন্টনে অসাম্যের কারণেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস।  

২০২১ সালের শুরুতে কোভিড-১৯-এর মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে টিকা আবিষ্কার হওয়ার কারণে, হু অনুমান করেছিল, ২০২১-এর শেষে মহামারীর তীব্র পর্যায়ের অবসান ঘটবে। তবে, তারা এটাও জানিয়েছিল, মহামারির বিদায় পুরোপুরি নির্ভর করছে বৃহত্তর ভ্যাকসিন ইক্যুইটি (Vaccine Equity),অর্থাৎ টিকা বন্টনের ক্ষেত্রে সাম্যের উপর। তারা চেয়েছিল, এই বছরের শেষে প্রতিটি দেশের অন্তত ৪০ শতাংশ জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া হোক এবং ২০২২ সালের মাঝামাঝি সব দেশের ৭০ শতাংশ জনগণকে টিকা দেওয়া হোক। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। ধনী দেশগুলিতে প্রায় ১০০ শতাংশ টিকাদানের পর, এখন আবার বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করা হয়েছে। অথচ, টেড্রোস এদিন জানিয়েছে, হু-এর সদস্য ১৯৪টি রাষ্ট্রের মধ্যে ৯২টি দেশেই ৪০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়নি। 

হু-এর প্রধান জানিয়েছেন, বছরের শুরুতে স্বল্প আয়ের দেশগুলিতে সীমিত টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যে ভ্যাকসিনগুলি সেইসব দেশে এসেছে, সেগুলি প্রায় মেয়াদ শেষ হওয়ার কাছাকাছি সময়ের টিকা ছিল। অনেক ক্ষেত্রে আবার টিকা এসেছে, সিরিঞ্জ আসেনি, তাই টিকা নষ্ট হয়েছে। এই ঘটনা সকল দেশের 'নৈতিক লজ্জা' বলে দাবি করেছেন টেড্রোস। এতে করে শুধু বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে তাই নয়, যেখানে টিকাকরণ কম হয়েছে, সেইসব অঞ্চলে ভাইরাস নিজের রূপ পরিবর্তন করে আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই অবস্থায় আগামী বছর, সমস্ত দেশের সরকার ও শিল্পনেতাদের ভ্যাকসিন ইক্যুইটি বা টিকাদানের ক্ষেত্রে সমতা আনার আহ্বান জানিয়েছেন।