সংক্ষিপ্ত
স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ উপলক্ষ্যে পালিত হচ্ছে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ ( Azadi Ka Amrit Mahotsav)। কুর্নিশ জানানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতিদের। স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি (75 years Independence) উপলক্ষ্যে জেনে নিন ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ (World Cup) জয়ী অধিনায়ক কপিল দেবের (Kapil Dev) জীবন সংগ্রামের কাহিনি।
ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ উপলক্ষ্যে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ ( Azadi Ka Amrit Mahotsav)-এর সূচনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২২ সালেল ১৫ অগাস্ট ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ সপ্তাহ আগে গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’–এর সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে শুরু করে তারপর ভারত মাতাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা গৌরবান্বিত করেছেন তাদের সম্মান ও কুর্নিশ জানাতেই এই উদ্যোগ। ক্রীড়া ক্ষেত্রেও অসংখ্য কৃতি ব্য়ক্তিত্ব রয়েছে যারা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। ২২ গজে ভারতীয় ক্রিকেটে যুগ পরিবর্তন হয়েছিল কপিল দেবের (Kapil Dev) হাত ধরে। ১৯৮৩ বিশ্বকাপ (1983 World Cup) জয় শুধু নিছক একটা প্রতিযোগিতা জয় নয়, ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের (Indian Cricket) স্বাধীনতা। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে বিশ্ব ক্রিকেটকে (World Cricket) শাসনের ভিত রচনা হয়েছিল কপিল দেবের হাত ধরে। স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে জেনে নিন কপিল দেবের জীবন সংগ্রামের কাহিনি।
কপিল দেবের জন্ম ৬ই জানুয়ারী ১৯৫৯ সালে চণ্ডীগড়, পাঞ্জাবে। বাবা রামলাল নিখঞ্জ, মা রাজ কুমারী। ভারত ভাগের সময় তার বাবা-মা রাওয়ালপিন্ডি, পাঞ্জাব থেকে চলে এসেছিলেন। কপিল দেবের বাবার বাড়ি নির্মাণ ও কাঠের ব্যবসা ছিল। তিনি ডি.এ.ভি স্বুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৭১ সালে দেশপ্রেম আজাদের হাত ধরে ক্রিকেটে হাতে খড়ি হয় কপিলের। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে হরিয়ানার হয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় কপিল দেবের। অভিষেকেই ছয় উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। পাঞ্জাবকে ৬৩ রানে আউট করেছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম মরসুমে ৩০ ম্য়াচে ১২১ নিয়ে সকলের নজর কেড়েছিলেন কপিল। ১৭ বছর ধরে হরিয়ানার হয়ে খেলেছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দলের স্থায়ী সদস্য ছিলেন।কপিল দেব ১৬ অক্টোবর, ১৯৭৮ সালে ফয়সালাবাদে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। তার কেরিয়ারের প্রথম ম্যাচ ড্র হয়েছিল, কপিল একটি উইকেট পেয়েছিলেন। তার প্রথম শিকার ছিল সাদিক মহম্মদ। কপিল দেব সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হয়েছিলেন যিনি অলরাউন্জার হিসেবে সবথেকে দ্রুত ১০০ উইকেট নিয়েছিলেন ও ব্য়াট হাতে হাজার রান করেছিলেন।
১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম বিশ্ব জয়ে অধিনায়কোচিত পারফরম্যান্স করেছিলেন কপিল। ৮ ম্যাচে ব্য়াট হাতে করেছিলেন ৩০৩ রান, বল হাতে নিয়েছিলেন ১২ টি উইকেট, ধরেছিলেন ৭টি ক্যাচ। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে কপিল দেবের ১৭৫ রানের ইনিংস ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। ফাইনালে কার্যত অপরাজেয় ওয়েস্টইন্ডিজকে হারিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছিল কপিলের টিম ইন্ডিয়া। ১৯৯৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে কপিল দেব হারশান তিলকরত্নের উইকেট নিয়ে তৎকালীন হেডলির সর্বোত্ত ৪৩১ টেস্ট উইকেটের রেকর্ড ভেঙেছিলেন। ৪৩৪ উইকেট নিয়ে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। ২০০০ সালে কপিলের রেকর্ড টপকে গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশ। একদিনের ক্রিকেটেও দীর্ঘ বছর সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন কপিল দেব। পাকিস্তানের ওয়াসিম আক্রম সেই রেকর্ড না ভাঙা পর্যন্ত ২৫৩ উইকেট নিয়ে শীর্ষে ছিলেন কপিল। নিজের কেরিয়ারের ১৮৪টি টেস্ট ইনিংসে কখনও রান আউট হননি কপিল দেব। ১৬ বছরের ব্যবধানে ১৩১টি টেস্ট খেলা কপিল দেব কখনও চোট বা ফিটনেসের কারণে একটি টেস্ট মিস করেননি।
ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম করে রোমি ভাটিয়াকে বিয়ে করেছিলেন কপিল দেব। প্রথমেএক বন্ধু সেখান থেকে রোমির সঙ্গে প্রেম হয়। ১৯৮০ সালে বিয়ে করেন কপিল দেব ও রোমি। ১৯৯৬ সালে তাদেরএকটি কন্যা সন্তান হয়। অবসরের পর ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সালে ভারতীয় টেরিটোরিয়াল আর্মিতে সাম্মানিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে যোগদান করেন। ২০০২ সালে সুনীল গাভাস্কার এবং সচিন তেন্ডুলকারকে পিছনে ফেলে কপিল দেব ভারতের শতাব্দীর সেরা ক্রিকেটার হিসেবে ভোট পেয়েছিলেন। নিজের আন্তর্জাতির ক্রিকেট কেরিয়ারে ১৩১টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন কপিল দেব। বল হাতে নিয়েছেন ৪৩৪টি উইকেট। টেস্ট ব্যাট হাতে কপিল দেব করেছেন ৫২৪৮ রান। সর্বোচ্চ স্কোর ১৬৩। শতরান ৮টি ও অর্ধশতরান ২৭টি। বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার কপিল দেব যার টেস্টে ৪০০-র বেশি উইকেট ও ৫ হাজারের বেশি রান রয়েছে। অপরদিকে একদিনের ক্রিকেটে ২২৫টি একদিনের ম্যাচে কপিল দেব নিয়েছেন ২৫৩টি উইকেট। সর্বোচ্চ বোলিং ফিগার ৪৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট। ওয়ান ডে-তে ব্যাট হাতে কপিল দেব করেছেন ৩৭৮৩ রান। শতরান একটি ও অর্ধশতরান ১৪টি। সর্বোচ্চ স্কোর ১৭৫। ভারতীয় ক্রিকেটকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করাতে কপিল দেবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে 'হরিয়ানা হ্যারিকেন'-কে কুর্নিশ।