সংক্ষিপ্ত
টি২০ বিশ্বকাপ ২০২১-এর (T20 World Cup 2021) সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে (Australia vs Pakistan ) অস্ট্রেলিয়ার নয়া তারকা হিসাবে উদয় হয়েছে ম্যাথু ওয়েডের (Mathew Wade)। অনেকেই জানেন না অণ্ডকোষের (Testicular Cancer) ক্যানসার সারিয়ে ক্রিকেটে ফিরেছিলেন তিনি।
ছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নারের মতো দুই বিধ্বংসী ওপেনার। মিচ মার্শ, স্টিভ স্মিথের মতো ব্যাটাররা। এমনকী ভরসা ছিলেন আইপিএল-এ নিজেদের জাত চেনানো দুই অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং মার্কাস স্টয়নিসও। এঁদের যে কেউই, টি২০ বিশ্বকাপ ২০২১-এর (T20 World Cup 2021) সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে (Australia vs Pakistan ) হারানোর ক্ষেত্রে, অস্ট্রেলিয়ার তারকা হতে পারতেন। তবে এঁরা কেউ নন, বৃহস্পতিবারের ম্যাচে নতুন তারকা হিসাবে উদয় হয়েছে অজি উইকেটরক্ষক ব্যাটার ম্যাথু ওয়েডের (Mathew Wade)। প্রবল চাপের মুখেও পরপর তিন বলে তিনটি ছয় মেরে তিনি তাঁর মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় রেখেছেন। আসলে এই কাঠিন্য তিনি অর্জন করেছেন নিজের জীবন অভিজ্ঞতা থেকে।
ম্যাথিউ ওয়েড'কে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন, তিনি হলেন দৃঢ়সংকল্প, মানসিক দৃঢ়তা এবং নিছক ইচ্ছাশক্তির এক নিখুঁত উদাহরণ। অনেকেই বলেন, প্রতিভা নয়, শুধুমাত্র মানসিক দৃঢ়তার জোরেই এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছেন। তাঁর থেকে আরও বেশি প্রতিভাবান হয়তো অনেকেই আছেন অজি ক্রিকেটে, কিন্তু, তাঁর মতো মনের জোর, বিরল।
আরও পড়ুন - IND vs NZ Test: টেস্ট দলে ৩ নতুন মুখ - কানপুরে অধিনায়ক রাহানে, পরের ম্যাচে ফিরবেন বিরাট
তাঁর বাবা স্কট ওয়েড (Scot Wade), একজন প্রাক্তন অস্ট্রেলিয় ফুটল তারকা এবং বর্তমানে কোচ। তাই ম্য়াথুর ক্রীড়া জগতে আসাটা মোটেই বিস্ময়কর নয়। তবে, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তাঁর জীবনে নেমে এসেছিল অন্ধকার। চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারত ক্রিকেট খেলা। তাঁর পরিচিত সকলেই সেটাই ধরে নিয়েছিলেন। টেস্টিকুলার ক্যান্সার (Testicular Cancer), অর্থাৎ অণ্ডকোষে ক্যানসার ধরা পড়েছিল ম্যাথুর। দুই রাউন্ড কেমোথেরাপি নিতে হয়েছিল। তারপর শরীর এমনই দুর্বল হয়ে পড়েছিল, যে খেলার মাঠে ফেরাটা অনেক দূরের কল্পনা বলে ভেবেছিলেন সবাই।
কিন্তু, বাম-হাতি ক্রিকেটার অন্যরকম ভেবেছিলেন। মনের জোরে অত্যন্ত দ্রুত খেলায় ফিরেছিলেন। এরপর তাসমানিয়ার (Tasmania) হয়ে অজি ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসাবে তাঁর অভিষেকও হয়। তবে সেখানেও ছিল বাধা। দলে ছিলেন টিম পেইন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তরুণ ম্যাথু বুঝেছিলেন, তাসমানিয়া দলে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসাবে প্রথম পছন্দ থাকবেন পেইন-ই। তাঁর জায়গা হবে না প্রথম দলে। তাই মাত্র ১৯ বছর বয়সে, বিরাট ঝুঁকি নিয়ে তাসমানিয়া থেকে পাড়ি দিয়ছিলেন মেলবোর্নে (Melbourne)।
আর এই পদক্ষেপই ছিল ওয়েডের কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। মেলবোর্নের হয়ে পরপর কয়েকটি চমকপ্রদ পারফরম্যান্সের জোরে ২০১১ সালেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর পাওয়ার-হিটিং-এ মুগ্ধ নির্বাচকরা তাঁকে দ্রুত ওডিআই এবং টেস্ট দলেও সুযোগ দেন। তাঁকে সেই সময় ব্র্যাড হ্যাডিনের (Brad Haddin) উত্তরসূরী ভাবা হত।
টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের শাহীন আফ্রিদিকে মারা ম্যাথু ওয়েডের পরপর তিনটি ছয়, দেখুন -
তবে, আবার তাঁর কেরিয়ারে এসেছিল বড় বাঁক। ক্রমে কিপার হিসেবে তাঁর দুর্বলতা ধরা পড়ছিল। আর বাঁ-হাতি ব্যাটারের ব্যাটেও উজ্জ্বলতা কমছিল। ২০১৭ সালে সব ফর্ম্যাটের অস্ট্রেলিয় দল থেকেই বাদ পড়েন তিনি। সবাই ধরে নিয়েছিলেন, এটাই ম্যাথু ওয়েডের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে ফের নতুন করে কেরিয়ার সাজানোর লক্ষ্যে ওয়েড এবার ফিরে এসেছিলেন নিজ রাজ্য তাসমানিয়ায়।
দুই বছর ধরে ঘরোয়া সার্কিটে ক্রমাগত ভাল খেলে খেলে ২০১৯ সালে তাকে অ্যাশেজ (Ashes 2019) দলে নিতে বাধ্য করেছিলেন নির্বাচকদের। তাঁকে দলে নেওয়া হয়েছিল, উইকেটরক্ষক নয়, একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসেবেই। সেই অ্যাশেজ সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি করে নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিয়েছিলেন তিনি। এক বছরের মধ্যে কামব্যাক করেন ওয়ানডে এবং টি২০ দলেও। আর বৃহস্পকিবার রাতে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, টি২০ বিশ্বকাপ ২০২১-এর ১৫ সদস্যের অস্ট্রেলিয়ান স্কোয়াডেও তাঁকে বাছাই করাটা কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।