সংক্ষিপ্ত
টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২১-এর (T20 World Cup 2021) বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী বার্তা দিতে হাঁটু মুড়ে বসতে অস্বীকার করেছিলেন কুইন্টন ডি কক (Quinton de Kock)। ৪৫ ঘন্টা পর মুখ খুললেন দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) ক্রিকেটারটি।
ক্রিকেট বিশ্বে ছোটখাটো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিয়েছেন কুইন্টন ডি কক (Quinton de Kock)। মঙ্গলবার আবুধাবিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের (West Indies) বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) ম্যাচের ঠিক আগেই এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার দেশের জার্সিতে খেলতে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ, বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী বার্তা দেওয়ার জন্য তাদের ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ক্রিকেটারের কে হাঁটু মুড়ে বসা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। ক্রিকবাজ পোর্টালের হিসাব অনুযায়ী, তারপর থেকে টি২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup 2021) ৮৮ জন ক্রিকেটার মাঠে নেমেছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ৬৬ জন ওই ভঙ্গিতে বর্ণবাদ বিরোধী বার্তা দিয়েছেন। কেটে গিয়েছে ৪৫টি ঘন্টা। তারপর মুখ খুললেন ডি কক।
বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতি প্রকাশ করে, কুইন্টন ডি কক এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য তাঁর ক্রিকেট সতীর্থ ও ফ্যানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ভবিষ্যতে নতজানু হয়ে জাতিভেদ বর্ণভেদ বিরোধী বার্তা দেবেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েই খেলবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিন ডিকক বলেন, তিনি বিষয়টিকে মোটেই বাড়াতে চাননি। বর্ণবৈষম্যের (Racism) বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর গুরুত্ব তিনি বোঝেন এবং খেলোয়াড় হিসাবে একটা উদাহরণ তৈরি করা যে তাও তিনি বোঝেন বলেই দাবি করেছেন ডিকক। তিনি হাঁটু গেড়ে বসলে, যদি অন্যরা শিক্ষিত হয়, তাদের জীবন উন্নত হয়, তবে তা তিনি সানন্দে করবেন বলেও দাবি করেছেন।
"
কিন্তু, কেন খেললেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে? ডি কক বলেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দলের বিরুদ্ধে না খেলে তিনি কাউকে অসম্মান করতে চাননি। মঙ্গলবার সকালেই আচমকা বোর্ডের নির্দেশ পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওই কাজ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন ডিকক। কিন্তু, এর কারণ কী?
প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক-ব্যাটার বলেছেন, তিনি একটি মিশ্র বর্ণের পরিবারে জন্মেছেন। তাঁর সৎ মা এবং সৎ বোনরা কৃষ্ণাঙ্গ। জন্মের পর থেকেই তাঁর কাছে 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' (Black Lives Matter) করে, অর্থাৎ কৃষ্ণাঙ্গদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুধুমাত্র এটা একটা আন্তর্জাতিক আন্দোলন ছিল বলে নয়। ছোট থেকেই তিনি সকল মানুষের সমান অধিকার এবং সাম্যের গুরুত্ব বুঝেছেন। কিন্তু, ক্রিকেটারদের কী করতে হবে, এটা যখন বোর্ডের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন তাঁর মনে হয়েছিল তাঁর ব্যক্তি অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন - T20 WC 2021 - বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, দুবাই যাবেন কি মমতা
আরও পড়ুন - ATK Mohun Bagan - সবুজ-মেরুণের সব পদ ছেড়ে দিচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়, আইপিএল'ই হল কাল
কুইন্টন ডিকক আরও জানিয়েছেন, বুধবার রাতে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের (Cricket South Africa) সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সেখানে, দুই পক্ষই দুই পক্ষের জায়গাটা পরিষ্কার করেছে। এই আলোচনা আগে ঘটলে, গত মঙ্গলবারের অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো যেত বলেই দাবি করেছেন ডিকক। তিনি আরও বলেছেন, তাঁর মনে হয়েছিল, কেন হাঁটু মুড়ে বসেই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি সমতার পক্ষে? কোন আলোচনা ছাড়াই, তাদের যন্ত্রবৎ ওই ভঙ্গি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাতে তাঁর মনে হয়েছিল, যদি তিনি সত্যিকারের বর্ণবিদ্বেষী হতেন, তাহলে তো তিনি হাঁটু মুড়ে বসে মিথ্যা সাম্যকে সমর্থনের ভঙ্গিও করতে পারতেন।
ডিককের দাবি, কিন্তু তিনি বর্ণবিদ্বেষী কিনা, তা যাঁরা তাঁর সঙ্গে বড় হয়েছে, তাঁর সঙ্গে খেলেছে, তাঁরাই জানেন। ক্রিকেটার হিসেবে অনেক সমালোচনা শুনেছেন, কিন্তু তাতে বিশেষ আঘাত পাননি। কিন্তু, একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে তাঁকে বর্ণবিদ্বেষী আখ্যা দেওয়া হল, যেটা তাঁকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। তাঁর পরিবারকে কষ্ট দিয়েছে। তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীকে কষ্ট দিয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, তিনি যে বর্ণবিদ্বেষী নন, সেই বিষয়ে নিজের হৃদয়ের কাছে তিনি একেবারে পরিষ্কার। যারা তাঁকে চেনেন, তারাও সেটা জানেন।
শেষে তিনি তাঁর সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে যদি এই পদক্ষেপের কতা ভাবা হত, তাহলে সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই আরও ভাল হত। সেইক্ষেত্রে তাঁরা ক্রিকেট খেলার দিকে মনোনিবেশ করতে পারতেন, জেতার দিকে মন দিতে পারতেন। বিশ্বকাপ এলেই দক্ষিণ আফ্রিকা দলে কোনও না কোনও নাটক হয়, সেটা ঠিক নয়। অধিনায়ক, তেম্বা বাভুমারও (Temba Bavuma) তিনি দারুণ প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, তাঁকে হয়তো অনেকেই চেনে না, কিন্তু সে একজন চমকপ্রদ নেতা।
দক্ষিণ আফ্রিকার পরের ম্যাচ আগামী শনিবার, শারজায়। বিপক্ষ দল শ্রীলঙ্কা। সেই ম্যাচে, কুইন্টন ডি কক ফের প্রোটিয়া প্রথম একাদশে ফিরে আসবেন বলেই আশা করা হচ্ছে। আর এবার তাঁকে হাঁটু মুড়ে বসতেও দেখা যাবে অন্যান্য সতীর্থদের সঙ্গে।