সংক্ষিপ্ত

সেমিফাইনাল-সহ ১৯৮৩-র বিশ্বকাপ জেতায় বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। আচমকা চলে গেলেন দলের সবচেয়ে ফিট 'ডেভিল' যশপাল শর্মা।

চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ-জয়ী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক কপিল দেব। মঙ্গলবার সকালে পরলোক গমন করেছেন 'কপিলস ডেভিলস', অর্থাৎ কপিল দেব'দের সেই বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য যশপাল শর্মা। আচমকাই, মারাত্মক 'কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট'। বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। ১৯৮৩-র বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন যশপাল। প্রাক্তন সতীর্থের কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগে পুরো ভেঙে পড়লেন কপিল দেব।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, অন্যান্য দিনের মতো এদিনও মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলেন যশপাল শর্মা। বাড়িতেই ফিরেই পড়ে গিয়েছিলেন। তারপর আর ইহলোকের ডাকে সাড়া দেননি তিনি। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলেই মৃত্যু হয়েছে এই বিশ্বকাপ-জয়ী প্রাক্তন ক্রিকেটারের, এমনটাই জানিয়েছেন ডাক্তাররা।  

কপিল ও তাঁর স্ত্রী-এর সঙ্গে সস্ত্রীক যশপাল শর্মা

ক্রিকেট মাঠে যশপাল শর্মা ছিলেন এক বহুমুখী প্রতিভা। ভারতের হয়ে তিনি ৩৭ টি টেস্ট এবং ৪২ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। অনেকে বলেন, সেই সময় টি২০ ক্রিকেট থাকলে, দারুণ নাম করতেন যশপাল। কারণ সেই গত শতকের আটের দশকেই সাহসী ব্যাটিংয়ের জন্য খ্যাত ছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে ভারত টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। সেই ম্যাচে ১২০ বলে ৮৯ রান করেছিলেন যশপাল। তাঁর ইনিংসের জোরেই ভারত ২৬২ রান তুলেছিল এবং ম্যাচটিও জিতেছিল। সেরা হয়েছিলেন যশপালই। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মহিন্দর অমরনাথ তাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন। তবে যশপালের ১১৫ বলে ৬১ রানই ছিল দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান।

আরও পড়ুন - 'রবি শাস্ত্রী এমন ক্রিকেটার যার কোনও প্রতিভা ছিল না', কেন এমন মন্তব্য কপিল দেবের

আরও পড়ুন - ভারতের প্রথম বিশ্বজয়ী অধিনায়কের জন্মদিন, কপিলকে শুভেচ্ছা সচিন-কোহলিদের

আরও পড়ুন - ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন, ভারতীয় ক্রিকেটে স্বর্ণযুগের সূচনা, ফিরে দেখে ২২ গজে দেশের প্রথম বিশ্ব জয়

এদিন যশপাল শর্মার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর একটি নিউজ চ্যানেলের সাক্ষাত্কার দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তাঁর ক্যাপ্টেন কপিল দেব। তিনি বলেন, “যশপাল যে নেই, তা তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না। গত সপ্তাহেই তাঁদের দেখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কপিল। সেইসময় যশপালকে দেখে তাঁর যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান বলে মনে হয়েছিল। তিনি বলেন, 'ঈশ্বরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তো আর লড়াই করা যায় না'।

বস্তুত গত সপ্তাহেই ১৯৮৩-র বিশ্বকাজয়ী দলের সদস্যরা এক অনুষ্ঠানে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। সেই দলের আরেক সদস্য দিলিপ বেঙ্গসরকারও এই ঘটনাকে 'অবিশ্বাস্য' বলেছেন। গত সপ্তাহে যশপালকে এত ফিট লেগেছিল, যে কারণে বিষয়টি আরও অবিশ্বাস্য লাগছে সবার কাছেই। বেঙ্গসরকার তো যশপাল শর্মাকে 'ফিটনেস ফ্রিক' বলেছেন। এমনকী, 'তাঁর ফিটনেসের রহস্য কী?' এই প্রশ্নও ষশপালকে করেছিলেন, বলে জানিয়েছেন বেঙ্গসরকার। তার উত্তরে যশপাল বলেছিলেন, তিনি নিরামিষাশী এবং তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটেন।

শুধু ১৯৮৩ দলের সদস্যরাই নন, সচিন তেন্ডুলকরের মতো পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটাররাও যশপাল শর্মার মৃত্য়ুতে শোক প্রকাশ করেছেন। সচিন বলেছেন, 'ভারতীয় ক্রিকেটে যশপালের অবদান কখনই ভুলে যাবে না।'

যশপাল শর্মার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রানমাথ কোভিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।