সংক্ষিপ্ত
রীতি মেনেই হয় বসিরহাটের বাদুড়িয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের আড়বেলিয়ার বসু বাড়ির দূর্গা পুজোর বোধন থেকে বিসর্জন।৩৮৭ বছরের পুজোয় আজও অমলীন বলী প্রথা ও ইছামতিতে বিসর্জনের রীতি।
দুর্গাপুজো বাঙলিদের ঐতিহ্য। এই পুজোর সাথে কোথাও খুব গভীরভাবে জুড়ে আছে বাঙালি মনন ও বাঙালি চেতনা। বাঙলার মাটিতে মাতৃবন্দনার যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বিদ্যমান তা নিয়ে বলতে গেলে থামা দুস্কর । তবে বাঙলার বুকে যে ঐতিহ্যবাহী সাবেক পুজোগুলি আজও মাতৃবন্দনার এই রীতি ধরে রেখেছে তাদের মধ্যে অন্যতম একটি পুজোর কথাই আজ আপনাদের বলবো
বসিরহাটের বাদুড়িয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের আড়বেলিয়ার বসু বাড়ির দূর্গা পুজোর মাহাত্ম্য এখনো শোনা যায় বসিরহাটের অলিতে গলিতে। সাবেক ধাঁচের এই পুজো এবারে ৩৮৭ বছরে পড়লো। গত ৩৮৭ বছর ধরে রীতি মেনেই মৃন্ময়ী বন্দনা করে আসছেন বসু পরিবারের বংশধরেরা । অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু এই পরিবারেরই সন্তান। তাই পুজোর কটা দিন সমস্ত ব্যস্তত সামলে তাকেও দেখা যায় মাতৃবন্দনায় মাততে। পুজোর রীতি নিয়ে পরিবারের সবাই বেশ সচেতন। রীতি মেনেই হয় তাদের বোধন থেকে বিসর্জন। বেলপাতা দিয়ে শুরু হয় দেবীর অর্চনা। পঞ্চমীরদিন প্রতিমার সাজ সম্পন্ন হলেই বাড়ির ছেলেরা প্রতিমাকে মণ্ডপে অধিষ্ঠান করায়। তারপর পরিবারিক সোনার অলংকারে সেজে ওঠে মাতৃমূর্তি। যষ্ঠির বোধনের পর সপ্তমীর সকালে প্রথা মেনেই হয় নবপত্রিকা স্নান । তারপর সূচনা হয় বলির। বসিরহাটের এই পুজোর এখনও নিয়ম মেনেই হয় পাঁঠা বলি , ভেঁড়া বলি, কুমড়ো বলি। প্রথমে সপ্তমীতে বলি হয় ছাগল, অষ্টমী তিথিতে বলি দেওয়া হয় হয় ভেঁড়া এবং অবশেষে নবমীতে কুমড়ো বলির মধ্য দিয়ে বলি পর্বের ইতি টানা হয়।বলি ছাড়াও এই পুজোয় বিসর্জনের রীতিটি বিশেষ আকর্ষনীয়। দশমীর দিন এখানে বিশেষ যাত্রামঙ্গলের আয়োজন করা হয়।
বিজয়ার দিন বিসর্জনের যে শোভাযাত্রা বেরোয় তাতে আনন্দে বিহল হয় সকলে।শোভাযাত্রার সামনে মা ৩০ বেহারার কাঁধে চেপে তারাগুনিয়ায় ইছামতি নদীর দিকে প্রস্থান করেন আর তার পিছনে সিঁদুর খেলতে খেলতে যান পরিবারের মহিলারা । প্রতিমার বিসর্জনের এই অভিনব পরিবারিক প্রথায় শুধু পরিবারের মহিলারাই নয়, অংশগ্রহণ করেন বাইরের অনেক মানুষও। রীতি রয়েছে এই বসু বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন না হওয়া পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী ধান্যাকুড়িয়া, তারাগুনিয়া ও জগন্নাথপুরের মতো একাধিক গ্রামের জমিদার বাড়ির পুজোর প্রতিমা দালান থেকে নামানোই হয় না। প্রথমে এই বসু বাড়ির প্রতিমার নিরঞ্জন হবে, তারপর একে একে অন্যান্য বাড়ি তথা ক্লাব সংগঠনের প্রতিমা বিসর্জনের পথে এগোবে।শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোয় প্রবীনদের সাথে সাথে অংশ নেয় নবীন প্রজন্মও।পুজোর এই কটা দিন আনন্দে মেতে ওঠে আট থেকে আশি সকলে।