Durga Puja 2025: প্রথমত, দুর্গাপুজোর কয়েকদিন বৃষ্টি খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। ফলে, মানুষ চুটিয়ে ঠাকুর দেখেছেন এবং খাওয়াদাওয়া করেছেন। সেইসঙ্গে, স্পনসরদের থেকেও বিরাট বিনিয়োগ এসেছে এবার।
Durga Puja 2025: শেষ হল বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো (durga puja economy in bengal)। বাঙালির আবেগের এই উৎসব আজ গোটা বিশ্বের দরবারে। কার্যত, ঐতিহাসিক। কারণ, ইতিমধ্যেই এই উৎসব ইউনেসকোর তরফেও স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে (durga puja economy 2025)।

নানা ব্র্যান্ডের ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড
আর ২০২৫ সালের দুর্গাপূজা, আদতেই বাংলার অর্থনীতিতে পুনরুত্থান নিয়ে এল। প্রথমত, দুর্গাপুজোর কয়েকদিন বৃষ্টি খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। ফলে, মানুষ চুটিয়ে ঠাকুর দেখেছেন এবং খাওয়াদাওয়া করেছেন। সেইসঙ্গে, স্পনসরদের থেকেও বিরাট বিনিয়োগ এসেছে এবার। একাধিক পুজো প্যান্ডেলই তার প্রমাণ। সাধারণ হোর্ডিং ছাড়াও এই বছর বহু জায়গায় ছিল নানা ব্র্যান্ডের ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড। অর্থাৎ, ব্যবসা ভালো হয়েছে। সেইসঙ্গে, পুজো প্যান্ডেলের বাইরে স্টল এবং কালচারাল পারফরম্যান্সের সুবাদেও বেশ কিছু বিজ্ঞাপন এসেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের অর্থনীতি এবার দুর্গাপুজোয় ১০-১৫% বৃদ্ধি পেয়ে ৪৬,০০০-৫০,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। তার মানে চলতি ২০২৫ সালে, গোটা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব জোরালোভাবেই প্রভাব ফেলেছে এবং নিঃসন্দেহে অর্থনীতির পুনরুত্থান ঘটেছে। গত বছর কিছুটা পতনের পর, আনুমানিক ১০-১৫% বৃদ্ধি পেয়ে এই বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪৬,০০০-৫০,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এমনটাই জানাচ্ছেন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা।

প্রায় ১৫% বৃদ্ধি?
তারা বলছেন, কর্পোরেট স্পনসরশিপের ব্যাপক বৃদ্ধি, শপিং মলে মানুষের উপস্থিতি, ভোগ্যপণ্যের উপর ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাবই এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে খুচরো বিক্রি, হসপিটালিটি, ট্রান্সপোর্ট এবং হস্তশিল্প খাতের বিকাশ ঘটেছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পিটিআইকে জানিয়েছেন, “বাংলার পূজো অর্থনীতি অবশ্যই এই বছর শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখতে পাবে। তবে এখনই সংখ্যাটা বলা বেশ কঠিন। প্রকৃত তথ্যের জন্য অফিসগুলি পুনরায় খোলা পর্যন্ত, আমরা অপেক্ষা করছি।" তিনি প্রায় ১৫% বৃদ্ধি আশা করছেন বলে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কথায়, “এই বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১২,০৫০ মেগাওয়াট ছুঁতে পারে। যেখানে গত বছর, উৎসবে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৯,৯১২.৭১ মেগাওয়াট। যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি উচ্চতর ইঙ্গিত বহন করছে।"
সবথেকে বড় বিষয় হল, পূজো কমিটিগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞাপনের দাম অনেকটাই বেড়েছে ২০২৫ সালে। একাধিক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার তারা অনেক আগে থেকেই স্লট বুক করা শুরু করেন। অর্থাৎ, ২০২৫ সালের দুর্গাপুজোয় একাধিক ব্র্যান্ড তাদের ব্র্যান্ডিংকে কার্যত, আকাশছোঁয়া জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞাপনদাতারাও খুশি। কারণ, বেশিরভাগ পুজো প্যান্ডেলেই ফুটফল ছিল চোখে পড়ার মতো।

তাছাড়া ফ্রন্ট গেট, রিয়ার গেট মিলিয়ে পুজো উদ্যোক্তাদের তরফেও বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য ছিল একাধিক স্লট। এক্ষেত্রে বলতেই হয়, নয়া জিএসটি স্ল্যাবের কথা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জিএসটি হ্রাসের ফলে, উৎসবের মরশুমে এফএমসিজি জায়ান্টদের ব্যবসা দারুণ হয়েছে।

ভবিষ্যতে আরও বেশি করে স্পনসরশিপ?
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক কাজল সরকার জানিয়েছেন, “সামগ্রিক স্পনসরশিপের বাজার খুব ভালো ছিল।” এই প্রসঙ্গে ইন্ডাস্ট্রি অ্যানালিস্টরা বলছেন, “সামগ্রিক পূজোর বাজার ৪৬,০০০-৫০,০০০ কোটি টাকার হতে চলেছে। যা একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেখানে কর্পোরেট সংস্থাগুলি ভবিষ্যতে আরও বেশি করে স্পনসরশিপ দিতে আগ্রহী হবে। এবার শপিং মলগুলিতেও দুর্দান্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।"
সাউথ সিটি মলের এক কর্তার কথায়, "প্রায় সবাই এবার তাদের টার্গেট অ্যাচিভ করে ফেলেছে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি প্রায় ১০-১৫% মধ্যে রয়েছে। পঞ্চমী এবং ষষ্ঠী উইক এন্ড পড়ে যাওয়ায়, ব্যবসা আরও ভালো হয়েছে। পূজোর মরশুম তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যাওয়ার ফলে, বিক্রি অনেক বেড়েছে।"

এছাড়াও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি গত বছরের তুলনায় ২৩-২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ছবি দেখে একটা কথা পরিষ্কার, তুমুল প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে কলকাতা লড়াইতে ফিরল এবং ভাবনা, কাজ, থিম, শিল্প, উৎকর্ষতা এবং মাধুর্যতা মিলিয়ে জমজমাটভাবেই শেষ হল এবারের দুর্গাপুজো।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।
