সংক্ষিপ্ত
পুজোর মণ্ডপের ভিতরে পরিবেশ একেবারে অন্যরকম। কৃষক আন্দোলন, তাঁদের সমস্যা, তাঁদের উপর হওয়া অত্যাচারের ছবি তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপে।
প্রায় একটা বছর হতে চলল। কিন্তু, কৃষক আন্দোলনের (Farmer Protest) আঁচ এখনও নেভেনি। এবার দমদম পার্ক (Dumdum Park Bharat Chakra) ভারতচক্রের ভাবনা হল কৃষক আন্দোলনের ধারাবাহিকতা। সেখানে শুধুমাত্র সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের ছবিই তুলে ধরা হয়নি। সেখানে রয়েছে তেভাগা (Tebhaga) আন্দোলন থেকে নীল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ সহ দেশে বিভিন্ন সময়ে হওয়া কৃষক আন্দোলনের ছবি। সেই ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপের বিভিন্ন প্রান্তে। আসলে দুর্গাপুজো কোনও বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের নয়। এই উৎসব সবার, থিমের মাধ্যমে সেই বার্তাও দিয়েছে এই পুজো কমিটি।
পুজোর মণ্ডপের (Puja Pandal) ভিতরে পরিবেশ একেবারে অন্যরকম। কৃষক আন্দোলন, তাঁদের সমস্যা, তাঁদের উপর হওয়া অত্যাচারের ছবি তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপে। বিভিন্ন সময়ে হওয়া কৃষক আন্দোলনকেই তুলে ধরা হয়েছে এই মণ্ডপের মধ্যে। ফলে মণ্ডপের প্রতিটি কোনায় কৃষকদের যন্ত্রণার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন- Durga Puja- পুরুলিয়ার কাশিপুর রাজবাড়িতে দেবী দুর্গা চতুর্ভুজা
মণ্ডপের সজ্জার জন্য তৈরি করা হয়েছে চটি। সারি সারি চটি কৃষকদের কঠিন যাত্রারই প্রতীক। প্রধান গেটে বসানো হয়েছে ডানাওয়ালা ট্রাক্টর। যেখানে ছোট ছোট কাগজে বার্তা দেওয়া আছে, পূর্ণ হোক কৃষকদের স্বপ্ন। এছাড়াও প্যান্ডেলের চারদিকে ছড়ানো রয়েছে জীর্ণ ছেড়া চটি। ভিতরের দেওয়ালে আছে বিরাট পদচিহ্নের মাঝে অসংখ্য মুখ। যার মাধ্যমে দেশের কৃষক অত্যাচারের বার্তা দেওয়া হয়েছে। দেওয়াল জুড়ে রয়েছে থ্রিডি ও ফোরডি পেইন্টিং। উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাও উঠে এসেছে এই মণ্ডপ সজ্জায়। এই ধরনের থিম বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে ভারত চক্রের সদস্য দেবশঙ্কর সেন বলেন, "দমদম পার্ক সব সময় সাম্প্রতিক ঘটনা বা সমস্যাকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। অতীতের বিভিন্ন ঘটনা ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা থেকে এবার আমরা এই থিমটিকে বেছে নিয়েছি।"
আর মণ্ডপের একদম ভিতরে ধানক্ষেতের মধ্যে বসে আছেন দেবী দুর্গা। প্রকৃতি মাতৃকা রূপে এখানে দেখানো হয়েছে দেবীকে। তবে এই মণ্ডপসজ্জাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। মণ্ডপসজ্জায় চটি ব্যবহার করার বিরোধিতা করেছে বিজেপি। বিজেপি নেতা প্রলয় পাল বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে ধুমধামের সঙ্গে দুর্গাপুজো পালন করা হয়। যথেষ্ট শ্রদ্ধার সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষরা এই উৎসব পালন করতেন। সেখানে যদি জুতো দিয়ে প্যান্ডেল করা হয় বা হয়তো আগামীদিনে আরও অন্য কোনও জিনিস দিয়ে প্যান্ডেল করা হবে যা দিদিমণি পছন্দ করেন। এভাবে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিকে নষ্ট করা হচ্ছে। পাশাপাশি এভাবে হিন্দু ধর্মের অপমান করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এটা নিয়ে প্রতিবাদ করা উচিত। এটা কখনও হয় না। এভাবে আমরা ধর্ম কীভাবে রক্ষা করব। এটা খুব খারাপ প্রবণতা। প্রয়োজনে আমরা বিষয়টি নিয়ে লিখিতভাবে জানাব।"
আরও পড়ুন- এক সপ্তমী সন্ধ্যায় কোতুলপুর ভদ্র জমিদার বাড়িতে পা রেখেছিলেন রামকৃষ্ণ
যদিও এই থিমের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মকে কোনওভাবে আঘাত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন দেবশঙ্কর। তিনি বলেন, "মণ্ডপের মধ্যে কোনও চটি নেই। মণ্ডপে প্রবেশের যে রাস্তা রয়েছে সেটাকে আমরা সাজিয়েছি। চটি হচ্ছে একটা প্রতীকী বিষয়। মূল মণ্ডপে যেখানে মা বসে রয়েছেন তার সঙ্গে চটির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরাও ২১ বছর ধরে যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করছি। এই পুজোর সঙ্গে অনেকেই যুক্ত থাকেন। ফলে সবার ভাবাবেগের কথাই আমাদের মাথায় রাখতে হয় থিম বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে। মণ্ডপের সঙ্গে চটির কোনও সম্পর্ক নেই। আর এখানে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।"