সংক্ষিপ্ত

হাতির পিঠে সোনার সিংহাসনে বসে নগর পরিক্রমা করেন চামুণ্ডেশ্বরী দেবী, কর্ণাটকের মহীশূরে 'নদাহাব্বা' উৎসব উদযাপন 

দশেরা উপলক্ষ্যে এক মাস মহীশূর প্যালেসেকে লক্ষাধিক লাইট দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। হাতিদের সুন্দর করে সাজিয়ে মহীশূর প্যালেস থেকে এক বিরাট শোভাযাত্রা বের হয়। মহীশূরের এই রাজকীয় উৎসব 'নদাহাব্বা' নামে পরিচিত। 
দশেরা দিনটিতে রামায়ণের কাহিনী অনুসরণে দশানন রাবণ এবং পুরাণের কাহিনী অনুসরণে মা দুর্গা মহিষাসুর বধ করেছিলেন। তাই এই দুই বিষয় অবলম্বলে সারা ভারতজুড়ে পালিত হয় বিভিন্ন উৎসব। লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার। 

একদিকে তাই বাঙালিরা যখন দূর্গাপুজোর আনন্দে মাতে, ঠিক সেই সময়ই ভারতের কোথাও পালিত হয় দশেরা, আবার কোথাও পালিত হয় নবরাত্রি। দশেরা কোথাও কোথাও পরিচিত 'দশহরা' নামে, আবার কোথাও পরিচিত 'দশাইন' নামে। দশহরা উৎসবটি উদযাপিত হয় আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে। 'দশহরা' শব্দের অর্থ হল, 'দশ' মানে দশানন অর্থাৎ রাবণ আর 'হরা' মানে হার বা হারানো। সহজ কথায়, এইদিন লঙ্কায় দশানন রাবণকে হারিয়ে রামচন্দ্র যুদ্ধ জয় করে সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন।তাই সেযুগে পালিত হয়েছিল এই উৎসব। সেই রেওয়াজই চলে আসছে।


 

কর্ণাটকের মহীশূরে দশেরা উৎসব 'নদাহাব্বা' নামে পরিচিত।মহীশূরের দশেরার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল হাতি নিয়ে শোভাযাত্রা। এছাড়াও উট,ঘোড়া নিয়েও রঙবেরঙের শোভাযাত্রা বের হয় এখানে। শোভাযাত্রায় থাকে রাজার নিজস্ব ব্যান্ডবাদক দল, সুসজ্জিত হাতি, ঘোড়ার পিঠে রাজসেনা, পাইক, পেয়াদা। সুসজ্জিত একটি রাজকীয় শোভাযাত্রা রাজপ্রাসাদের সামনের রাজপথ ধরে যাত্রা করে রওনা দেয়। শোভাযাত্রায় হাতির পিঠে চামুণ্ডেশ্বরীর মূর্তি নিয়ে যাওয়া হয়।

মহীশূরের দশ দিনের এই নদাহাব্ব উৎসব শেষ হয় বিজয়া দশমীর দিন। রাজপরিবারের কুলদেবতা চামুণ্ডা দেবীর পুজো চলে নবরাত্রিতে। পুজোর পবিত্র জল রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয় এবং  অস্ত্রপুজো হয়। আর রত্নখচিত সোনার রাজসিংহাসন পুজো করা হয়। দশেরা উৎসব ঘিরে রাজপ্রাসাদ আর শহর সেজে ওঠে লক্ষাধিক আলোকমালায়।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৬১০ সাল নাগাদ শ্রীরঙ্গপত্তনমে দশেরা উৎসব শুরু করেন ওয়াদিয়ার রাজা। রাজদম্পতি চামুন্ডা পাহাড়ে চামুন্ডা মন্দিরে পুজো অর্পণ করেন ও উৎসবের সূচনা করেন। কথিত আছে, এই পাহাড়েই চামুণ্ডা দেবী মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। ইনিই রাজপরিবারের কুলদেবতা। পুজো শেষে দশেরার দিন হাতির পিঠে বসে রাজা শোভাযাত্রা সহকারে নগর পরিক্রমা করতেন। সেই প্রাচীন উৎসবের ঐতিহ্য আজও বহমান। সেই বিশেষ দশেরা শোভাযাত্রা ‘জাম্বু সাভারি’ নামে পরিচিত। বর্তমানে এই শোভাযাত্রায় রাজার বদলে হাতির পিঠে সোনার সিংহাসনে চামুণ্ডেশ্বরী দেবীকে বসিয়ে নগর পরিক্রমা করানো হয়। রাজপ্রাসাদে দশেরার দিন সকালে কুলদেবী চামুণ্ডেশ্বরীর পুজো শেষে রাজার পরিবর্তে এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উৎসবের জাম্বু সাভারি শোভাযাত্রার সূচনা করেন।শোভাযাত্রা রওনা দিয়ে শহর ঘুরে সন্ধ্যের মুখে পৌঁছয় বাণীমণ্ডপ ময়দানে।এখানে একটি 'বান' গাছ বা বটগাছ রয়েছে। সেখানে গিয়ে থেমে যায় শোভাযাত্রা। কথিত আছে এই বটগাছেই অজ্ঞাতবাসের সময়ে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিলেন পাণ্ডবরা।


 

এরপর কামান দাগার প্রসঙ্গ। 'কুশালা থোপু' কামান থেকে একুশবার তোপধ্বনি করা হয়। তারপর জাতীয় সঙ্গীতের সুর বেজে ওঠে। সুরের মোহময় একটা  আবেশ নিয়ে শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। রাজার নিজস্ব ব্যান্ডবাদক দল, সুসজ্জিত হাতি, ঘোড়ার পিঠে রাজসেনা, পাইক, পেয়াদা নিয়ে রাজপ্রাসাদের সামনে রাজপথে রওনা দেয় শোভাযাত্রা। সর্বাগ্রে থাকে নন্দী ধ্বজ। দেবী চামুণ্ডেশ্বরীকে বসানো হয় বলরাম হাতির পিঠে। তার দুইপাশে থাকে কোকিলা আর কান্তি হাতিদ্বয়।এর পাশাপাশি লোকশিল্পীরা বিচিত্র পোশাক পরে অংশ নেন এই শোভাযাত্রায়। যক্ষগণা, পাটা, বীরভদ্র, পূজাকুনিথা প্রভৃতি লোকনৃত্য প্রদর্শিত হয় রাজপথে।


আরও পড়ুন-
৬৬ জন গাম্বিয়ান শিশুর মৃত্যু! ভারতে তৈরি সর্দিকাশির সিরাপ নিয়ে এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা
সিটি হলে একের পর এক রক্তাক্ত লাশ, মেক্সিকোতে ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডে ১৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু
দুর্গাপুজোর ভাসানও হবে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই? জেনে নিন আবহাওয়া দফতরের সাম্প্রতিক রিপোর্ট