সংক্ষিপ্ত
পেশার টানে শরীর অন্য শহরে পৌঁছে গেলেও মন পড়ে থাকে কল্লোলিনীর অলিতে গলিতে। কাশীবোস লেন থেকে গড়িয়াহাট। কিংবা বাগবাজার থেকে দশমীতে বাবুঘাট।
পুজো মানেই কণ্ঠশিল্পীদের কাছে নতুন গান আর পাড়ায় পাড়ায় অনুষ্ঠান। যুগ এগিয়েছে। সময় বদলেছে। কেবল এই ধারণাটা রয়েই গিয়েছে। আজও শিল্পী মুখিয়ে থাকেন, পুজোর গান গাওয়ার জন্য। বিভিন্ন অনুষ্ঠান তাঁর ডাক আসবে, সেই জন্যও। আমিও থাকি। গত দু’বছর যদিও এ সবের কোনও পাট ছিল না। কারণ, করোনা। লোকে প্রামে বাঁচবে না গান শুনবে? সুরক্ষার খাতিরেই পুজোর ধুমধামে রাশ। লাগাম গানের জলসাতেও। মাস্ক মুখে কি গান গাওয়া যায়? শিল্পীরা তাই মনের দুঃখ মনে চেপে রেখেই অপেক্ষা করেছেন দিন ফেরার। গত দু’বছরে বহু জনের পরিবার এই কারণে অর্থনৈতিক দিক থেকে বিপর্যস্ত।
অবশেষে দিন ফিরেছে। ২০২২-এর দুর্গাপুজো দুর্গা উৎসবে পরিণত। ফের অনুষ্ঠান হচ্ছে। নিজের দেশে, প্রবাসে ডাক পাচ্ছেন শিল্পীরা। আমি আমন্ত্রণ পেয়ে উড়ে যাচ্ছি আমেরিকায়। সেখানেই আমার এ বছরের পুজো উদযাপন। অনেক দিন পরে যেন অক্সিজেন পাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি, চোখে জলও চলে আসছে। কোথায় কলকাতার পুজো! কোথায় প্রবাস। ওখানে তো সপ্তাহান্তে পুজো হয়। নিজেদের মতো করে। তবে যখন হয় তখন যথেষ্ট ধুমধামের সঙ্গেই পুজো করেন সবাই।
সেই পুজো দেখা ছাড়াও সারা দিন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা। নিজেকে অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত করা। বিকেল থেকে গানে ডুব। এটাই আমার গানের সফর। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হবে না। গন্তব্যে পৌঁছে সবার আগে আমন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে মিটিং। সাধারণত, আমার তালিকায় থাকে লঘু শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, আমার আধুনিক এবং ছবির গান। আর পুরনো দিনের মন ছুঁয়ে যাওয়া কিছু বাংলা গান। যে সব শিল্পীর গান আমি ভালবাসি। যাঁদের গান আমার গলায় খোলে। প্রয়োজনে এই তালিকাতে বদলও আসে। সবটাই পরিস্থিতি, পরিবেশ, শ্রোতা এবং সংস্থার অনুরোধের উপরে নির্ভর করে।
পুজোয় অনুষ্ঠান মানেই পুজো স্পেশাল সাজে দাঁড়ি! আমি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গাইতে পারি না। দৌড়ে, লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে গাই। তাই শখ থাকলেও শাড়ি পরতে পারি না। বদলে সালোয়ার, কুর্তা-জিন্স বা পালাজো বাছি। আর চুল খুলে গাইতে সমস্যা হয়। তাই বেঁধে রাখারই চেষ্টা করি। কোথাও তেমন পরিবেশ পেলে খোলা চুলেই থাকি। সঙ্গে মানানসই রূপটান, গয়না। আমেরিকার যে শহরে যাচ্ছি, সেখানে শুনেছি অনেক কিছু নাকি দেখার আছে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে সেই জায়গাগুলো অবশ্যই যাব। তা ছাড়া, রেওয়াজেও বেশ কিছুটা সময় চলে যায়। আর দেখি উদ্যোক্তাদের প্রতিমা। আমার শহর থেকে বায়না করে নিয়ে আসা। দেখতে দেখতে নিজের শহরের প্রতিমা শিল্পীদের জন্য আবারও গর্ব অনুভব করি।
বাকি রইল খাওয়া দাওয়া। আমি যেখানে যাই, সেখানকার খাবার খেতে খুব ভালবাসি। নতুন স্বাদ, নতুন গন্ধ। মানেই অন্য রকম আনন্দ। এ ছাড়া, যাঁরা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসেন তাঁরাও বড় যত্ন করে খাওয়ান। পুজোর ভোগও থাকে। তার পরেও মনকেমন কলকাতার জন্যই। ওখানকার মতো ফুচকা, টক জল আমেরিকায়? বৃথা আশা! আসলে, জন্ম-শহরের মতো তো কোনও জায়গা হয় না। সেখানকার সব কিছুই আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। পেশার টানে শরীর অন্য শহরে পৌঁছে গেলেও মন পড়ে থাকে কল্লোলিনীর অলিতে গলিতে। কাশীবোস লেন থেকে গড়িয়াহাট। কিংবা বাগবাজার থেকে দশমীতে বাবুঘাট। পুজোয় তোমায় সত্যিই খুব মিস করব কলকাতা...!!
আরও পড়ুন-
মহালয়ার আগেও এসেছিল হড়পা বান, জল বেড়েছিল নবমীতেও, প্রশ্নের মুখে মালবাজারের প্রশাসনিক তৎপরতা
মাল বাজার হড়পা বানে নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার কাজে নামলেন 'আয়রন লেডি', জানুন শান্তি রাইয়ের গল্প
২ বছরের অতিমারি পেরিয়ে শহরে ফিরছে দুর্গাপুজো কার্নিভাল, কলকাতা পুলিশের সিদ্ধান্ত কী?