সংক্ষিপ্ত

একবার বন্যায় রাজবাড়ির গোশালা ভেঙে পড়ে। গোশালায় দেবীর উৎসর্গীকৃত মহিষ দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যায়। সে বছর থেকেই পশুবলি বন্ধ হয়ে যায়। 

দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশে শুরু হয় কাঁথির কিশোরনগর গড় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। মাদুর্গা এখানে পূজিত হন পশ্চিমমুখী ঘটে। একবার বন্যায় রাজবাড়ির গোশালা ভেঙে যায়। দেবীর উৎসর্গীকৃত মহিষ সেই গোশালার দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যায়। সে বছর থেকেই আড়াইশো বছরেরও প্রাচীন 'মহিষবলি' প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। কাঁথির কিশোরনগর গড় রাজবাড়ির অতীত ইতিহাসের খোঁজ নিলেন অনিরুদ্ধ সরকার।


পুজো শুরু কবে থেকে- 
এই রাজ বাড়ির পূর্বপুরুষ রাজা যাদবরাম রায় দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশ দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু করেন। ১৭২০ সালে পুজো শুরু হয়। পুজোর বয়স প্রায় ৩০০ বছর। 


পশ্চিমমুখী ঘটে হয় পুজো- 
কাঁথি শহরের কিশোরনগর গড় রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মা এখানে পূজিত হন পশ্চিমমুখী ঘটে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, পুজোর চার দিন দেবী মায়ের আরাধনা পাশাপাশি, দেবী বন্দনা হতো। ব্রাহ্মণরা পুজোর চারদিন দেবী বন্দনা গান করতেন।একবার এক জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ এসে সেই সময়ের রাজাকে বলেন, তিনি এবছর দেবী বন্দনা গান গাইবে। সেই জেলে আরও বলেন, তিনি দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েই দেবী বন্দনা গান করতে এসেছেন। কিন্তু জেলে ধীবর সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ায়, রাজপরিবারের কেউ রাজি ছিল না। ওই জেলে ধীবর সম্প্রদায়ের মানুষটি ব্যর্থ মনোরথে ফিরে যায়। সেবছর ওই জেলে দুর্গা মায়ের আরাধনার সময় মায়ের মন্দিরে পেছনে বসে দেবী বন্দনা গান করেন। গান শুরু হলে দেখা যায় মায়ের পুজোর ঘট আপনা থেকেই মন্দিরের পিছন দিকে ঘুরে যায় এবং তা পশ্চিমমুখী হয়ে যায়। 




পুজো পদ্ধতি- 
রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন ঘট প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে। নিয়ম মেনেই মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী সন্ধিপুজো, মহানবমী এবং দশমীর পুজো ও বিসর্জন হয়। মহাষ্টমীর দিন অঞ্জলি দেওয়ার জন্য মানুষজন ভিড় করেন রাজবাড়ির দালানে। নিয়ম মেনেই সন্ধিপুজো হয়  প্রদীপ জ্বালিয়ে। প্রদীপের সলতে তৈরির কাজে হাত লাগান রাজপরিবারের মহিলারা। একসময় সন্ধিপুজোয় কামান দাগা হতো।


সন্ধিপুজোয় বন্ধ হল বলি- 
পুজোতে একসময় বলি প্রথা প্রচলন ছিল। প্রতিবছর মহিষ বলি দেওয়া হত। মহিষ বলি চালু ছিল প্রায় আড়াইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে।পরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মায়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত মহিষ মারা গেলে বন্ধ হয়ে যায় পশুবলি প্রথা। একবার বন্যায় রাজবাড়ির গোশালা ভেঙে পড়ে। গোশালায় দেবীর উৎসর্গীকৃত মহিষ দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যায়। সে বছর থেকেই পশুবলি বন্ধ হয়ে যায়। পশু বলির পরিবর্তে আঁখ ও চাল কুমড়ো বলি শুরু হয়। 

ভোগবৃত্যান্ত-
 দুর্গাপুজোয় দেবী মাকে অন্নভোগ, ফল, মিষ্টান্ন ভোগ নিবেদনের পাশাপাশি কাজু বাদাম দিয়ে হাতে তৈরি একপ্রকার সন্দেশ ভোগ দেওয়া হয়। এই কাজু বাদাম দিয়ে সন্দেশ ভোগ কাঁথির আর কোনও পুজোতে দেওয়া হয় না। এই সন্দেশ ভোগ প্রসাদের জন্য আজও বহু মানুষ আসেন। বর্তমানে এই বিশেষ ভোগের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা চালু হয়েছে।


আরও পড়ুন-
পটাশপুরের পাঁচেটগড় রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়েছিলেন মোঘল সম্রাটরা?
সাদা রঙের সিংহ, তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা প্রতিমা, বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় পূজিতা হন দুর্গার দুই সখীও

‘বর্গী এল দেশে’, আর সেই বর্গীদের রুখে দিলেন রানি জানকী, তিনিই শুরু করলেন মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো