সংক্ষিপ্ত
ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পেতেই যেখানে অনেকের বছরের পর বছর লেগে যায়, সেখানে ঐন্দ্রিলা মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই অন্তত চারটি ধারাবাহিক, একটি সিনেমা, এমনকি একটি ওয়েব সিরিজেও কাজ করেছেন।
জীবনযুদ্ধে শেষ অব্দি হার মানলেন ঐন্দ্রিলা। নিজের কাজেই নিজের পরিচয় রেখে গেলেন তিনি। তার সল্প দিনের কেরিয়ারে একের পর এক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন সিনেমা ও ওয়েব সিরিজেও। মাত্র পাঁচ বছরেই হয়ে উঠেছিলেন টলিপাড়ারা পরিচিত মুখ। নিজের কাজ দিয়েই 'মৃত্যুর চেয়ে বড়' হয়ে থাকতে চেয়েছিলেন সুচিত্রা সেনের একনিষ্ঠ ভক্ত ঐন্দ্রিলা শর্মা। ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পেতেই যেখানে অনেকের বছরের পর বছর লেগে যায়, সেখানে ঐন্দ্রিলা মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই অন্তত চারটি ধারাবাহিক, একটি সিনেমা, এমনকি একটি ওয়েব সিরিজেও কাজ করেছেন।
২০১৫ প্রথম ক্যানসার ধরা পড়ে অভিনেত্রীর। জীবন শুরু হওয়ার আগেই এই মারণ রোগের ছায়ায় আতকে উঠেছিলেন ঐন্দ্রিলা। তবে হাল ছাড়েননি। অফুরান জীবনীশক্তি দিয়ে লড়াই করে হার মানিয়েছিলেন ক্যানসারকে। প্রথমবার সুস্থ হয় ওঠার পরই আসে প্রথম কাজের সুযোগ। সদ্য স্কুলের গণ্ডি পেরোন ১৯ বছরের ঐন্দ্রিলা ব্রেক পান কালার্স বাংলার ঝুমুর ধারাবাহিকের মাধ্যমে। সেই থেকেই যাত্রা শুরু। তারপর পেয়েছেন একের পর এক কাজের সুযোগ। জানা যায় নাচ, আবৃত্তিতে চৌখস ছিলেন ঐন্দ্রিলা। মডেলিং করার অভিজ্ঞতা ছিল, এমনকি, কয়েকটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাও তত দিনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে স্টার জলসায় নতুন ধারাবাহিক ‘জীবন জ্যোতি’তে সুযোগ পান ঐন্দ্রিলা। জীবন জ্যোতির পর অভিনয়ের সুযোগ আসে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এ। উল্লেখ্য এই ধারাবাহিকে বামাক্ষ্যাপার চরিত্রাভিনেতা ছিলেন সব্যসাচী। একই বছরে ডাক আসে সান বাংলার ধারাবাহিক ‘জিয়নকাঠি’ থেকেও। ২০২১ সালে জিয়নকাঠি চলাকালীনই ফের ক্যানসার আক্রান্ত হন তিনি। সেবারও ফাইটব্যাক করেন ঐন্দ্রিলা। ফিরেও আসেন। সুস্থ হয়েই ফের শুরু করেন অভিনয়। এরপর ২০২২ সালে মুক্তি পায় জি বাংলা অরিজিনালসে ঐন্দ্রিলা এবং অনির্বাণ চক্রবর্তী অভিনীত ছবি ‘ভোলে বাবা পার করেগা। এর ঠিক একমাসের মধ্যেই মুক্তি পায় ঐন্দ্রিলা অভিনীত ওয়েব সিরিজ ‘ভাগাড়’।
১ নভেম্বর প্রথম স্ট্রোক হয় ঐন্দ্রিলার। প্রথম থেকেই সংকটজনক ছিল অভিনেত্রীর অবস্থা। জানা যায় মাথার বাঁ দিকে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হয়েছে অভিনেত্রীর। ফলত জরুরী ভিত্তিতে অস্ত্রপচারও করতে হয়। টানা ভেন্টিলেশনে ছিলেন ঐন্দ্রিলা। চিকিৎসরা জানান বায়পসিতে দেখা গিয়েছে ‘ইউয়িংস সারকোমা’ এবার মস্তিষ্কে দেখা দিয়েছে। এর ফলেই স্ট্রোক হয়েছিল ঐন্দ্রিলার বলেও জানান তাঁরা। তবু ঐন্দ্রিলার অদম্য জেদ আর অফুরাণ জীবনীশক্তির উপর ভরসা করেই আশায় বুক বেঁধেছিল চিকিৎসক মহল। স্নায়ু চিকিৎসক থেকে রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্ট-সহ চিকিৎসকদের একটি গোটা দল মিলে প্রচেষ্টা চালায় ঐন্দ্রিলাকে সুস্থ করার। তবে এত চেষ্টা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হয়নি। অস্ত্রপচারের পর আবারও মস্তিষ্কের বাঁ দিকে স্ট্রোক হয় অভিনেত্রীর। পরে মাথার ডান দিকেও স্ট্রোক হয় তাঁর। অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে। কমে আসে চেতনাও। বারবার হৃদরোগে আক্রান্ত হতে থাকেন তিনি। অবশেষে রবিবার দুপুরে ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয় তাঁর। আর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। ১২টা ৫৯-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।