সংক্ষিপ্ত
রাহুল বললেন, ‘আমি ওঁদের কাছ থেকে দেখিনি। আলাপও ছিল না। কিন্তু ওঁদের প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করতাম। সম্মান জানাতাম ওঁদের লড়াইকে। ভালবাসতাম ওঁদের ভালবাসাকে।’
কেউ সত্যিই আক্ষরিক অর্থে কাঁদছেন। কেউ বোবা কান্নায় নীরব। এশিয়ানেট নিউজ বাংলা যোগাযোগ করেছিল রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরব রায়চৌধুরী, মিশমি দাস, পোশাকশিল্পী রাইকিশোরী কৃষ্ণকলির সঙ্গে। কেউই কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। অঝোরে কাঁদছেন রাইকিশোরী। তাঁর বানানো পোশাক পরেই এ বার পুজোয় শেষ ফটো শ্যুট ঐন্দ্রিলার। তাঁর আফসোস, ‘দিদিকে কিছুতেই ধরে রাখতে পারলাম না!’ রাহুল এই মুহূর্তে ছেলে সহজের সঙ্গে। তাঁর গলায় এক দলা বিষাদ। কোনও রকমে বললেন, ‘কিচ্ছু বলতে পারছি না। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। কলম ধরার মতোও অবস্থায় নেই। যদিও আমি ওঁদের কাছ থেকে দেখিনি। আলাপও ছিল না। কিন্তু ওঁদের প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করতাম। সম্মান জানাতাম ওঁদের লড়াইকে। ভালবাসতাম ওঁদের ভালবাসাকে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে গেল মেয়েটা।’ ফেসবুকে রাহুলের বক্তব্য, ‘নতুন কলামের প্রথম কিস্তি লিখে উঠলাম। আজকের রোদ অন্য রকম।’
শনিবার রাতে ফেসবুক থেকে সমস্ত পোস্ট মুছে দিয়েছেন সব্যসাচী চৌধুরী। এশিয়ানেট নিউজ বাংলা তাঁকে ছুঁতে পারেনি। বদলে প্রশ্ন রেখেছিল আরও এক জনপ্রিয় অভিনেতার কাছে। সৌরভ দাস। যিনি পেশার খাতিরে তাঁর ‘ভাই’ সব্যসাচীর পাশ থেকে সাময়িক সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। ব্যাংককে ‘বিবাহ অভিযান ২’-এর শ্যুটিং চলছে। সেখান থেকেই এশিয়ানেট নিউজ বাংলাকে হোয়াটসঅ্যাপে যেন ডুকরে উঠেছেন, ‘ঐন্দ্রিলা আর নেই’! পাবজি খেলতে খেলতে ‘সব্য’ আর সৌরভ হরিহর আত্মা। ঐন্দ্রিলা কবে থেকে তাঁর আত্মার আত্মীয়? সম্ভবত ওই খেলার সূত্র ধরেই। সেই সখ্য আরও গাঢ় হোঁদল রেস্তরাঁর সৌজন্যে। সব্যসাচী, দিব্যপ্রকাশ রায়, সৌরভ প্রাণপাত করেছেন। ঐন্দ্রিলার উদ্দীপনা যেন ওঁদের এগিয়ে চলার পাথেয়! সব্যসাচীর জন্মদিনের রাতেই আচমকা অসুস্থতা। সে দিনও ওঁদের ছায়াসঙ্গী সৌরভ আর দিব্য। অভিনেত্রী হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লড়ছেন। অতন্দ্র প্রহরীর মতোই সব্যসাচীর সঙ্গে দিনের পর দিন রাত জেগেছেন সৌরভ।
চারিদিকে তখন ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে ভুয়ো খবরের ছড়াছড়ি। সব্যসাচী অধরা। এশিয়ানেট নিউজকে প্রথম সৌরভ বলেছিলেন, ‘আমি, সব্যসাচী চৌধুরী, দিব্যপ্রকাশ রায় আর ঐন্দ্রিলার পরিবারের এক জন ভেন্টিলেশন ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে। আমরা পালা করে আসছি। কাচের ঘরের বাইরে থেকে দেখে যাচ্ছি ওকে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঐন্দ্রিলা লড়ছে। ওর সঙ্গে লড়ছে গোটা হাসপাতাল। মিনিটে মিনিটে হৃদস্পন্দন, নাড়ির গতি মাপা হচ্ছে। এক দল চিকিৎসক ঐন্দ্রিলার সঙ্গে যেন লেপ্টে রয়েছেন! অসুস্থতার দিন থেকে শনিবার, ৫ নভেম্বর পর্যন্ত—ঐন্দ্রিলা শর্মা যেমন ছিল তেমনি আছেন। আপনাদের একটা কথাও মিথ্যে বলছি না। বাজে স্বান্তনাও দিচ্ছি না। বরং আন্তরিক অনুরোধ জানাচ্ছি, দয়া করে সূত্রের খবরে বিশ্বাস করবেন না! নতুন করে ওর কোনও অবনতি হয়নি!’
ওই অবস্থাতেই আগামী ছবির শ্যুটের মহড়াও দিয়েছেন হাসপাতালে বসে। সঙ্গী সব্য। সৌরভের কথায়, ‘এই লড়াইটা যাতে সুস্থ থেকে সব্য লড়তে পারে তার জন্য রেস্তরাঁ থেকে রাতে হাসপাতালে আসার সময় খাবার নিয়ে আসছি। কোনও দিন কোনও প্রেমিকার জন্য যা করিনি। সব্য তো আমার বন্ধু নয়, ও আমার আর জন্মের ভাই! তার পর রাতে দু’জনে মিলে চিত্রনাট্য পড়ছি। কিছু দিনের মধ্যেই ‘বিবাহ অভিযান ২’-এ শ্যুট শুরু হবে। মনের দুঃখ মনে চেপে দায়িত্ব নিয়ে লোক হাসাতে হবে তো! এত কিছুর মধ্যে তারও মহড়া চলছে।’
এশিয়ানেট নিউজ বাংলাকে নিয়মিত অভিনেত্রী সম্পর্কে আপডেটস দিয়ে গিয়েছেন ‘মণ্টু পাইলট’। তিনিও ভেঙে পড়েন যখন সব্যসাচী ভেঙে পড়েন। গত সোমবার সব্যসাচী প্রথম পোস্টে লেখেন, ‘মন থেকে সবাই প্রার্থনা করুন। একমাত্র দৈব শক্তি বা অলৌকিক ঘটনা বাঁচাতে পারে ঐন্দ্রিলাকে।’ সেই সব পোস্ট যদিও এখন আর নেই। সব্যসাচীর সামাজিক পাতাটিও দেখা যাচ্ছে না। এর পরেই সৌরভ এশিয়ানেট নিউজ বাংলাকে জানান, অবস্থা আশঙ্কাজনক। একমাত্র সবার শুভেচ্ছা, প্রার্থনা পারে ঐন্দ্রিলাকে ফিরিয়ে আনতে। খবর জানাতে জানাতেই আফসোসে ভেঙে পড়েন তিনি। দাবি, 'সবাই মিলে অনেক লড়লাম! যদি ভাগ্যে থাকে অলৌকিক কিছু ঘটবে।' সেই অলৌকিক ঘটল কই?