সংক্ষিপ্ত

তৃতীয় বার ক্যান্সারে আক্রান্ত ঐন্দ্রিলা। এ বার ক্যান্সার ওর মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর কত লড়বে? তবু ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়ার পরেও মেয়েটা ফিরে এসেছিল।

‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মার সঙ্গে। পেশাজনিত সেই আলাপ ক্রমে গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হয়। মনখারাপ নিয়ে ব্যাংককে শ্যুটিংয়ে সৌরভ দাস। কলকাতা ছেড়ে গিয়ে বন্ধুকেই হারিয়ে ফেললেন! এশিয়ানেট নিউজ বাংলায় আফসোস অভিনেতার...

পেশা আর আবেগ— দুইয়ের ভারসাম্যই জীবন। সেই ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়েই আমি কলকাতা-ছাড়া। সব্যসাচীর পাশে নেই। বেচারা একা সব সামলাচ্ছে। আমি সুদূর ব্যাংককে। পরশু দিন ফিরছি। তার পর থেকে আজীবন ওকে সামলাব। কথা দিয়েছি ঐন্দ্রিলাকে। আমার ‘ভাই’য়ের পাশে আপাতত দিব্য রয়েছে। সব্যসাচীর মনের অসীম জোর। ও ভেঙে পড়েনি। পড়বেও না। শুধু অব্যক্ত যন্ত্রণায় গুঁড়িয়ে যাবে। যাচ্ছেও। ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে কথা হচ্ছে আমাদের। সেখানেই সব্যসাচীর আফসোস আছড়ে পড়েছে, মিষ্টি (ঐন্দ্রিলা)কে আর ধরে রাখতে পারলাম না। শকুনদের নজর ছিল ওর উপরে। কবেই ওকে মেরে ফেলেছে! আমি একা সমানে লড়াই করে গিয়েছি। চেষ্টা চালিয়েছি ফিরিয়ে আনার। শেষরক্ষা হল না।

 

 

সকাল থেকে দেখছিলাম, আজকের রোদটাও কেমন যেন মরা মরা! যেন সব উৎসাহ হারিয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে। শেষ আলোটুকু থাকতে হয়, তাই...। দেখতে দেখতে চোখ ভিজে উঠছে। আর মনে পড়ে যাচ্ছে ঐন্দ্রিলার লড়াইয়ের কথা। কী অদমন্য প্রাণপ্রাচুর্য। যার জেরে দু’বার ক্যান্সারকে হারিয়ে জীবনের পথে ফিরেছে। এবং ফিরেছে রানির মতোই। আবার আগের মতোই সুস্থ। আবার আগের মতোই প্রাণচ্ছ্বল। আবার আগের মতোই কাজে ব্যস্ত। ওর সঙ্গে নতুন করে হৃদ্যতা জন্মেছিল, সব্যর আর আমার পাবজি খেলার মাধ্যমে। মিষ্টি রীতিমতো নালিশ জানাত, ওকে এত খেলতে দাও কেন? বারণ করতে পার না? খুব মিষ্টি লাগত। আবার ও নিয়ম না মানলে সব্যর চোখরাঙানি। আমায় বলত, দ্যাখ, কথা শুনছে না। ফের অসুস্থ হয়ে পড়বে। দু’জনে দু’জনকে চোখ হারাত। দু’জনে দু’জনে সারা ক্ষণ আগলাত। যেন দু’জনেই কী ভীষণ বাচ্চা! ওদের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল হোঁদল রেস্তরাঁ।

 

 

বিশ্বাস করুন, আসতে চাইনি। সব্য তখন আমায় জোর গলায় ভরসা দিয়েছিল, তুই নিশ্চিন্তে যা। মন দিয়ে কাজ কর। সাবধানে ফিরে আয়। মিষ্টি আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবে না। ও আমাদের সঙ্গেই থাকবে। সব্যর এই কথাটাও ফলল না! নিন্দকেরা এর মধ্যেই নাকি ছড়িয়েছে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলেই নাকি এই অবস্থা। ওরা কিচ্ছু জানে না। তৃতীয় বার ক্যান্সারে আক্রান্ত ঐন্দ্রিলা। এ বার ক্যান্সার ওর মস্তিষ্কের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর কত লড়বে বলুন তো? তবু ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়ার পরেও মেয়েটা ফিরে এসেছিল। সব্যসাচীর থেকে শুনেছি। আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবে না বলেই। ক্রমশ আমার খারাপ লাগাটা বাড়ছেই। কোনও মতে যদি কলকাতায় ফিরতে পারতাম। শেষ বারের মতো দেখতে তো পেতাম। সেটা আর হল না। চলে আসার আগে ওকে দেখে এসেছিলাম। সেটাই আমার স্মৃতিতে ধরা রইল।