অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের বাংলাদেশে সিনেমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। বিমানবন্দরে অপ্রত্যাশিত বাধার মুখোমুখি হওয়ার পর, বাংলাদেশের সেনা অফিসারদের এক কাপ চায়ের আন্তরিক নিমন্ত্রণ পান।
অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের কল্পনাতেও ছিল না, যে বাংলাদেশে সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে তিনি এমন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি অ্যান্টেনায় বুস্টার লাগিয়ে বাংলাদেশের টেলিভিশনের নাটক দেখে বড় হয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস ও সাহিত্য তাঁকে বরাবরই মুগ্ধ করেছে। সেই প্রিয় দেশের মাটিতে পা রাখতে গিয়েই এমন এক ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে, তা তিনি ভাবতেও পারেননি।
ঘটনাটি একটু বিস্তারিতভাবে বলা যাক। কয়েক বছর আগে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় একটি সিনেমার শুটিংয়ের জন্য বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ পান। ছোটবেলা থেকেই যাঁর মনে ছিল ওপার বাংলায় যাওয়ার ইচ্ছা, সেই স্বপ্ন অবশেষে বাস্তব হতে চলেছিল। সেই আনন্দ নিয়েই তিনি বিমানে চেপে পৌঁছন বাংলাদেশে। কিন্তু তখনও তিনি বুঝতে পারেননি, বিমানবন্দরে নামার পরই এমন এক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন। ওপার বাংলার মাটিতে পা দিয়েই যে এমন এক বাধার সম্মুখীন হতে হবে, তা তাঁর কল্পনারও বাইরে ছিল।
ঘটনাটি ছিল বেশ নাটকীয়। প্লেন থেকে নেমে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় যখন বাংলাদেশে পৌঁছন, তখন তিনি সোজা চলে যান ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। সেখানে কর্তব্যরত অফিসার প্রথমে তাঁকে দেখে অবাক হয়ে যান—চেনা মুখ দেখে কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন। তারপরই মুখে হাসি ফুটে ওঠে, এবং শাশ্বতকেও হাসিমুখে স্বাগত জানান। ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়াও খুব সহজেই সম্পন্ন হয়ে যায়। শাশ্বত তখন ভাবলেন, সব ঠিকঠাকই চলছে—এবার নিশ্চিন্তে শুটিং শুরু করা যাবে।
কিন্তু ঠিক তখনই ঘটে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর মুখে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুই অফিসার। তাঁরা হাত তুলে শাশ্বতের পথ আটকে দেন। শাশ্বত কিছুটা হতভম্ব হয়ে যান। অফিসাররা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কোথায় যাচ্ছেন। শাশ্বত জানান, তিনি শুটিংয়ের জন্য এসেছেন। কিন্তু তাঁর কথা শেষ হওয়ার আগেই তাঁরা জানিয়ে দেন—তাঁকে দেশে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
এই কথা শুনে শাশ্বত একেবারে অবাক হয়ে যান। ভাবতে থাকেন, এমন কী ঘটল যে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হবে না? সাহস করে তিনি জিজ্ঞেস করেন, “এত দূর থেকে শুটিং করতে এলাম, বাংলাদেশে ঢুকতে পারব না?”
এরপর যা ঘটল, তা যেন একেবারে সিনেমার চমক! দুই সেনা অফিসার হঠাৎ করেই বললেন, “আমাদের সঙ্গে এক কাপ চা না খেলে আপনাকে দেশে ঢুকতে দেব না!” এমন কথা শুনে শাশ্বত হেসে ফেলেন। ভাবা যায়! এক কাপ চায়ের নিমন্ত্রণেই খুলে গেল বাংলাদেশের দরজা!
শাশ্বত পরে জানান, “এরপরের অভিজ্ঞতা যেন স্বপ্নের মতো। বাংলাদেশের নানা জায়গা ঘোরা, সেখানকার মানুষের আন্তরিকতা—সবকিছুই মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। সেই ভালোবাসা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়।”


