ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী এবং পদ্মবিভূষণ প্রাপক পণ্ডিত ছন্নুলাল মিশ্র প্রয়াত হয়েছেন। বেনারস ও কিরানা ঘরানার এই মহাতারকা খেয়াল, ঠুমরি, ভজন সহ বিভিন্ন ধারার সঙ্গীতকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মহাতারকা পণ্ডিত ছন্নুলাল মিশ্র বৃহস্পতিবার সকালে মির্জাপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৩৬ সালে আজমগড়ের হরিহরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। মিশ্রজি ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতে তাঁর গভীর জ্ঞানের পরিচয় দেন। তাঁর দাদু গুদাই মহারাজ শান্তা প্রসাদ একজন বিখ্যাত তবলাবাদক ছিলেন এবং বাবা বদ্রী প্রসাদ মিশ্র তাঁকে অল্প বয়সেই সঙ্গীতের খুঁটিনাটি শিখিয়েছিলেন।
ছয় বছর বয়সে ছন্নুলাল সঙ্গীত সাধনা শুরু করেন এবং নয় বছর বয়সে তিনি তাঁর প্রথম গুরু উস্তাদ গনি আলি সাহেবের কাছ থেকে খেয়াল শেখার সুযোগ পান। এরপর তিনি কিরানা ঘরানার বিখ্যাত উস্তাদ আব্দুল গনি খান এবং ঠাকুর জয়দেব সিংয়ের কাছেও প্রশিক্ষণ নেন। এভাবেই পণ্ডিত মিশ্রের সঙ্গীত যাত্রা শুরু হয়, যা তাঁকে বেনারস ঘরানা এবং কিরানা ঘরানার গায়কীর একজন প্রতিনিধি শিল্পী করে তোলে।
ছন্নুলাল মিশ্র তাঁর সারা জীবনে খেয়াল, ঠুমরি, ভজন, দাদরা, কাজরি এবং চৈতির মতো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গীত শুধু গায়কী ছিল না, বরং ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বার্তাও বহন করত। বেনারসে তিনি চতুর্ভুজ স্থানের একটি ছোট ঘরে থেকে সঙ্গীত সাধনা করেন এবং নিজের গায়কীর জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। মিশ্রজি তাঁর অবদানের জন্য অনেক জাতীয় সম্মান পেয়েছেন। ২০০০ সালে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার, ২০১০ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০২০ সালে পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন। তাঁর সঙ্গীত শুধু ভারতে নয়, বিশ্ব মঞ্চেও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিচিতি তৈরি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ছন্নুলাল মিশ্রের সম্পর্ক
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় পণ্ডিত ছন্নুলাল মিশ্রের ছবি শেয়ার করে বলেছেন যে তাঁর মৃত্যু ভারতীয় শিল্পপ্রেমীদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। প্রধানমন্ত্রী মোদী লিখেছেন যে মিশ্রজি সারাজীবন ভারতীয় শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি সমর্পিত ছিলেন এবং তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০১৪ সালে তিনি বারাণসী আসন থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রস্তাবকও ছিলেন।
ছন্নুলাল মিশ্রের গায়কী শুধু শিল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁর সঙ্গীত ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্ব মঞ্চে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি সঙ্গীতকে সহজ করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন, যাতে তরুণ প্রজন্মও এর গভীরতা বুঝতে পারে। তাঁর জীবন থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে সঙ্গীত শুধু একটি শিল্প নয়, এটি একটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, যা আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি।


