ত্রুটিপূর্ণ গাড়ির বিজ্ঞাপন দেওয়ার অভিযোগে শাহরুখ খান এবং দীপিকা পাড়ুকোনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। ভোক্তা অধিকার কর্মীরা দাবি করছেন যে বিজ্ঞাপনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় তারকারাও দায়ী। 

বলিউড মেগাস্টার শাহরুখ খান এবং অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছেন। ত্রুটিপূর্ণ গাড়ির বিজ্ঞাপন দেওয়ার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার কর্মীদের অভিযোগ, বিজ্ঞাপন এবং ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করেছেন এই দুই তারকা।

শাহরুখ-দীপিকা আইনি ঝামেলায়

এফআইআরে দাবি করা হয়েছে যে, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রচারিত গাড়িগুলিকে “নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত” হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু কেনার কয়েক মাসের মধ্যেই কয়েকশো গ্রাহক গুরুতর প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হন। অভিযোগকারীর মতে, সেলিব্রিটিদের বিজ্ঞাপনের ক্রেতাদের উপর বিশাল প্রভাব রয়েছে। তাই যখন বিজ্ঞাপনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় না, তখন কোম্পানি এবং এন্ডোর্সকারী উভয়কেই জবাবদিহি করতে হবে।

কর্মীরা আরও বলেছেন যে, এই সেলিব্রিটিরা কেবল “ব্র্যান্ডের মুখ” নন, বরং “দায়িত্বশীল এন্ডোর্সকারী”ও। কারণ তারা পণ্যের উপর নির্ভরযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করেন। ভোক্তা সুরক্ষা আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির (IPC) প্রতারণা এবং বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত ধারায় এই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

আইনি দিক

সাম্প্রতিক সময়ে, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন সম্পর্কে ভারতের আইনি ব্যবস্থা অনেক কঠোর হয়ে উঠেছে। ভোক্তা সুরক্ষা আইন অনুসারে, কোনও পণ্য যদি মিথ্যা বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবে তার বিজ্ঞাপনদাতা সেলিব্রিটিও দায়ী থাকবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে, সেলিব্রিটিদের উপর ভারী আর্থিক জরিমানা, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, এমনকি চরম ক্ষেত্রে কারাদণ্ডও হতে পারে।

আইনজ্ঞরা দাবি করছেন যে, এই মামলা যদি সফল হয়, তাহলে তা ভারতের বিনোদন এবং বিজ্ঞাপন জগতে একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। যদিও গাড়ি প্রস্তুতকারকদের উপরই সবচেয়ে বেশি দোষ বর্তাবে, তবে শাহরুখ খান এবং দীপিকা পাড়ুকোনের মতো প্রভাবশালী অভিনেতাদের জড়িত থাকার কারণে বিষয়টি কিছুটা আলাদা।

শিল্প ও জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া

এই এফআইআর অনলাইনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কিছু নেটিজেন যথাযথ তদন্ত ছাড়াই পণ্য প্রচার করার জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সমালোচনা করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, প্রস্তুতকারকের প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য সেলিব্রিটিদের দায়ী করা অন্যায়। উভয় অভিনেতার ভক্তরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সমর্থন করে বলেছেন যে, ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট একটি পেশাগত দায়িত্ব।

এদিকে, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে, এই ধরনের বিতর্কের কারণে সেলিব্রিটিরা তাদের বিজ্ঞাপন নির্বাচনে আরও সতর্ক হয়ে উঠবেন। এখন থেকে, বড় ব্র্যান্ডের সাথে চুক্তি করার আগে এন্ডোর্সকারীরা তৃতীয় পক্ষের মান পরীক্ষা করার দাবি জানাতে পারেন।

প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা

এখনও পর্যন্ত শাহরুখ খান বা দীপিকা পাড়ুকোন কেউই এই এফআইআর সম্পর্কে কোনও অফিসিয়াল বিবৃতি দেয়নি। অভিযোগ সম্পর্কে জড়িত গাড়ি কোম্পানিও নীরব। অভিযোগের গুরুতরতার কারণে, শিল্প বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন যে অভিনেতাদের আইনি দল শীঘ্রই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে।

শাহরুখ খান এবং দীপিকা পাড়ুকোনের বিরুদ্ধে এই এফআইআর ভারতে সেলিব্রিটি এন্ডোর্সকারীদের ভোক্তাদের প্রতি জবাবদিহি করার ক্রমবর্ধমান প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। যদিও বিচারে অনেক কিছুই এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবুও এটি ইতিমধ্যেই ভোক্তাদের আচরণকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে সেলিব্রিটিদের দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। সকলের নজর এখন তদন্ত এবং দেশের এন্ডোর্সমেন্ট ব্যবসায় এর প্রভাবের দিকে।