সংক্ষিপ্ত
- আশঙ্কা ছিল, শেষ.পর্যন্ত গ্রেফতার হতে হল মিশেল প্লাতিনি-কে
- ২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ
- অন্যায়ভাবে কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ
- দুর্নীতির সময় ফিফার ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন মিশেল প্লাতিনি
কাতারগেট কেলেঙ্কারিতে শেষপর্যন্ত গ্রেফতার মিশেল প্লাতিনি। একটা সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল প্লেয়ার হিসাবে তাঁকে গণ্য করা হয় না, বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের তালিকাতেও তাঁর নাম প্রথম দশে রয়েছে। এহেন প্লাতিনি-কে শেষপর্যন্ত আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হতে হল। মঙ্গলবার প্লাতিনিকে পশ্চিম প্যারিসের শহরতলি নঁতেঁরে থেকে গ্রেফতার করা হয়। আর্থিক দুর্নীতি, আর্থিক-প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গ নিয়ে তদন্ত করা ফরাসী পুলিশের ওসিএলসিআইএফএফ নামক সংস্থা প্লাতিনিকে গ্রেফতার করে।
৬৩ বছরের প্লাতিনি-র বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে কাতারকে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্লাতিনি এবং তৎকালীন ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার মিলে বিশাল আর্থিক কেলেঙ্কারিতে কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ঘটনার সময় প্লাতিনি ছিলেন ফিফার ভাইস-প্রেসিডেন্ট। ২০১৫ সালে এই দুর্নীতির কথা সামনে আসে। অভিযোগ, ২০১১ সালে ফিফা প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হন ব্লাটার। কিন্তু, সেই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো জায়গায় ছিলেন না ব্লাটার। তিনি প্লাতিনির সাহায্যে কাতার ফুটবল ফেডারেশনের সমর্থন আদায় করেন। এতে ব্লাটারকে আর গদিচ্যূত হতে হয়নি। তিনি পুনরায় ফিফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বিনিময়ে কাতারকে ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এমনকী প্লাতিনি-কে ব্লাটার এর জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থও ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
এরপরই আলাদা করে ফিফার দুর্নীতি দমন শাখা তদন্ত শুরু করেছিল। যদিও, এই তদন্ত নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। অভিযোগ ওঠে প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে সেপ ব্লাটার তদন্ত শুরু-ই করতে দেননি। শেষমেশ উয়েফার প্রবল বিরোধিতার সামনে পড়ে ব্লাটারের আপত্তি উড়ে যায়। তদন্তেও ব্লাটার ও প্লাতিনি-সহ এক বিশাল সংখ্যক ফিফা কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়।
এই তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ফিফা থেকে অপসারিত হতে হয় সেপ ব্লাটার ও মিশেল প্লাতিনি-কে। এরপর প্লাতিনির বিরুদ্ধে পুলিশি কার্যকলাপ শুরু হওয়াটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। একটা সময় উয়েফারও প্রেসিডেন্ট ছিলেন প্লাতিনি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পরই তিনি খেলা থেকে অবসর নিয়ে ছিলেন। কিছুদিন কোচিং-এ যুক্ত থাকলেও আস্তে আস্তে তিনি ফুটবল সংগঠক হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন।
ফরাসী ফুটবল সংস্থার শীর্ষপদেও আসিন হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে মিশেল প্লাতিনির তুখর ফুটবল মস্তিষ্ক ছিল বলেও দাবি করা হয়। পরবর্তীকালে উয়েফা-র শীর্ষপদেও বসেন প্লাতিনি। ভালো ফুটবল দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রশাসনিক কর্তা হিসাবে দক্ষতা সবসময়ই প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু, ক্ষমতার অলিন্দে মানুষ অনেক সময় নিজেকেও হারিয়ে ফেলে। আদ্যোপান্ত ভদ্র মানুষ হিসাবে পরিচিত প্লাতিনির ক্ষেত্রেও কী সেরকমটা হল, এখন এই প্রশ্ন বিশ্ব ফুটবল মহলে।