লাভের গুড় খাবে বিজেপিই, বাংলার ২০ আসনে চোখ মিমের - জল মাপছেন ওয়াইসি
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে এখন রাজ্যে সাজো সাজো রব। প্রত্যেকটি দলই দারুণভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন লড়ার। তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি, সংযুক্ত মোর্চা - প্রতিটি পক্ষই হয় সম্পূর্ণ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে, আর নয়তো অন্তত কয়েকটি আসনের জন্য প্রাদের নাম জানিয়েছে। আর এরমধ্যে হঠাৎ করেই কেমন চুপ মেরে গিয়েছেন আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এবং তাঁর দল এআইমিম। অথচ, বিহার নির্বাচনের পর বাংলায় প্রার্থী দেবেন বলে রাজ্যের অনেক রাজনৈতিক নেতার কপালেই ভাঁজ ফেলে দিয়েছিলেন ওয়াইসি। তাহলে কি আইএসএফ-এৎ উত্থানে পিছিয়ে গেল এআইমিম, না কি অন্য কোনও ভাবনা চলছে ওয়াইসির মাথায়?
- FB
- TW
- Linkdin
নজরে ২০ আসন
বিহারের পর থেকে গুজরাত, তামিলনাড়ু - একের পর এক রাজ্যের স্থানীয় নির্বাচনে বেছে বেছে আসনে প্রার্থী দিয়ে সাফল্য কুড়িয়েছে এআইমিম। বাংলাতেও, সাফল্যের সেই হার ধরে রাখতে প্রথমবার হাতেগোনা কয়েকটি আসনেই প্রার্থী দেবে তারা। এমনটাই শোনা যাচ্ছে। ২৯৪ টি আসনের মধ্যে বাছাই করা ২০ টি আসনে মিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে বলে সূত্রের খবর।
অপেক্ষা আইএসএফ-এর
২১ জানুয়ারি ফুরফুরা শরিফের মৌলানা আব্বাস সিদ্দিকি আইএসএফ গঠন করেছিলেন। তারা বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংযুক্ত মোর্চা গঠন করেছে। এতে কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে আসাদুদ্দিনের পরিকল্পনা। আইএসএফ এখনও তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি। মনে করা হচ্ছে, তার জন্যই অপেক্ষা করছেন এআইমিম প্রধান। তারপরই হয়তো তিনি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন।
বসে নেই মিম
গত বছরই বাংলার প্রতিবেশি রাজ্য বিহারে ওয়েসির দল সীমাঞ্চল অঞ্চলের ২০ টি আসনের মধ্যে ৫ টিতে জিতেছিল। অধিকাংশ মুসলিম ভোট তাদের পক্ষে গিয়েছিল। বিহারেরই গা লাগোয়া মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, এবং কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, বীরভূম, ও নদিয়া জেলার কয়েকটি আসনকেই বেশ কিছুদিন ধরে পাখির চোখ করেছে এইআইমিম, এমনটাই জানা গিয়েছে। প্রার্থী ঘোষণা না করা হলেও অনলাইনে এবং অফলাইনে সদস্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে প্রচারও চালানো হচ্ছে।
আইএসএফ-কে এড়িয়ে
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী বাংলার প্রায় ২৭ শতাংশ বাসিন্দা মুসলমান। এরমধ্যে আইএসএফ তথা সংযুক্ত মোর্চা দক্ষিণবঙ্গে বাংলাভাষী মুসলমানদের উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পেরেছে বলে মনে করছে আইএসএফ। কিন্তু, মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে এই মোর্চার বিশেষ গুরুত্ব নেই। তাই এই অঞ্চলগুলিকেই রাজনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য বেছে নিয়েছে মিম। এখানকার বেশ কয়েকটি আসনে জয়ী হবে বলেও মনে করছে তারা।
ওয়াইসির পাঁচ সেনাপতি
এর জন্য ওয়াইসি বাংলায় পাঁচ সেনাপতি নিয়োগ করেছেন। এঁরা হলেন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী ৫ মিম বিধায়ক - মিম-এর বিহার শাখার সভাপতি তথা আমুর বিধায়ক আখতারুল ইমাম, জকিহাটের বিধায়ক মহম্মদ শাহনওয়াজ, কোচদামানের বিধায়ক ইজহার আসফি, বাহাদুরগঞ্জের বিধায়ক আঞ্জার নইমী ও বিয়াসী বিধায়ক সৈয়দ আহমেদ। আসাদুদ্দিন নিজে আসবেন চতুর্থ দফার নির্বাচনের আগ দিয়ে। মিম যে আসনগুলিতে লড়বে বলে ঠিক করেছে, সেগুলিতে ওই সময় থেকেই শুরু হচ্ছে নির্বাচন। পরপর রাজ্যে সভা করবেন ওয়াইসি।
লাভের গুড় খাবে বিজেপিই
এখন প্রশ্ন হল এআইমিম-এর বাংলার ভোটে প্রার্থী দেওয়ার অর্থ কী? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে করে সুবিধা হতে পারে গেরুয়া শিবিরেরই। এইবারের বাংলার নির্বাচন দারুণভাবে জাতপাতের ভাগে বিভক্ত। তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ মুসলিম সম্প্রদায়, তা নিয়ে কোনও
তর্ক নেই। আবার সংযুক্ত মোর্চার তিন শরিক - বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ - তিন দলেরই মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সমর্থন রয়েছে। আসাদউদ্দিন ওয়াইসি যে মুসলিম ভোটই টানতে চান, তা সকলেই জানেন। কাজেই তিনি মুসলিম ভোট কাটলে সমস্যায় পড়বে তৃণমূল ও সংযুক্ত মোর্চাই। অন্যদিকে, হিন্দু, বিশেষ করে নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের সমর্থন ক্রমে ভিড়ছে গেরুয়া শিবিরে। সব মিলিয়ে মিম-এর অংশগ্রহণে বাংলায় লাভের গুড়টা খাবে বিজেপিই। মালদা , মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে এখনও আসন জায়গায় না এলেও, এইমিম যথেষ্ট শক্তিশালী - এমনটাই বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।