- Home
- World News
- Bangladesh News
- রোহিঙ্গাদের 'ভাসমান কারাগার'এ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ, খাদের মুখে মানবাধিকার, দেখুন ছবিতে ছবিতে
রোহিঙ্গাদের 'ভাসমান কারাগার'এ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ, খাদের মুখে মানবাধিকার, দেখুন ছবিতে ছবিতে
২০১৭ সালে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল রোহিঙ্গারা। এবার তাদের আবার নতুন করে ঘর খোঁজার পালা। তাদের দ্বীপান্তরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ। যে দ্বীপকে মানবাধিকার সংগঠনগুলি বলছে ভাসমান জেলখানা।
- FB
- TW
- Linkdin
দীর্ঘদিন ধরেই উপকূলীয় শহর কক্সবাজারের শিবির থেকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রায় ১ লক্ষ মানুষকে দ্বীপান্তরে পাঠাবার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছিল বাংলাদেশ সরকার। মূলত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলির চাপে তা এতদিন কার্যকর করতে পারছিল না।
কিন্তু, এবার আর কোনও ওজর আপত্তি শুনছে না তারা। চলতি সপ্তাহ থেকেই হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের বঙ্গোপসাগরের একটি ভাসমান দ্বীপে তাদের স্থানান্তরিত করার কাজ শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির মতে এই দ্বীপ আসলে একটি 'ভাসমান কারাগার'।
মাত্র ২০ বছর আগে সমুদ্রে পলি জমে জমে গড়ে উঠেছিল ভাসান চর। মাছ ধরতে যাওয়া বাংলাদেশি মৎসজীবীরা মাঝে মাঝে এই অনুর্বর দ্বীপে আশ্রয় নিলেও, দ্বীপটিতে এখনও লোকবসতি নেই। মাঝে মাঝেই ,সমুদ্রের জোয়ারের জল পুরো দ্বীপটিকেই ডুবিয়ে দেয় বলে শোনা যায়। যার ফলে জমিও একেবারে অনুর্বর। তার উপর রয়েছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া মুহূর্মুহূ ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি।
এই দ্বীপ মানুষ বসবাসের পক্ষে একেবারেই অনুপযুক্ত বলে দাবি করেছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি। রাষ্ট্রসংঘ-কে এখনও পর্যন্ত দ্বীপটির পুরোপুরি সুরক্ষা মূল্যায়ন করতে দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। এমনকী সাংবাদিক বা মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীদেরও দ্বীপটিতে যেতে গেলে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ অনুমতি লাগে।
তারপরেও, ওই দ্বীপে রোহিঙ্গাদের পাঠিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশ সরকারের এক কর্তা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই অনেক রোহিঙ্গা পরিবারকে কক্সবাজারের শিবিরের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কাউকে কাউকে ইতিমধ্যেই ভাসান চরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, বাকিরা যাওয়ার আগে আপাতত ট্রানজিট সেন্টারে আছে।
২০১৭ সালে মায়ানমার থেকে সেনাদের অত্যাচারে পালিয়ে এসেছিলেন প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান। তাদের আশ্রয় দিয়েছিল বংলাদেশ। কিন্তু, এই বিপুল শরণার্থীর চাপ তারা আর নিতে পারছে না বলে জানিয়েছে হাসিনা সরকার।
রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসংঘ। তারা জানিয়েছে শরণার্থীদের মধ্যে কাদের কাদের ভাসান চরে পাঠানো হচ্ছে তার নির্ভুল তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে হবে। আর, কারা সেখানে যাবেন, সেই বিষয়ে শরণার্থীদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া উচিত। দ্বীপে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। শরণার্থীরা সেখানে গেলেও, সেখান থেকে জলপথে মাত্র কয়েক ঘন্টা দূরে থাকা বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে চলাচলের স্বাধীনতা দিতে হবে তাদেরকে।
কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে তা হচ্ছে না বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের দাবি, বাংলাদেশ সরকার ভাসান চরে স্থানান্তর করার জন্য চিহ্নিত করা রোহিঙ্গা পরিবারগুলির একটি আংশিক তালিকা দিয়েছে। এছাড়া, স্থানান্তরিত করার বিষয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পূর্বানুমতি নেওয়া হচ্ছে না। কাউকে কাউকে বাধ্যতামূলকভাবে স্থানান্তরিত করর ফর্মে সই করানো হচ্ছে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে কক্সবাজারের শিবিরের ঘর ভেঙে গিয়েছে বলে সাহায্য চাইলে, তাদের সরাসরি ভাসান চরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তবে, বাংলাদেশ সরকার এইসব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে। শরণার্থীদের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সরকারের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মহম্মদ শামসুদ দোজা বলেছেন, কাউকে সেখানে যেতে বাধ্য করা হবে না। তবে, তাদের সেখানে যাওয়ার জন্য প্রণোদিত করা হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত শুখা মরসুমে সমুদ্র প্রশান্ত থাকে। সেইসময়ই বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরিত করতে চায়। কাজেই মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে ঠাঁই নেওয়ার পর এবার আবার নতুন ঘরের খোঁজে ভাসতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের।