- Home
- Entertainment
- Bengali Cinema
- Happy Birthday Soumitra Chatterjee: বাংলার পর্দায় বিশ্ব কাঁপানো, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছপোষা বাঙালির মনের মানুষ
Happy Birthday Soumitra Chatterjee: বাংলার পর্দায় বিশ্ব কাঁপানো, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছপোষা বাঙালির মনের মানুষ
উত্তমকুমার, টলিউডের সুপারস্টার, যে মানুষটির আবলিলায় বিচরণ ছিল বাঙালির স্বপ্নে, এক ঝাঁচকচকে রপলী পর্দায় যাঁর নিত্য আনাগোনা, সেই অধরা মানুষটির রাজ্যত্বের মাঝে নিজের পরিচয় তৈরি করে নেওয়ার লড়াইটা লড়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তবে না রাজ্যত্ব বা রাজ্যপাঠ নয়, তিনি ঠাঁই করে নেন সাধারণের মননে, ঠিক যেন ঘরের ছেলে, যাঁকে চাইলেই স্পর্শ করা যায়, যাঁকে চাইলে নিজের করে নেওয়া যায়, অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে ফুঁটে ওঠা চরিত্রেরা তাই বারে বারে দর্শক মনে জানান দিয়েছে, তিনি সাধারণের, তিনি স্টার নন, তিনি একজন দাপটে অভিনেতা, যে সকলের চোখে ভিষণ রকমভাবে পরিচিত।
| Published : Jan 19 2022, 04:35 PM IST / Updated: Jan 19 2022, 05:18 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
১৯৫৯ সাল, বাঙালির মন প্রাণ জুড়ে তখন নায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar), যাঁর ভূবণ ভোলানো হাসিতে মুগ্ধ সকলে। ঠিক তখনই মুক্তি পেয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের 'অপুর সংসার'। বাংলা ফিল্ম জগত পেয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-কে (Soumitra Chatterjee)। সেই সময় উত্তম কুমার একেবারে খ্য়াতির মধ্যগগনে।
অথচ সেই ব্যক্তিত্বর পাশেই নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলেন সৌমিত্র। হয়ে উঠেছিলেন আন্তর্জাতিক বাঙালির মনের মানুষ, বিশ্ব দরবারে বাঙালি সমাজের প্রতিনিধি। হয়ে উঠেছিলেন সাধারমের ঘরের নায়ক, যিনি সাধারণের মত করে গল্প ফুঁটিয়ে তোলেন পর্দায়। কখনও প্রেম, কখনও জীবন সংগ্রাম, কখনও আবার সাংসারিক টানাপোড়েন।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছিলেন উত্তম কুমারের তারকা ছটার পাশে নিজের জায়গা তৈরি করাটা তাঁর পক্ষে মোটেই সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু, উত্তম কুমার যদি 'নায়ক' হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি ছিলেন একেবারে পাশের বাড়ির যুবক, তবে সেই যুবক চিন্তাশীল। আর এখানেই আন্তর্জাতিক বাঙালি মন জিতে নিয়েছিলেন সৌমিত্র এবং তাঁর অভিনিত চরিত্ররা।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও উত্তম কুমারের মধ্যে কে এগিয়ে, তাই নিয়ে বাঙালি সমাজে যতই তর্ক থাকুক, দুই অভিনেতার নিজেদের মধ্যে কিন্তু দারুণ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। তবে পছন্দের ছিল না উত্তম-সুচিত্রা জুটি। এক সাক্ষাতকারে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, যে ছবিগুলিতে উত্তম-সুচিত্রাকে মূল চরিত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলি তাঁর কখনই খুব একটা পছন্দের নয়। কারণ তাদের ব্র্যান্ড মূল্যকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্য করা ছাড়া সেই ছবিগুলি থেকে নেওয়ার মতো কোনও উপাদান ছিল না।
সৌমিত্রকে ঘিরে বাঙালি পরিচয় মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল এক বিশ্বের দরবারে। মনে প্রাণে বাঙালি হয়েও তাঁর ন্যায় নীতি ও জীবনের মূল্যবোধ তাঁকে অনেকখানি এগিয়ে রেখেছিল নব্যতার পথে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার এক জীবন্ত উদাহরণ, যাঁর প্রতিটা সৃষ্টিতে ছড়িয়ে রয়েছে সকলের সঙ্গে চরিত্র নিজেকে ভেঙে গড়ার উপাখ্যান।
আর তাঁর এই চলার পথের বিশেষ সংযোজন হয়ে ওঠে সত্যিজিৎ রায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, টলিউডের এক মহীরুহ, তাঁর পথ চলার শুরুটাই ছিল সত্যজিৎ রায়। অপুর সংসার থেকে শুরু। সেখান থেকেই ফেলুদা হয়ে ওঠা। একের পর এক ছবি করেছেন অভিনেতা সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে। আর এই দুয়ের সমীকরণেই টলিউড পেয়েছে কালজয়ী একাধিক ছবি।
সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট এই চরিত্র বাংলার অন্যতম গোয়েন্দা। ৫০ বছর আগে তাঁর সৃষ্টি। তিনি নিজেই পরিচালনা করে পর্দায় তুলে ধরেছিলেন সোনার কেল্লা। সালটা ১৯৭৪। এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অন্যদিকে তিনকন্যার শেষ ছবি সমাপ্তিতে প্রথম অপর্না সেন ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন। ১৯৬১ সালে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। এরপর দেবী, অভিযান, চারুলতা, আরও কতই সৃষ্টি।
২০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সমান তালে কুড়িয়েছেন বাণিজ্যিক সাফল্য এবং সমালোচকদের প্রশংসা। সঙ্গে অসংখ্য মঞ্চাভিনয়, কবিতা, আবৃত্তি - যে কোনও পরিপূর্ণ শিল্পীর মতোই নিজেকে ক্রমাগত ভেঙেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বাঙালি তথা আন্তর্জাতিক ফিল্ম জগৎ তাঁকে প্রথম চিনেছিল অপু হিসাবে। কয়েক বছর পরই তিনি হয়ে উঠেছিলেন ফেলুদা।
সত্যজিৎ রায়ের পর কেউ যদি খুব কাছ থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়েকে দেখে থাকেন সেই মানুষগুলোর মধ্যে সন্দীপ রায় অন্যতম। তাঁর কথায়, তিনি একজন পরিবারের সদস্যকে হারিয়েছেন। ষাট বছর ধরে কাছ থেকে পুঙ্খাপুঙ্খভাবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাজ দেখেছেন তিনি এবং তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চেনার সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। আর তাই তাঁর কথায়, এমন মাটির মানুষ খুব কম দেখা যায়, কাজের প্রতি শ্রদ্ধা ও একাগ্রতা সকলের নজরে আসত, ফ্লোরে যাঁরাই থাকতেন।