টুবলু থেকে পঞ্চমের যাত্রাপথ, কেমন ছিল সুরের জাদুকরের সেই সফরনামা
- FB
- TW
- Linkdin
সালটা ১৯৩৯ সালের ২৭ শে জুন কলকাতাতেই জন্ম রাহুল দেববর্মণের। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল । বাবা শচীন দেব বর্মণও নামকরা একজন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। এবং মা মীরা দাসগুপ্তও একজন গীতিকার ছিলেন। বাবা ও মায়ের কাছেই প্রথম সঙ্গীতচর্চার শুরু করেন।
প্রাথমিক সঙ্গীতচর্চার পর উস্তাদ আলি আকবর খাঁ ও আশিষ খানের শিষ্য ছিলেন তিনি। বাবা মায়ের আদরের টুবলু এখন সকলের প্রিয় পঞ্চম দা।
টুবলু থেকে পঞ্চম হওয়ার পিছনেও রয়েছে এক কাহিনি। ছোটবেলায় যখন তিনি কাদতেন তখন নাকি তার গলায় সপ্তসুরের পঞ্চম সুর অর্থাৎ পা বেরাত। সেখান থেকেই তার নাম পঞ্চম রাখা হয়। একাধিক সাক্ষাৎকারেও রাহুল দেববর্মণ জানিয়েছেন, এই নামটি তাকে অশোক কুমারই দিয়েছিলেন।
মাত্র নয় বছর বয়সেই 'অ্যায় মেরে টোপি পালাট কে আগানের ' সুর করেছিলেন পঞ্চম। ১৯৫৬ সালে 'ফানটুশ ' চলচ্চিত্রে সেই গান ব্যবহারও করেছিলেন তার বাবা সচীন দেব বর্মণ।
কলকাতাতেই রাহুলের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ বছর বয়সেই পুরো পরিবারকে নিয়ে মুম্বইতে পাড়ি জেন বাবা সচীন দেব বর্মন। সাইকেল চালানো, ব্যাডমিন্টন খেলা, সাঁতার কাটা ছিল তার অত্যন্ত প্রিয়। ছোটবেলায় অনেকেই তাকে নেপালি ভাবতেন। লেখাপড়ায় কোনওদিনই খুব একটা উৎসাহ ছিল না টুবলুর। বরং লেখাপড়ার তুলনায় খেলাধূলায় দক্ষতা ছিল তার।
বয়স তখন মাত্র ২৩। 'ছোটে নবাব ' ছবি দিয়েই একক সুরকার হিসেবে হিন্দি ছবির জগতে প্রবেশ করেন। ছবি এবং ছবির গান খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি সেই সময়। তারপর থেকে চার বছর আর কোনও ছবির সুর করেননি তিনি । তারপরেই ১৯৬৬ সালে 'তিসরি মঞ্জিল ' ছবিতেই রাহুল প্রথম জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ছবির প্রতিটা গানই সুপারহিটের তকমা পেয়েছিস। তারপর ১৯৬৮ সালে ' পরেশন ' ছবিতে তিনি কিশোর কুমারকে নিয়ে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন।
মিউজিকের মাস্টার মাইন্ড পঞ্চম মাউথ অরগানও বাজাতে পারতেন। 'ও মেরে সোনা রে ' গান- এর মাধ্যমেই ইলেকট্রিক অরগ্যানের সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়েছিলেন রাহুল দেববর্মণ।
রাহুলের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রিটা। রিটার সঙ্গে রাহুলের প্রথম দার্জিলিং-এ পরিচয় হয়েছিল। ১৯৬৬ সালে তাদের বিয়েও হয়। কিন্তু সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। ১৯৭১ সালে তাদের বিচ্ছেদও হয়ে যায়। রিটার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরেই 'মুসাফির হু ইয়ারো ' গানটির সুর করেছিলেন আর ডি বর্মন। যা সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে পরিচয় সিনেমাতে ব্যবহার করা হয়েছিল।
১৯৮০ সালে নিজের চেয়ে ৬ বছরের বড় গায়িকা আশা ভোঁসলেকে বিয়ে করেন রাহুল দেববর্মন। যদিও আশা খুব একটা রাজি ছিলেন না। আর ডি বর্মণ মারা যাওয়ার পর আশা সেই শোক প্রকাশ করেছিলেন। রাহুলকেই প্রিয় বন্ধু বলেই মানতেন আশা।
ইয়াদো কি বারাত', 'গোলমাল', 'খুবসুরত', 'সনম তেরি কাসাম', '১৯৪২: আ লাভ স্টোরি', 'রকি', 'শোলে'-র মতো জনপ্রিয় ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি। ১৯৪২: আ লাভ স্টোরি' -তেই শেষ সঙ্গীতপরিচালনা করেছেন পঞ্চমদা। মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোর কুমার, আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকর প্রত্যেকেই পঞ্চমের সুরে গান গেয়ে সকলের মন জয় করে নিয়েছেন।
ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত রাহুল মোট ২৯২টি হিন্দি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত এবং ৩১টি বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন। অনেক বাংলা গানের অ্যালবামও রয়েছে আর ডি বর্মণের। যেগুলো তিনি বিশেষ করে পুজার সময় বের করতেন এবং গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার গীতিকার হিসেবে থাকতেন।