৪৭ এ পা ক্রিকেট ঈশ্বরের, এক ঝলকে মাস্টার ব্লাস্টারের কেরিয়ারের কিছু মুহূর্ত
২৪ বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটভক্তদের মুখে হাসি ফুটিয়ে গেছেন। গড়েছেন অবিশ্বাস্য সমস্ত কীর্তি। দেখে নেওয়া যাক সচিন তেন্ডুলকারের অবিশ্বাস্য কেরিয়ারের সেরা কিছু মুহূর্ত।
- FB
- TW
- Linkdin
১৯৭৩ সালের এপ্রিলের আজকের দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকার। নিজের পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য ছিলেন তিনি। তার বাবা ছিলেন একজন লেখক, মা কাজ করতেন একটি জীবন বীমা সংস্থায়। সচিনের বাবা রমেশ তেন্ডুলকার ছেলের নাম রেখেছিলেন নিজের প্রিয় মিউজিক ডিরেক্টর সচিন দেব বর্মনের নামে।
সচিনের ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় ১১ বছর বয়সে। দাদা অজিত তেন্ডুলকার তাকে নিয়ে যান সচিনের জীবনের প্রথম কোচ রমাকান্ত আচরেকরের একাডেমিতে। সেখান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাই তাকে ভবিষ্যতে কেরিয়ার গঠনে সাহায্য করেছে, এই কথা সচিন নিজেও স্বীকার করেন।
১৯৮৯ সালের ১৫ ই নভেম্বর মাত্র ১৬ বছর বয়সে টেস্টে অভিষেক হয় সচিনের। পাকিস্তানের করাচিতে জীবনের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেন তিনি। সেই চার ম্যাচের সিরিজে সচিন ৩৫ এর গড়ে ২১৫ রান করেছিলেন। শিয়ালকোটে একটি বাউন্সারে নাক ফেটে গেলেও তিনি মাঠ ছাড়েননি। ওই বয়সে ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস সমৃদ্ধ পাকিস্তানি বোলিং লাইন আপ কে খেলা কতটা কঠিন ছিল তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।
১৯৯০ সালের ১৪ ই আগস্ট বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসাবে টেস্টে নিজের প্রথম শতরানটি করেন সচিন। ম্যানচেস্টারে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ওল্ড ট্রাফোর্ডের মাঠে দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৯ রান করে ভারতকে ম্যাচটি বাঁচাতে সাহায্য করেন তিনি।
১৯৯২ সালে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসাবে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শতরান করেন। সিডনিতে তৃতীয় টেস্টে তার অপরাজিত ১৪৮ এবং তার পরের ম্যাচেই তৎকালীন বিশ্বের দ্রুততম পিচ পার্থে করা ১১৪ তার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা শতরানগুলির মধ্যে একটি।
ওই বছরই বিশ্বকাপে ডেবিউ হয় তার। গোটা বিশ্বকাপে তার মোট রানসংখ্যা ছিল ২৮৩। দু বার ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তান এবং জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে তিনি খেলেছিলেন দুটি অর্ধশতরানের ইনিংস।
১৯৯৪ সালে ওপেনার নভজ্যোত সিং সিদ্ধুর চোট থাকায় কেরিয়ারে প্রথমবার ওপেন করেন সচিন। অধিনায়ক আজহারউদ্দিন এবং ম্যানেজার অজিত ওয়াদেকরের কাছে অনুরোধ করে ওপেনিং নিশ্চিত করেন সচিন। সেই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪৯ বলে ৮২ রান করেন তিনি। শুরু হয় ওপেনার সচিনের নতুন এক অধ্যায়।
১৯৯৪ সালে সচিনের সাথে দেখা হয় তার সঙ্গিনী ডঃ অঞ্জলি মেহেতার। তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৯৯৫ সালে তারা বিবাহ করেন। বর্তমানে সারা এবং অর্জুন নামে তাদের এক কন্যা এবং পুত্রসন্তান বর্তমান।
ওয়ান ডে ক্রিকেটে ৭৮ টি ম্যাচ খেলে নিজের প্রথম শতরানটি পান সচিন তেন্ডুলকার। ১৯৯৪ সালে সিঙ্গার ওয়ার্ল্ড সিরিজ কলম্বোতে প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৩০ বলে ১১০ রান করেন তিনি।
১৯৯৬ বিশ্বকাপে সচিন প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হন। দুটি শতরান সহ ৫২৩ রান করেন তিনি প্রতিযোগিতায়। সর্বোচ্চ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৩৭ রান।
সেই একই বছরে প্রথমবারের জন্য ভারতীয় অধিনায়কের দায়িত্ব পান সচিন। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার অধিনায়ক হিসেবে তিনি অতটা সাফল্য পাননি যতটা তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে পেয়েছিলেন। ২৫ টি টেস্টে এবং ৭৩ টি ওয়ান ডে ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দেন তিনি।
১৯৯৮ সালে কোকাকোলা কাপের গ্রূপের শেষ ম্যাচে অনেকের মতে নিজের কেরিয়ারের সেরা ইনিংসটি খেলেন সচিন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৩১ বলে ১৪৩ রান করেন তিনি। ম্যাচটি না জিততে পারলেও দলের ফাইনালে যাওয়া নিশ্চিত করেন সচিন। পরে ফাইনালেও একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শতরান করে দলকে জিততে সাহায্য করেন সচিন।
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও কার্যকর ছিলেন সচিন। লেগস্পিন বোলিং করে তার কেরিয়ারে মোট ২০১ টি উইকেট তুলেছিলেন তিনি। তার কেরিয়ারের সেরা বোলিংটিও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করেন তিনি। ১৯৯৮ এ পেপসি ত্রিদেশীয় সিরিজে ৩১০ রানের লক্ষ্য তুলতে গিয়ে তার বোলিংয়ের সামনে ভেঙে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৫/৩২।
১৯৯৯ বিশ্বকাপ চলাকালীন সচিনের বাবা মারা যান। বাবাকে দাহ করে আবার বিশ্বকাপে খেলতে উপস্থিত হন সচিন। কেনিয়ার বিরুদ্ধে অপরাজিত ১৪০ করে ম্যাচের সেরা হন তিনি। শতরানটি উৎসর্গ করেন নিজের পিতা কে।
২০০২ সালে হেডিংলে তে তিনি কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানের ২৯ টি শতরানের রেকর্ড টপকে যান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই টেস্টে তিনি করেছিলেন ১৯৩ রান।
২০০৩ বিশ্বকাপে ভারত ফাইনাল হারলেও গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে সচিন ছিলেন অবিশ্বাস্য ছন্দে। ১ টি শতরান এবং ৬ টি অর্ধশতরান সহ তিনি মোট ৬৭৩ রান করেছিলেন। তার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করা ৭৫ বলে ৯৮ রানের ইনিংসটি ছিল সেরা। ওই ম্যাচে শোয়েব আখতারের ঘন্টায় ১৫১ কিমি বেগে ধেয়ে আসা শর্ট এবং ওয়াইড বলকে আপার কাট করে মারা ছক্কাটি বিশ্বকাপের সেরা শট বলে মনে করেন অনেকে।
২০০৮ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল খেলতে শুরু করেন সচিন। ২০১০ এ ৬১৮ রান করে প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় এবং সেরা অধিনায়ক নির্বাচিত হন তিনি। ২০১১ তে কোচি টাসকার্স কেরালার বিরুদ্ধে আইপিএলে নিজের একমাত্র শতরানটি করেন সচিন।
২০১০ সালে গোয়ালিয়রে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে ওয়ান ডে ক্রিকেটে দ্বিশতরান করেন তিনি। সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৪৭ বল খেলে এই কীর্তিটি গড়েছিলেন তিনি।
২০১১ সালে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান তিনি। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে ২ টি শতরান এবং ২ টি অর্ধশতরান সহ ৪৮২ রান করেছিলেন তিনি। সচিন মানেন শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতাই তার কেরিয়ারের সেরা মুহূর্ত।
২০১২ তে এশিয়াকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরও একটি কীর্তি গড়েন সচিন। ওই ম্যাচে শতরান করে তিনি নিজের শততম শতরান পূর্ন করেন। যদিও সেই ম্যাচে হারতে হয়েছিল ভারতকে।