রইল শহর তিলোত্তমার সেরা ১০টি বনেদি বাড়ির পুজোর খোঁজ, দেখে নিন এক ঝলকে
বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুর্গোৎসব। এই পুজোকে ঘিরে রয়েছে বাঙালির আবেগ। পুজো ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস। বর্তমানে থিমপুজোর চল বাড়লেও একসময় পুজো বলতে ছিল বনেদি বাড়ির পুজো। কলকাতা শহরে বহু যুগ আগে শুরু হয়েছিল দেবীর আরাধনা। এক অন্য স্বাদের সাবেকি রীতি রেওয়াজে পুজিত হতেন মা। তবে, বর্তমানে যে সেই রীতির নিষ্পত্তি ঘটেছে এমন নয়। এখনও কলকাতা শহরেও একাধিক বনেদি বাড়িতে বিশেষ নিয়ম মেনে মায়ের পুজো করা হয়। আজ রইল এমনই ১০টি বনেদি বাড়ির পুজোর খোঁজে। এবছর দুর্গোৎসবে একেবারে অন্যরকম স্বাদ পেতে চাইলে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন এই সকল বাড়িতে।
- FB
- TW
- Linkdin
দক্ষিণ কলকাতায় বেশ খ্যাত সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের দুর্গোৎসব। ১৭ শতকের সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা এই তিনটি গ্রাম অধিগ্রবণ করেছিল ইংরেজরা। সেই সময় ইংরেজ শাসন থাকাকালীন সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারে দুর্গোপুজোর প্রচল হয়। এই পরিবারের সদস্যরা যে অঞ্চলে বাস করতেন সেখান পুজো করতেন। তবে, এদের বিখ্যাক পুজো হল আটচালা পুজো। যা ১৬১০ সালে শুরু হয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতার বড়িশাতে এখনও এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
রাজা নবকৃষ্ণ দেব পরিবারের পুজো বেশ খ্যাত। ১৭৫৭ সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেব যখন রবার্ট ক্লাইভ ও ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্যান্য অফিসারদের সম্মানিত করেছিলেন, তখন থেকে চর্চায় আছে এই পুজো। এই পুজোই শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো নামে খ্যাত।
বদন চন্দ্র রায় পরিবারের পুজোও সেরা ১০টি বনেদি পুজোর মধ্যে স্থান পায়। মধ্য কলতাকা কলুটোলায় রয়েছে বদন চন্দ্র রায় পরিবারের বনেদি বাড়ি। ১৬০ বছরের পুরনো এই পুজো। এই পরিবারের দান করা জমিতেই মেডিকেল কলেজের বিস্তীর্ণ চক্ষু বিভাগ তৈরি হয়েছে। এই বদন চন্দ্র রায় পরিবারের পুজোয় পুশু বলি দেওয়া হয় না। প্রতীকী বলিদান হিসেবে এরা ফল ব্যবহার করেন।
পূর্ণেন্দু চন্দ্র ধর পরিবারের পুজোও বেশ খ্যাত। এই বৈষ্ণব পরিবারে অসুর বধ করার ভঙ্গিতে দেবী পুজিত হন। ১৬০ বছরের পুরনো এই পুজো। এই পরিবারে দেবীর ১০টি হাতের পরিবর্তে থাকে দুটি হাত। এখানে দেবী অভয়া মা হিসেবে পুজিত হন। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার সময় পূর্ণেন্দু চন্দ্র ধর পরিবারের উত্তর কলকাতার রাজবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল। তারপর তারা অন্যত্র বাস করেন
খেলাত ঘোষ পরিবারের দুর্গোপুজো বেশ খ্যাত। উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা. অবস্থিত এই বাড়ি। এটি সবচেয়ে বড় ঠাকুর দালান। মার্বলে করিডোর, ৪০ ফুটের বেশি লম্বা ও গ্র্যান্ড ডান্সিং হল আছে এই বাড়িতে। এই পুজোর বৈশিষ্ট্য হল দেবীকে বাড়ির তৈরি মিষ্টান্ন ভোগ দেওয়া হয়।
উত্তর কলকাতায় জোড়াসাঁকোতে বসবাস শিবকৃষ্ণ দাঁ পরিবারের। এই পরিবারের দুর্গোৎসব বেশ খ্যাত। শিবকৃষ্ণ দা-র বাবা ১৮৪০ সালে পারিবারিক পুজো শুরু করেন। তবে, শিবকৃষ্ণের যুগে তা খ্যাতি পায়। এই বাড়ির পুজোয় দেবীকে চমৎকার সোনা ও রূপোর অলঙ্কার পড়ানো হয়। বর্তমানে এই রাজবাড়িতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন সিনেমার শ্যুটিং হয়ে থাকে।
সুবল চাঁদ চন্দ্র ১৭৬১ সালে জোড়াসাঁকোর বাড়িকে দুর্গাপুজো শুরু করেন। পরে তারা ঝামাপুকুর বাড়িতে চলে আসেন। ১৮৪০ সাল থেকে এই পরিবারে পুজো খ্যাতি পায়। দেবী দুর্গাকে এখানে দেখা যায় বোরাভয় মুদ্রায়। তিনি স্বামী শিবের কোলে বসে আছেন। কলকাতার সেরা বনেদি বাড়ির পুজোর মধ্যে এটি অন্যতম।
রাধাগোবিন্দ মল্লিক পরিবারের পুজোও বেশ খ্যাত। ১৮৬০ সাল থেকে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের রাধাগোবিন্দ মল্লিক পরিবারে মায়ের আরাধনা করে আসছেন। ১৯২৫ সাল এই পুজো পৈতৃক বাড়ি থেকে বর্তমান বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। এই পুজো দক্ষিণ কলকাতার পুজোর মধ্যে অন্যতম।
ভূকৈলাশ রাজবাড়ির পুজোও বেশ খ্যাত। এটি ১৭৮১ সালে নির্মিত হয়। প্রায় ৩০০ বছরের পুজো এটি। শিব লিঙ্গের মূর্তি একটি ১৫ ফুট লম্বা ও অন্যচি ১২ ফুট। খিদিরপুরে অবস্থিত ভূকৈলাশ রাজবাড়ি। এখানে দেবী পাবণী মা হিসেবে পুজিত হন। ধাতুর তৈরি মূর্তি রয়েছে এখানে।
যানবাজারে অবস্থিত রানী রাসমণি পরিবারের দুর্গাপুজোও বেশ খ্যাত। এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশন থেকে খুবই কাজে অবস্থিত এই পরিবার। ১৯ শতকে নির্মিত হয়েছিল রানি রাসমনির বাড়ি। তিনি দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। রানি রাসমনির পরিবারের সদস্যরা এখনও মায়ের আরাধনা করে আসছেন। বর্তমানে দুটি ভাগে পুজো হয়। তবে, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাড়ির পুজো তিনি নিজের হাতে শুরু করেছিলেন।