- Home
- Lifestyle
- Health
- এই ১০টি কাজ বন্ধ করলেই বাড়বে আয়ু, পাবেন সুস্থ দীর্ঘ জীবন - কী জানালেন বিজ্ঞানীরা
এই ১০টি কাজ বন্ধ করলেই বাড়বে আয়ু, পাবেন সুস্থ দীর্ঘ জীবন - কী জানালেন বিজ্ঞানীরা
দীর্ঘ জীবন কে না চায়? সম্প্রতি, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দের (Ramnath Kovind) হাত থেকে, পদ্মশ্রী পুরষ্কার (Padma Shri award) গ্রহণ করলেন স্বামী শিবানন্দ (Swami Shivanand)। ১৮৯৬ সালে জন্মানো মানুষটির বয়স এখন ১২৬,অথচ এখনও আগের মতোই সক্রিয়। তিনি যোগগুরু, দীর্ঘ সুস্থ জীবনের জন্য প্রচুর আত্মত্যাগ করেছেন। যেমন, তিনি জানিয়েছেন, যৌনতা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থেকেছেন, নিয়মিত যোগাভ্যাস করেছেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে অতটা ত্যাগ করা সম্ভব হয় না। তবে, দীর্ঘ সুস্থ জীবন পাওয়ার অন্য রাস্তা রয়েছে। বিজ্ঞান বলছে, ১০টি জিনিস করা বন্ধ করলেই, যে কোনও মানুষ, স্বামী শিবানন্দের মতো না হলেও, দীর্ঘ সুস্থ জীবন আশা করতে পারে। কী সেগুলি, আসুন দেখে নেওয়া যাক -
- FB
- TW
- Linkdin
গত তিন দশকে, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই খাদ্যতালিকায় ঢুকে পড়েছে প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed Foods)। প্রক্রিয়াজাত খাবার, শরীরে সোডিয়াম স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সর্করা বাড়িয়ে দেয় এবং ফাইবার কমিয়ে দেয়। যার ফলে কার্ডিও ভাস্কুলার রোগ (Cardiovascular Diseases), উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা (Hypertension), ক্যান্সার (Cancer) এবং ডায়াবেটিসের (Diabetes) সমস্যা দেখা দেয়।
ধূমপায়ীরাই জানেন, ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা কতটা কঠিন। কিন্তু, বিশ্বের বিভিন্ন স্বাস্থ্য় প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বলছে, তামাক ব্যবহার সবচেয়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর কারণ। ধূমপান কারোর আয়ুর অন্তত এক দশক কেড়ে নিতে পারে বলে জানা গিয়েছে। ধূমপান ছাড়লেই, রক্তচাপ এবং রক্ত সঞ্চালনের দ্রুত উন্নতি হয়। শুধু তাই নয়, বছর বছর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও কমে। এরসঙ্গে ধূমপান ছাড়লে কোনও ব্যক্তিকে অনেক কম বয়সীও দেখায়।
অনেকেই বলেন, শরীর চর্চার সময় নেই। কিন্তু, ব্যায়াম করা মানে, প্রতিদিন আধ ঘন্টা করে করতে হবে, কিংবা প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন করতে হবে - এমন কোনও বিষয় নেই। ২০১১ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিনিটের মাঝারি-তীব্রতার (জোরে জোরে হাঁটা) ব্যায়ামই কারোর আয়ু তিন বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। যাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগের সমস্যা রয়েছে, কিংবা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য়ও এই অতি অল্প সময়ই যথেষ্ট।
রাগ না করে থাকাটা বেশ কঠিন। বিশেষ করে যদি আপনি মনে করেন, আপনার ক্ষোভ ন্যায্য। তবে, রাগ হলে, নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, হার্ট অ্যাটাকের বিনিময়ে রাগ করাটা সঙ্গত কি? আসলে মানসিক চাপে থাকলে বা রেগে গেলে, শরীরে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। যা, আপনার হৃদযন্ত্র, মেটাবলিজম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক গবেষণাতেই স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি বহু মৃত্যুর কারণ হয় বলে জানানো হয়েছে।
সামাজিক থাকাটা আয়ু বৃদ্ধির বুস্টার বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, সামাজিক থাকলে আপনার মানসিক চাপ কমে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। তবে, মাথায় রাখতে হবে, ভাল সম্পর্কগুলি যেন আপনাকে শক্তিশালী করে, তেমনই খারাপ সম্পর্কগুলি আপনাকে নেতিবাচক মানসিকতায় আটকে দিতে পারে। বিষণ্ণতা গ্রাস করতে পারে এবং এমনকি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও থাকে।
জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তনের কাহিনিগুলি নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। তবে, সাধারণ মানুষের জন্য তা বেজায় কঠিন হয়ে উঠতে পারে, তাই সেই পরিবর্তন সাধারণত স্বল্পস্থায়ী হয়। এই বিষয়টি এড়াতে, সবসময় স্বাস্থ্যকর খাওয়া বা আরও বেশি ব্যায়াম করার সংকল্প স্থির করার সময়ে লক্ষ্যমাত্রা কম রাখার চেষ্টা করুন। জীবনের ছোট ছোট পরিবর্তনগুলিকেও গুরুত্ব দিন।
দীর্ঘায়ুর ক্ষেত্রে যে সমস্ত ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলির বড় ভূমিকা থাকে, তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূ সচেতনতা। মনে করা হয়, সটেতন মানুষ ধূমপান এবং খুব দ্রুত গাড়ি চালানোর মতো ঝুঁকির কাজ এড়িয়ে চলেন। সেই সঙ্গে, ভাল খাদ্যাভাস, নিয়মিত শরীর চর্চা, ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করার মতো স্বাস্থ্যকর আচরণ করে থাকেন। স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলিকে ভয় পেয়ে বা অস্বীকার না করে, সচেতন হওয়াটা জরুরি।
কেউ দিনে কত সময় ঘুমায়, তার উপরেও একজনের আয়ু নির্ভর করে। কম ঘুম বা অতিরিক্ত ঘুম - দুটোই খারাপ। বিজ্ঞানীরা বলেন, ছয় ঘণ্টার কম নয়, আবার নয় ঘণ্টার বেশি নয়। এই ভাবে প্রতিদিন ঘুমানো উচিত। এই হিসাবের বাইরে গেলেই মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
রাগের মতো, মানসিক চাপ-ও আপনার শরীরের উপর প্রভাব ফেলে এবং আপনার আয়ু কমিয়ে দিতে পারে। মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করে, আপনি দীর্ঘমেয়াদে আপনার স্বাস্থ্য এবং জীবনের মান উন্নত করতে পারেন। জার্নালিং বা লেখালেখি, ধ্যান করা - মানসিক চাপ দূর করার সবথেকে ভাল উপায়। প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিটের ধ্যানই আপনার মস্তিষ্ককে উদ্বেগ এবং উত্তেজনা থেকে প্রয়োজনীয় মুক্তি দিতে পারে।
পূর্বপুরুষরা অনেক বছর করে বেঁচেছেন, তাই আপনিও দীর্ঘায়ু হবেন, কিংবা পূর্বপুরুষদের আয়ু কম ছিল বলে, আপনারও তাই হবে - এমন ভাবাটা বন্ধ করুন। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কারোর আয়ুর বিষয়ে জেনেটিক্সের ভূমিকা মাত্র এক তৃতীয়াংশ। আর জেনেটিক্স কারোর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তাই, এই নিয়ে না ভেবে ভাল খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা, ধূমপানের মতো বিষপান না করা, মানসিক চাপ কম রাখা, নিয়মিত চিকিৎসাগত পরীক্ষা করানো এবং এমনকী আপনার সামাজিক সম্পর্কগুলির উপরে নজর দিন। কারণ, আপনার আয়ু বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, আর এগুলি আপনার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।