যক্ষ্মায় আক্রান্তদের কোন খাবার খেলে বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দেখে নিন
কয়েক বছর আগেও যক্ষ্মা রোগ (Tuberculosis) মানেই আঁতকে ওঠার মতো অবস্থা হত। যেন বিশাল বড় কিছু হয়ে গিয়েছে। যক্ষ্মা রোগীর (Tuberculosis Patient) কাছে যেতেও ভয় পেতেন সবাই। সম্পূর্ণ একঘরে করে দেওয়া হত রোগীকে। আর অনেক সময় ঠিক মতো খাওয়া বা চিকিৎসাও (Treatment) হত না। তার জেরে অনেকের মৃত্যুও (Death) হত। কিন্তু, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এই রোগের সঙ্গে লড়তে শিখেছে মানুষ। বর্তমানে চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজেই সারিয়েও ফেলা যায় এই রোগ। একটু সময় লাগে, তবে রোগ পুরোপুরি নিরাময় হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে যক্ষা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়াতে প্রত্যেক বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষা দিবস (World TB Day 2022) পালিত হয়।
- FB
- TW
- Linkdin
যক্ষ্মা (Tuberculosis) একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ। এই রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াটি হল মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস ( Mycobacterium tuberculosis)। শরীরের যে কোনও অঙ্গ এই ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। ফলে শুধুমাত্র ফুসফুসেই এই সংক্রমণ হয় তা একেবারেই নয়।
ভারতে প্রতি ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১৮৭ জন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত। যে কোনও সময় যে কোনও মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারেন। এই রোগে আক্রান্ত হলে চিন্তার কোনও বিষয় নেই। এই রোগে আক্রান্ত হলে কী খাবেন আর কী খাবেন না তা একবার জেনে নিন। কারণ ওষুধের পাশাপাশি এই রোগে খাওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রোগীর জ্বর হয়। অনেক সময় সেই জ্বরের ওষুধ খেলেও কমতে চায় না। আর এই জ্বর সাধারণত রাতের দিকে আসে। আবার সকালের দিকে চলে যায়। আর যখন আসে তখন প্রায় গা পুড়ে যাওয়ার জোগার হয়। কখনও আবার হালকা জ্বর থাকে। যে অংশে টিবি হয়েছে সেখানে ব্যথা হয়। তার সঙ্গে থাকে কাশি। কাশির সঙ্গে মাঝে মধ্যে কফও বের হয়। অনেক সময় কফের সঙ্গে রক্তও বের হয়। ফলে এগুলি দেখলে আগে সতর্ক হন।
দেহের ওজন অনেকটা কমে যায়। খুবই রোগা হয়ে যান আক্রান্ত। আর ওজন এত তাড়াতাড়ি হ্রাস পায় যে আপনি বুঝতেও পারবেন না। তার সঙ্গে খিদেও পায় না। শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়। খালি ঘুমাতে ইচ্ছে করে।
দেহের কাঠামো অনুযায়ী, যে ক্যালোরি প্রয়োজন তার ১০ শতাংশ বেশি ক্যালোরি দেওয়া উচিত। এই সময় ওষুধের সঙ্গে ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাওয়া খুবই প্রয়োজন। না হলে শরীর কখনও ঠিক হবে না। প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে। আর তার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়ার ফলে লিভারে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা তাও দেখতে হবে।
সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট যেমন গ্লুকোজ দেওয়া উচিত। কারণ এর পরিপাকের প্রয়োজন হয় না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্টার্চ জাতীয় খাবার, যেমন ভাত, রুটি ইত্যাদি খাওয়া উচিত। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা হবে ৮০ থেকে ১২০ গ্রাম। আর সেগুলি আসবে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ থেকে। তবে জ্বর থাকাকালীন কম ফ্যাটজাতীয় খাদ্য খাওয়া উচিত। কারণ ফ্যাট সহজে পরিপাক হয় না।
যক্ষ্মার ফলে ফুসফুসে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তা পূরণের জন্য ক্যালশিয়ামের প্রয়োজন হয়। আর সেই চাহিদা দুধের মাধ্যমে পূরণ হয়। দুধ ফসফরাসের চাহিদাও পূরণ করে। আবার এই সময় কফের সঙ্গে রক্ত বের হলে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা যায়। সেজন্য লৌহযুক্ত খাদ্যেরও প্রয়োজন হয়। এই সময় শরীরে ভিটামিন A, B ও C-র ঘাটতি দেখা যায়। এই চাহিদা পূরণের জন্য ১টি করে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত।
পেটে যক্ষ্মা হলে খুব বেশি কাশি হয় না। বা কাশির সঙ্গে রক্তও বের হয় না। তাই এই সময় ভালো মন্দ খেতে হয়। আর বারে বারে খেতে হয়। না হলেই শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। কারণ শরীর একবার দুর্বল হয়ে পড়লে এই রোগ আরও জাঁকিয়ে বসবে। কোনও ওষুধও কাজ করবে না।
দানাশস্য, ডাল, বাদাম, দুধ, মাছ, মাংস, ডিম, মাখন, দুগ্ধজাত খাদ্য, কাস্টার্ড, পায়েস, শাক-সবজির তরকারি, ফল, স্যুপ, স্টু। আসলে এই সময় কোনও খাবার বাদ দেবেন না সব খাবার খাবেন। তাহলেই রোগের সঙ্গে লড়াই করতে পারবেন। না হলে দুর্বল হয়ে পড়বেন।
ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার, ভাজা, আচার, চাটনি, পাঁপড় এই সব না খাওয়াই ভালো। আর তার সঙ্গে মিষ্টিও খুব বেশি পরিমাণে খাবেন না। এতেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটু হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। না হলে বিপাকে সমস্যা হবে।