হেপাটাইটিস কি, জেনে নিন এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ ও প্রকারভেদ
আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এই বছরের হেপাটাইটিস দিবস এর থিম হ'ল 'হেপাটাইটিস মুক্ত ভবিষ্যৎ'। প্রতি বছর এই লিভারের রোগের কারণে বিশ্বব্যাপী এক কোটি ত্রিশ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে এই রোগ ছোঁয়াচে নয় বলে এর প্রতি ভীতিটাও অনকে কম। এই সময় বর্ষার ফলে নানান সংক্রমণের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত ভাবে। তবে এই সয়মে হেপাটাইটিস রোগেরও প্রাদুর্ভাব ঘটেয। তাই এই সময় বিশেষত সতর্ক হওয়া দরকার। এই হেপাটাইটিস রোগ টি কি? জেনে নিন এই রোগের লক্ষণ ও এর প্রকারভেদ।
- FB
- TW
- Linkdin
হেপাটাইটিস কি? সহজ ভাষায়, হেপাটাইটিস হ'ল লিভারের প্রদাহ। সাধারণত দূষিত খাবার বা জলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। রোগের বিস্তার না ঘটা পর্যন্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনও নির্দিষ্ট লক্ষণ ধরা পরে না। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলে শরীর দুর্বল, বমি বমি ভাব, পেটব্যথা, শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করা এবং হলুদ প্রস্রাবের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
শরীরে এই রোগের বিস্তার ঘটলে পেটে জল আসা, রক্ত পায়খানা ও রক্ত বমি হতে পারে। হেপাটাইটিসের ৫ টি ভাইরাস হ'ল এ, বি, সি, ডি এবং ই। এর মধ্যে টাইপ-বি এবং সি মারাত্মক রূপ নেয় এবং লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সার মত মারাত্ম আকার ধারণ করে। প্রাথমিক চিকিত্সা না পাওয়া গেলে, অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে এবং লিভার সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
হেপাটাইটিস এ- এই ভাইরাস দূষিত খাবার এবং জলের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগের ক্ষেত্রে, লিভার ফুলে যাওয়া, ক্ষিদে কমে যাওয়া, জ্বর, বমি এবং জয়েন্টে ব্যথা মত উপসর্গ দেখা যায়।
হেপাটাইটিস বি- এই ভাইরাসটি রক্ত কিংবা দেহনিঃসৃত তরলের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত রক্তে অবস্থিত ভাইরাস এবং এর বিরুদ্ধে অবস্থিত অ্যান্টিবডি থেকে এ রোগ নির্ণয় করা হয়। যকৃতের উপর এর প্রভাবের কারণে রোগীর বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, কোলিক, ত্বকের হলুদ রঙের মতো সমস্যা দেখা দেয়। এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ যা লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সারের রূপ নেয়। যদি কোনও গর্ভবতী মহিলা এটিতে আক্রান্ত হন, তবে গর্ভস্থ শিশুও এই রোগের দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে।
হেপাটাইটিস সি- এই ভাইরাসটি হেপাটাইটিস-এ এবং বি-এর চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। এশিরায় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে রক্ত-থেকে-রক্তে সংযোগ, জীবাণু-যুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, ও রক্ত সঞ্চালনের ফলে হেপাটাইটিস সি এর সংক্রমণ হয়। পৃথিবী জুড়ে আনুমানিক ১৩০-১৭০ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত।
এর লক্ষণগুলি কিছুটা সঙ্কটজনক অবস্থার পরে উপস্থিত হয়। হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তির সচরাচর কোন উপসর্গ থাকে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ যকৃতে ক্ষত এবং বেশ কয়েক বছর পর সিরোসিস সৃষ্টি করে। কোন কোন ক্ষেত্রে সিরোসিস আক্রান্ত ব্যক্তির যকৃৎ অকার্যকর, যকৃতের ক্যান্সার, বা খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর শিরা স্ফীত হতে পারে, যার ফলে রক্তক্ষরণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
হেপাটাইটিস ডি- হেপাটাইটিস-বি এবং সি রোগীদের ঝুঁকি থেকে বেশি থাকে এই ভাইরাসে। এটি দূষিত রক্তের সংক্রমণ, সংক্রামিত সূঁচ ব্যবহার বা শেভিংয়ের অন্যান্য কিটগুলির ব্যবহারের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। লিভারের সংক্রমণের ফলে বমি ও হালকা জ্বর হয়।
হেপাটাইটিস ই- এই ভাইরাস দূষিত খাবার দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগী ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ত্বকের হলুদ হওয়া এবং হালকা জ্বর অনুভব করে। তবে ভারতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা খুব কম। এই সংক্রমণে, রোগী ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ফ্যাকাশে ত্বক চেহারা এবং জ্বরের মতো লক্ষণগুলি অনুভব করেন।