লকডাউনের কারণে বন্ধ হওয়ার পথে বহু রেস্তোরাঁ, ছাঁটাই শুরু সুইগি -জোমাটোতে
- FB
- TW
- Linkdin
জোমাটো এবং উবারের পর এবার চাকরি হারাতে চলেছেন প্রায় ১১০০ সুইগি কর্মী। সংস্থার তরফে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, করোনা মহামারীর কারণে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে সংস্থাকে। ফলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ছাঁটাই করা হবে ১১০০ কর্মীকে।
সুইগির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও শ্রীহর্ষ মাজেতি প্রত্যেক কর্মীকে ইমেইল করে জানিয়েছেন, ‘আজ সুইগির জন্যে খুবই দুঃখের দিন। ইচ্ছা না থাকলেও বাধ্য হয়ে আমাদের ডাউনসাইজিং শুরু করতে হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনে বিভিন্ন শহরে নানা পদে এবং স্তরে কর্মরত প্রায় ১১০০ কর্মীকে বিদায় জানাতে হবে। কোভিডের প্রভাব আগামীদিনে ডেলিভারি ব্যবসা এবং ডিজিটাল কমার্সে কীভাবে পড়তে চলেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। ধোঁয়াশা দীর্ঘদিন থেকে যাবে। এমন অবস্থায় আমাদের এই পদক্ষেপ করতেই হচ্ছে। আরও বড় কোনও ধাক্কা খাওয়ার আগে সংস্থার খরচ যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে।’
শ্রীহর্ষ মাজেতি আরও বলেন, করোনার জন্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ক্লাউড কিচেন ব্যবসায়। ফলে অনেক কিচেনই সাময়িক বা পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
একই অভিজ্ঞতা হয়েছে জোমাটো সংস্থার কর্মীদেরও। ইতোমধ্যে ১৩ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে এই সংস্থা। যেসেব কর্মীদের কাজ থাকছে তাঁদের ৫০ শতাংশ বেতন কাটবে জোমাটো।
কর্মীদের উদ্দেশে জোমাটো-র প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও দীপিন্দর গোয়েল লিখেছেন, "বিগত কয়েক মাসে ব্যবসার বিশেষ কিছু দিকে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আর এই পরিবর্তন স্থায়ী হতে চলেছে পরবর্তীতেও। ম্যানেজমেন্ট যেখানে জোমাটো-কে আরও কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে অনেক কর্মীরই বেশি কাজ নেই।"
গত ১৪ মে জুম অ্যাপে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে উবার সংস্থা ৩,৭০০ কর্মীকে জানিয়ে দেয়, পরের দিন থেকে আর সংস্থার তাঁদের প্রয়োজন নেই। সেই কলের সময়সীমা ছিল মাত্র তিন মিনিট।
করোনা ভাইরাস এর দাপটে পশ্চিমবঙ্গের ৪০ হাজার রেস্তোরাঁ এবং ২০ হাজার হোটেল বিপন্ন হতে চলেছে। বহু ব্যবসায় ঝাঁপ ফেলে দিতে হবে বলে জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ রেস্তোরাঁ ও হোটেল ব্যাবসায়ী সংগঠন।
লকডাউনের শুরু থেকে বন্ধ হোটেল, রেস্তোরাঁ ও পানশালাগুলি কবে খুলবে, তা কারও কাছে পরিষ্কার নয়। ফলে এখানে কর্মরত কয়েক হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী দিনে এই কর্মীদের চাকরি থাকবে কি না, নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।
কিছু কিছু রেস্তোরাঁ অনলাইন সার্ভিস এর মাধ্যমে অস্তিত্ব বজায় রাখলেও এস্টাব্লিশমেন্ট খরচই উঠছে না। লকডাউন উঠে গেলেও মানুষ কতটা বাইরে খাবে, কতটা ইটিং আউট এর ব্যাপারটা চালু থাকবে তাই নিয়ে সন্দিহান ব্যবসায়ীরা।
তথ্য বলছে, একেবারে ভেন্টিলেশনে হোটেল-রেস্তরাঁ শিল্প। সেখান থেকে বের হওয়া বেশ শক্ত। দেশজোড়া লকডাউনে পর্যটন ব্যবসার মতোই ক্ষতি হয়েছে এই ব্যবসায়ও। ছোট, বড়, মাঝারি হোটেল থেকে হালফিলের রেস্তরাঁ, বার, ক্যাফে বা পাব, ক্ষতির বোঝা সামলে কতজন ব্যবসায় ফিরবেন তা নিয়ে সংশয়ে হোটেল ব্যবসায়ীরাই।
মালিকদের দাবি, এই মহামারী কাটানোর পর মানুষের হাতে টাকা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে। ফলে এতদিন যাঁরা হোটেল-রেস্তরাঁয় নিয়ম করে খেয়ে বেড়াতেন, তাঁরাও খরচে লাগাম টানবেন। লোকে কেনাকাটা, বেড়ানো, সবই যেমন কমাবেন, তেমনই কমাবেন রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়াও। অথচ ক্রেতার আশায় দোকান সাজিয়ে বসতে হবে তাঁদের। কিন্তু দিনের পর দিন তো কেউ ক্ষতির বহর বাড়াবেন না। ফলে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোনও দিন।
জানা গিয়েছে, রাজ্যে ছোট, বড়, মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার রেস্তরাঁ এবং বার রয়েছে। আর হোটেল রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার। এছাড়াও রয়েছে আরও রাস্তার ছোটখাটো রেস্তরাঁ। সেগুলো এই তালিকায় নেই। হোটেল মালিকদের বক্তব্য, আগামী কয়েক মাস এমনিতেই কাস্টমার কমে যাবে। বিক্রিবাটাও হবে না। কিন্তু কর্মীদের মাইনে থেকে এসটাব্লিশমেন্ট কস্ট বাড়তেই থাকবে। ফলে একটা সময়ের পর রেস্তরাঁ বা ক্যাফে চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
টাকা খরচ করার প্রবৃত্তি অনেকটাই কেড়ে নেবে লকডাউন। কমবে শপিং মল, রেস্তরাঁয় যাওয়া। হোটেল মালিকদের দাবি, লকডাউন শেষে অন্তত ৩০ শতাংশ মাঝারি হোটেল-রেস্তরাঁ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে তাঁরা ব্যবসায় ফিরবেন কি না সন্দেহ। হোটেল অ্যাসোসিয়েশনও বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত।
কলকাতার স্ট্রিট ফুড ভারত সেরার মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে রোল থেকে শুরু করে তেলেভাজা, ফুচকার ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, চতুর্থদফার লকডাউনে দূরত্ববিধি মেনে হোটেল খোলায় সম্মতি দিলেও রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে।