অসমের তেল কূপের আগুনে জ্বলছে গ্রামের পর গ্রাম, দাবানলের গ্রাসে বিপন্ন এবার বন্যপ্রাণ
- FB
- TW
- Linkdin
উত্তর আসামের তিনসুকিয়া জেলায় প্রায় ১৪ দিন ধরে গ্যাস লিক হওয়ার পর মঙ্গলবার তাতে বিধ্বংসী আগুন ধরে। তিনসুকিয়া জেলার বাগজানে একটি তেলের খনিতে আগুন লাগে৷
জানা গিয়েছে, শেষ ১৪ দিন ধরে ওই খনি থেকে ক্ষতিকারক গ্যাস লিক করছিল৷ সেই লিকেজ বন্ধ করার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসে অসম সরকার ও ওএনজিডি কর্তৃপক্ষ৷ বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা চালানোর সময়ই হঠাৎ আগুন লেগে যায় কুয়োর কাছে। ফলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে।
প্রাকৃতিক গ্যাসে লাগা ওই আগুন তীব্র আকার ধারণ করেছে৷ মনে হচ্ছে যেন অনেকগুলি শক্তিশালী বোমার একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটেছে৷
আগুন ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সংলগ্ন গ্রামগুলিতে। এখনও পর্যন্ত ভস্মীভূত হয়েছে গিয়েছে ৬০টিও বেশি বাড়ি৷ ৮০ কিমি দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে সেই অগ্নিকাণ্ড৷
এখনও পর্যন্ত ওই খনির আগুন নেভাতে পারেননি ওএনজিসি-র বিশেষজ্ঞরা ৷ খনি থেকে ক্রমাগত বেরিয়ে চলেছে কালো ধোঁয়া ও সেই সঙ্গে গ্যাস৷ যা আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে৷ অসমের জঙ্গলে বিধ্বংসী আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ২ দমকলকর্মী। আগুনের উৎসের কাছের জলা জমি থেকে তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়।
আগুন নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে বায়ুসেনাকে হাত লাগাতে হবে৷ বিমান থেকে নেভানোর চেষ্টা করা হবে৷
অসম সরকারের তরফে জানানো হয়েছে এখনও সম্পূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২৫ দিন লাগতে পারে। আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সবরকম সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা ও বায়ুসেনা।
অন্যদিকে সময় থাকতে গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করায় অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড অবহেলা করেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। আগুন নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
ইতিমধ্যেই ওই ক্ষতিকারক গ্যাস লিকের কারণে প্রভাবিত হয়েছে জীব বৈচিত্রে পরিপূর্ণ ডিব্রু শইখোয়া জাতীয় উদ্যান এবং মাগুরি মোটাপাং জলাভূমি।
জীববৈচিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ হটস্পট হিসেবেই পরিচিত ডিব্রু শইখোয়া জাতীয় উদ্যান এবং মাগুরি মোটাপাং জলাভূমি। এখানে ৩৬ ধরনের প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণি রয়েছে। আর ৩৮২ প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়। মাগুরি বিলের কিছুটা অংশ পাখিদের জন্য সংরক্ষিত। এভিয়ান ও জলজপ্রাণিদের পছন্দের তালিকার মধ্যেও পড়ে এই এলাকা। কিন্তু গ্যাস লিক আগুনের উত্তপা ক্রমেই প্রভাব ফেলছে এই এলাকায়।
তেল কূপের আগুন ইতিমধ্যেই প্রাণ কাড়তে শুরু করেছে বন্য প্রাণিদের। বিশেষ করে শোচনীয় অবস্থা পাখিদের। তেল কূপে অগ্নিকাণ্ডের ফলে বাস্তুতন্ত্রের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।
তেল কূপের আগুন শুধু যে অরণ্যভূমির ক্ষতি করেছে তা নয়, ক্ষতি হয়েছে কৃষি জমিরও। স্থানীয়দের একটা বড় অংশ পেশায় কৃষক। অনেকেই মূল জীবিকা পশুপান আর মাছ ধরা। কিন্তু তেলকূপের দুর্ঘটনা তাদেরও সমস্যায় ফেলেছে। বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় চরম ক্ষতি মুখে পড়েছেন কৃষকরা। আর প্রবল ক্ষতি হয়েছে জলাভূমিক। জলে তেল মিশে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে জলজ প্রাণ। গৃহপালিত প্রাণিরও সমস্যা বাড়ছে।
তেল কূপের আগুন গোটা এলাকার চালচিত্র বদলে দিয়েছে বললেও অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে ইতিমধ্যেই অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সেই সাহায্য যথেষ্ট নয় বলেই দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।