করোনাভাইরাস-জনতা কার্ফু-লকডাউন-নিউনর্মাল, ফিরে দেখা মহামারির এক বছরে ভারতের চালচিত্র
- FB
- TW
- Linkdin
জানুয়ারি
বছরের প্রথম দিকে ভারতে তেমন ভাবে আঁচ পড়েনি করোনাভাইরাসের। কিন্তু ৩০ জানুয়ারি প্রথম এই দেশে করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। আক্রান্ত ছিলেন কেরলের ত্রিশুরের বাসিন্দা। ৩১ জানুয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক করা হয়।
ফেব্রুয়ারি
আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন।সকলেই ছিলেন কেরলের বাসিন্দা। এই মাসেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের নতুন নামকরণ করে সার্স কভ২। বা কোভিড ১৯। এই মাসেই ভারত সফর করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের মোদী বিরোধীরা সরব হয়েছিল জমায়েত থেকে আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ।
মার্চ
মাস ঘুরতে না ঘুরতেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৯৭। মৃত্যু হয় ৩৫ জনের। করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংক্রমণ রুখতে ২৪ মার্চ জনতা কার্ফুর ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপরের দিন থেকে ঘোষণা করা হয় তালাবন্দি। স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা দেশের জনজীবন।
এপ্রিল
আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৩৪,৮৬৩। মৃত্যু হয় ১,১৫৪ জনের। দেশে লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয় ৩ মে পর্যন্ত। জাতীয় সড়কগুলিতে ঢল নামে অভিবাসী শ্রমিকদের। বাস ট্রেন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটেই তাঁরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন। বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার পর কেন্দ্রীয় সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য ট্রেনের ব্যবস্থা করেন।
মে
লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ৫ হাজারেরও বেশি মানুষের। লকডাউন থাকলেও খুলে দেওয়া হয়েছিল মদের দোকান। মে মাসেই চালু হয়েছিল বন্দেভারত মিশন। বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়া আনা হয়েছিল ভারতীয়দের। নেতৃত্বে ছিল এয়ার ইন্ডিয়া। ২০ লক্ষ কোটি টাকার আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেড ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
জুন
জুনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও শুরু হয়ে যায় আনলক পর্ব। সেই সময় সুস্থ হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা অসুস্থ মানুষের তুলনায় বেশি হতে থাকে। জুন মাসেই বিশ্বের করোনা আক্রান্তের ক্রমতালিকায় চতুর্থ স্থান দখল করেছিল ভারত।
জুলাই
এক মাসের মধ্যেই বিশ্বের করোনা আক্রান্তের ক্রমতালিকায় রাশিয়া পিছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছিল ভারত। ওই মাসেই শুরু হয়েছিল আনলক ২। জুলাই মাসেই কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয় ভারতে
আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ক্রমবর্ধমান। দৈনিক আক্রান্তের গড় ছিল ৯০-৯৫ হাজার। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আনলক ৪ এর গাইডলাইন ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রোজেনেকার বিকাশ করা কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়লের অনুমোদন দেয় ডিসিজিআই। সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার উদ্যোগেই ট্রায়াল রান চলে।
সেপ্টেম্বর
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই উদ্বেগ বাড়াতে শুরু করে। কিন্তু সেই সময় ধীরে ধীরে শুরু হয়ে যায় দেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ। সেম্পেম্বরেই দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলকে টপকে যায় ভারত। করোনার চূড়া দেখা গিয়েছিল। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৭ হাজারেও বেশি মানুষ।
নভেম্বর
আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয় বিশেষজ্ঞদের। প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যায় জনজীবন। একের পর এক ভ্যাক্সিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সাফল্য আর্জন করতে থাকে। যা করোনা বিশ্বে বাড়িয়ে দেয় স্বস্তি। কিন্ত এই মাসের শেষের দিকেই ব্রিটেনে সন্ধান পাওয়া যায় করোনার নতুন স্ট্রেনে।
ডিসেম্বর
আক্রন্ত করোনাবিশ্বের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দৈনিক আক্রান্তের গড়ও স্বস্তি দিয়েছে। এই মাসে দেশে মোট আক্রান্তের পরিমাণ ১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অসুস্থতার থেকে সুস্থতার হার বেশি হওয়ায় স্বস্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ব্রিটেনের করোনা স্ট্রেন। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২০।