- Home
- India News
- ধরা পড়ে শুধু চুনোপুটিরাই, কীভাবে বারবার বেঁচে যায় কেরলের সোনা পাচার-চক্রের রাঘব বোয়ালরা
ধরা পড়ে শুধু চুনোপুটিরাই, কীভাবে বারবার বেঁচে যায় কেরলের সোনা পাচার-চক্রের রাঘব বোয়ালরা
- FB
- TW
- Linkdin
কত বড় এই পাচার চক্র?
শুল্ক বিভাগের সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯-২০ সালে কেরল থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া চোরাপচে আসা সোনার মোট পরিমাণ ৫৫০ কেজি। যা কিনা, একই সময়ে ভারতে বাজেয়াপ্ত হওয়া অবৈধ সোনার ১৫ শতাংশ। তবে শুল্ক বিভাগের মতে এই বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনার পরিমাণ মোট পাচার হওয়া সোনার খুব সামান্য অংশমাত্র। তাও এটা বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনার পরিমাণের ক্ষেত্রে সর্বকালীন রেকর্ড। ২০১৮-১৯ সালে এই রাজ্য থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছিল ৪০১ কেজি সোনা।
কেন চোরা পথে আসা সোনার এত চাহিদা?
মূল কারণ অবশ্যই বিপুল মুনাফার লোভ। ভারতে সোনার বর্তমান বাজার মূল্য অনুসারে, চোরাপথে আসা সোনার ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে শুধু আমদানি শুল্কের ক্ষেত্রেই পাঁচ লক্ষ টাকা বাড়তি লাভ হয়। এছাড়া আরও অন্য়ান্য কর থাকে। এইসব কর ফাঁকি দেওয়া চলে একেবারে অলংকার হয়ে সেই সোনা শোরুমগুলিতে পৌঁছে যাওয়া অবধি। এর থেকেই স্বর্ণের চোরা ব্যবসায়ীদের লাভের পরিমাণটা ঠিক কতটা বেশি, তা আন্দাজ করা যায়।
কীভাবে হয় এই চোরাচালান?
শুল্ক বিভাগের কর্তারা জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে একই পদ্ধতিতে কেরলে সোনা পাচার হয়ে চলেছে। যারা এই চোরাই সোনা উড়ান পথে বয়ে আনে, তাদের সাধারণত, কেরলে সেই সোনা কাকে দিতে হবে তা জানানো হয় না। কিন্তু, সেই বাহক ব্যক্তির ছবিসহ বিশদ বিবরণ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে পেয়ে যায় কেরলের পাচার চক্রের সূত্ররা। বিমানবন্দরের বাইরে বা আগে থেকে ঠিক করা কোনও জায়গায় তারা বাহকের জন্য অপেক্ষা করে। এরপর বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এড়িয়ে বাহকরা বেরিয়ে আসতে পারলে, তাদের সঙ্গে দেখা করে সেই সোনা নিয়ে নেয় কেরলের পাচারচক্রের সদস্যরা। আর বাহকরা ধরা পড়ে গেলে নিঃশব্দে সরে পরে তারা। অনেক সময় চেকিং কম হয় বলে চোরাচালানকারীরা কোনও কেন্দ্র থেকে অন্য কেন্দ্রে সোনা পাচারের জন্য চলচ্চিত্রাভিনেতাদের মতো সেলিব্রিটিদেরও বাহক হিসাবে নিযুক্ত করে।
কেন আটকানো যায় না সোনা পাচার?
ভারতীয় শুল্ক বিভাগের জন্য বড় বাধা হল মধ্য প্রাচ্যে তদন্তের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা। জানা গিয়েছে এর আগে বেশ কয়েকবারই আরব মুলুকে এই চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত কিছু বড় মাথার সন্ধান পেয়েছে ভারতীয় তদন্ত সংস্থারা। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে লুক আউট সার্কুলার জারির বেশি কিছু করা যায়নি। এছাড়া, কেরলের বিমানবন্দরগুলিতে কঠোর নজরদারি চালানো হলে পাচারকারীরা ঘুরপথে সোনা নিয়ে আসে। এই জন্য তারা ব্যবহার করে কাঠমান্ডু বিমানবন্দর-কে। সেখানে নেমে ভারত-নেপাল সীমান্ত সড়ক পথে অতিক্রম করে তারা ট্রেন বা সড়ক পথে কেরল পৌঁছে যায়। ভারত-নেপাল সীমান্ত নজরদারি খুব একটা কড়া নয়। তাছাড়া সড়ক বা রেলপথেও কেরলে তেমন চেকিং হয় না।
কীভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে রাঘব বোয়াল-রা?
কেরলে গত এক বছরে সর্বকালীন রেকর্ড পরিমাণ অবৈধ সোনা উদ্ধারের অর্থ, আগের থেকে অনেক বেশি পরিমাণ চোরাই সোনা বাহক ধরা পড়েছে। কিন্তু তারা নেহাতই চুনোপুটি। রাঘব বোয়ালরা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গিয়েছে। এর মূল কারণ, পাচারকারীদের কর্মপদ্ধতি। বাহকরা যেহেতু কেরলে কাকে সেই সোনা দিতে হবে, তার সম্পর্কে কিছুই জানেন না, তাই শুল্ক বিভাগের হাতে কোনও বাহক ধরা পড়লেও তার কাছ থেকে র্যাকেটের পরের ব্যক্তিদের সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না।
এবার কেন পরিস্থিতি আলাদা?
গত ৫ জুলাই কেরলের তিরুঅনন্তপুরম বিমানবন্দর থেকে ৩০ কেজি সোনা বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। আর তা পাঠানো হয়েছিল আরব আমিরশাহি-র কেরলের দূতাবাসের ঠিকানা দিয়ে। সেইসূত্রেই তদন্তকারীরা কয়েকজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তাদের দুইজনই হলেন স্বপ্না সুরেশ এবং সন্দীপ নায়ার। তাদের এদিনই কর্নাটকের বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এরাও পাচার চক্রের নেহাত কান বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু, কান যখন পাওয়া গিয়েছে, তখন তা ধরে টানলে মাথাও চলে আসবে হাতের মুঠোয়, এরকমই আশা করা হচ্ছে।