- Home
- India News
- বাড়ি ফিরতে মরিয়া 'ওঁরা', রবীন্দ্রনাথের কথায় যাঁরা কাজ করে 'দেশে দেশান্তরে' 'নগর প্রান্তরে'
বাড়ি ফিরতে মরিয়া 'ওঁরা', রবীন্দ্রনাথের কথায় যাঁরা কাজ করে 'দেশে দেশান্তরে' 'নগর প্রান্তরে'
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে গত ২৫ মার্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকে লকডাউনে সামিল হয়েছে গোটা দেশ। কিন্তু লকডাউনই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। যাঁদের একটা বড় অংশই অভিবাসী শ্রমিক। দুটো বেশি পয়সা আর পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যাঁরা নিজের ভিটে মাটি, জন্মভূমি ছেড়ে চলেগেছেন দুর দেশে। কিন্তু আচমকাই লকডাউনের কারণে বন্ধ উপার্জন। তাও দেখতে দেখতে কেটে গেছে এক মাস। জমাপুঁজি শেষের পথে। এই অবস্থায় বাড়ি ফিরতে মরিয়া শ্রমিকরা হেঁটছেন মাইলের পর মাইল। অন্ন-জলের ঘোর অনটন। কিন্তু তাও বাড়ি ফিরতে মরিয়া শ্রমিকদের সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই বলেই জানিয়েছেন। সোমবার থেকেই ১৫ জোড়া ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত যদি আগে নেওয়া হত তাহলে হয়তো এত সমস্যায় পড়তে হত না অভিবাসী শ্রমিকদের। তেমনই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
- FB
- TW
- Linkdin
লকডাউনের পর বন্ধ কাজকারবার। তাই বন্ধ উপার্ডনও। সম্পূর্ণ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে দেশের অভিবাসী শ্রমিকরা।
রেল স্টেশন হোক আর বাস স্ট্যান্ড হোক অধিকাংশ জায়গায়তেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিধি মেনেই অভিবাসীদের জড়ো হতে দেখা গেছে। পথ চলতি অভিবাসীরাও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে নাক মুখ ঢেকে রেখেছেন।
অভিবাসীদের খাদ্য সংকটও চরম। পথ শ্রমে ক্লান্ত অভিবাসীদের দুবেলা ভরপেট খাবারও জুটছে না। রাস্তায় কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যদি খাবার বিলি করে তবে সেই খাবারই তাঁদের কাছে অমৃতসম। দেশের অনেক জায়গায়ই অভিবাসীদের জন্য খাবার বিলি করছে অনেক সংগঠন। ব্যক্তিগত উদ্যোগের ছবিও ধরা পড়েছে।
পরিবারের জন্যই ঘর ছেড়েছিলেন অভিবাসী শ্রমিকরা। কাজ নিয়ে দিয়েছিলেন অন্যত্র। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই সংকটজনক যে বর্তমানে বহু অভিবাসী শ্রমিকই নিঃস্ব। বাড়ি ফিরতে বাড়ি থেকেই টাকা আনতে হচ্ছে।
শ্রমিক ট্রেন নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে সেই ট্রেনে প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। আর ট্রেনে ওঠার প্রক্রিয়াও অনেকটাই জটিল। তাই আর ট্রেনের ভরসায় না থেকে অনেক অভিবাসী শ্রমিকই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটা পথেই রওনা দিয়েছেন।
অভিবাসী শ্রমিকদের অনেকেই আবার ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নিজের সঞ্চিত পয়সায় বাস, ট্রাক ভাড়া করেই দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। কেউ কেউ আবার নিজের সম্বলটুকু খরচ করে কিনেছে সাইকেলও।
আর যাঁদের সেই সামর্থ নেই তাঁরা জাতীয় সড়ক, ঝাঁচকচকে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়েই হাঁটতে শুরু করেছেন। প্রশাসনের তরফ থেকে বাধা এসেছে। কিন্তু নিজেদের মত রাস্তা বার করে নিয়েছেন ওঁরা। অভিযোগ অনেক সময় অভিবাসী আটকাতে পুলিশ লাঠিও পেটাও করেছে। কিন্তু তবুই থামান যায়নি ওঁদের।
রাস্তায় পুলিশের বাধা এড়াতে অনেক অভিবাসী শ্রমিকই আবার রেললাইনকেই নিজেদের পায়ে চলা পথ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যাঁর মর্মান্তিক পরিণতিও সামনে এসেছে। মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ ছাড়াও আরও দুই একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ভারতীয় রেল, ভারতের লাইফলাইন হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু সেই রেললাইনকে যাঁরা বাড়ি ফেরার পথ বানিয়েছেন তাঁদের সেখানেও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ রেল লাইন দিয়ে হাঁটা আইনত অপরাধ। অনেক জায়গাতেই রেল পুলিশ বাধা দিচ্ছে তাঁদের।
এই লকডাউনের এই সময় অপমানিত হতে হয়েছে অভিবাসী শ্রমিকদের। বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিবাসীদের কীটনাশন দিয়ে স্নান করানোর মতও ঘটনা ঘটেছে। যা খুবই অমানবিক বলেও অভিয়োগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকার শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করলেও সেই ট্রেনের টিকিট নিয়ে কালো বাজারির অভিযোগও উঠেছে।