২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আছড়ে পড়তে চলেছে 'নিসর্গ', মুম্বইতে জারি হয়ে গেল লাল সতর্কতা
- FB
- TW
- Linkdin
আবহাওয়া দফতরের কথায়, নিসর্গ যেভাবে শক্তি বাড়াচ্ছে, তাতে এই ঘূর্ণিঝড়ের রূপ বেশ ভয়ঙ্কর৷ একেবারে তছনছ হয়ে যেতে পারে মুম্বইসহ মহারাষ্ট্রের বহু এলাকা ৷
মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই আরব সাগরের গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। প্রথমে উত্তরমুখী পড়ে অভিমুখ পরিবর্তন করে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। শেষ পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয় এটি মহারাষ্ট্রের রায়গর এর কাছে হরিহরেশ্বর ও দমনের মাঝে উপকূলে আছড়ে পড়বে। উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় এই ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ১২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়।
মঙ্গলবার সকালে গভীর নিম্নচাপের অবস্থান ছিল মহারাষ্ট্রের মুম্বাই উপকূল থেকে ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে। গুজরাতের সুরাট উপকূল থেকে এই গভীর নিম্নচাপের দূরত্ব ছিল ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে।
দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব মধ্য ও উত্তর-পূর্ব আরব সাগরে আগামী কয়েকদিন মৎস্যজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অতিভারী বৃষ্টি হবে গুজরাত দাদরা, নগর হাভেলি ও মধ্য মহারাষ্ট্রে। ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে লাক্ষাদ্বীপ, কেরল, কর্নাটক ও গোয়াতেও।
ঘূর্ণিঝড় আছে পড়ার আগেই বুধবার সকাল থেকে রায়গর, মুম্বই, পালঘর থানে এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বইবে ৯৫ থেকে ১১৫ কিলোমিটার গতিবেগে। গুজরাতের ভালসার ও নাভাসাড়ি এবং মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি, সিন্ধুদূর্গ এলাকায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে। ৭০থেকে ৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় ঝড় বয়ে যাবে গুজরাতের সুরাটের ভারুচ এলাকায়।
ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রে হাজির হয়েছে ১০ টি এনডিআরএফের দল। সমস্ত উপকূলে সমুদ্রের পাশে থাকা লোকজনদের সাবধান করা হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে গোয়া, কেরল, দমন ও লাক্ষাদ্বীপ।
মৌসম ভবন তাদের ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছেন এর আগে ১৮৯১ সালের জুন মাসে আরব সাগরে ঠিক এরকমই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল ৷ সেটাই ছিল মহারাষ্ট্রের দেখা প্রথম ভয়াবহ ঝড় ৷ সে সময় আবহাওয়া পরিমাপ উন্নত না থাকায়, ভয়াবহ তাণ্ডবের মুখে পড়েছিল মহারাষ্ট্র ৷ তছনছ হয়েছিল বহু এলাকা ৷
২০০৯ সালে অবশ্য আরও একটি ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডব দেখিয়েছিল মহারাষ্ট্রের কিছু জায়গায় ৷ তবে ঘূর্ণিঝড় ফিয়ানের শক্তি খুব একটা বেশি না থাকায়, সেভাবে ক্ষতির মুখে পড়েনি রাজ্যটি৷
ঘূর্ণিঝড় আমফানের তুলনায় নিসর্গের শক্তি অনেকটাই কম হবে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। তবে বুধবার সকাল থেকে মুম্বই, ঠানে, পালঘর আর রায়গড় জেলায় ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।
ঝড়ের সঙ্গেই প্রচুর বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র আর দক্ষিণ গুজরাত উপকূলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে কলকাতা তছনছ হওয়ার পর এবার তাই মুম্বইয়ের পালা কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হাওয়ার গতিবেগ কম থাকায় কলকাতার মতো ভয়াবহ অবস্থা মুম্বইয়ের হবে না।
এদিকে এমনিতেই এখন করোনার দাপটে বেহাল অবস্থায় রয়েছে মুম্বই সহ গোটা মহারাষ্ট্র। দেশের মধ্যে সর্বাধিক করোনা আক্রান্ত রয়েছেন মহারাষ্ট্রতেই। এরমধ্যে যদি সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় আছড়ে পড়ে, তবে মহাবিপদ হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নিসর্গ মোকাবিলায় কেন্দ্রের তরফ থেকে সবরকম সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। কথা হয়েছে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও।
ঘূণিঝড় "নিসর্গ"-এর নামকরণ করেছে বাংলাদেশ। তবে নিসর্গের প্রভাব সরাসরি পশ্চিমবঙ্গে না পড়লেও আবহওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এরাজ্যেও।