এআইমিম-এর সঙ্গে কি জোট গড়বে তৃণমূল, বাংলার রাজনীতিতে বোমা ফাটালেন ওয়াইসি
বিহারে চমকে দেওয়া ফল, তারপর নজর এখন বাংলায়। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসালিমিন বা এআইমিম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন বাংলার বেশ কয়েকটি আসনে লড়বেন তাঁরা। আর তাতেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে হইচই পড়ে গিয়েছে। বিহারে যেমন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে আরজেডি-র মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ধস নামিয়েছেন ওয়াইসি, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কের একই অবস্থা হবে না তো? প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তবে, শত্রুতা নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রাক-নির্বাচনী জোট গড়তে পারে মিম, এমনটাই শোনা যাচ্ছে।
- FB
- TW
- Linkdin
তৃণমূল-এআইমিম জোট
টাইমস নাও-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী তৃণমূলের সঙ্গে প্রাক-নির্বাচনী জোট গড়ার প্রস্তাব দিতে চলেছে এআইমিম। আসাদউদ্দিন ওয়াইসি নাকি বলেছেন, বিজেপি-কে হারাতে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সহায়তা করতে চান।
নজরে উত্তরবঙ্গ
জানা গিয়েছে বিহারে যেমন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সীমাঞ্চলেই ১১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল মিম, সেরকমই পশ্চিমবঙ্গেও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের জন্য উত্তরবঙ্গের তিন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাকে পাখির চোখ করছেন ওয়াইসি। এই তিন জেলা হল মালদা, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর।
মমতা কি রাজি হবেন
মিম জোটে প্রস্তাব দিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে রাজি হবেন বলে মনে করছে না রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। প্রথমত, রাজ্যে তাঁর নিজেরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আলাদা জনপ্রিয়তা রয়েছে। মিমকে আসন ছাড়লে সেই জনভিত্তি হারাতে হতে পারে মমতা কে। তা তিনি কখনই চাইবেন না। ইতিমধ্যেই 'বহিরাগতরা বাংলায় এসে গুন্ডামি' করছে বলে নাম না করেই ওয়াইসিকে নিশানা করেছেন তিনি। তৃণমূল নেতারাও ওয়াইসিকে বিজেপি-র এজেন্ট বলে আক্রমণ করা শুরু করেছেন।
রাজি করাতে পারে বিজেপি
তবে উত্তরবঙ্গে বিজেপি-র প্রভাব যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত ওয়াইসির প্রস্তাবে রাজি হয়ে যেতেও পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আরেক অংশ। তাণদের মতে উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি আসনে জিততে পারে বিজেপি। বৃহস্পতিবারই বাংলার ভারপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অমিত মালব্য দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গে গেরুয়া ঝড় উঠতে চলেছে। তিন রাজ্যে মিম-কে আসন ছেড়ে সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে পরাজয় এড়াতে পারেন মমতা। সেইক্ষেত্রে হারলে তার দায়বার ওয়াইসি-র উপরে চাপানোর সুযোগ থাকবে।
চাপে বাম-কংগ্রেস'ও
২০১৬ সালের মতো ২০২১ সালের নির্বাচনেও জোট করেই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। কিন্তু, ওয়াইসি মালদা, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর নিশানা করায় তৃণমূলের মতোই চাপে পড়েছে বাম-কংগ্রেসও। ২০১৬-তে তাদের জোট এই তিন জেলার ৭৬ টি আসনের মধ্যে ৩৪ টিতে জয়লাভ করেছিল। এইবারেও তৃণমূল-বিজেপি দ্বিপাক্ষিক লড়াইয়ের মধ্যে দাঁত ফোটানোর জন্য তারা উত্তরবঙ্গের উপরেই ভরসা করছে। এআইমিম-কে প্রতিরোধ করার জন্য ইতিমধ্যেই কৌশল সাজাতে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছেন রাজ্যের বাম ও কংগ্রেস নেতারা, এমনটাই সূত্রের খবর।
ধর্মনিররেক্ষরা সাবধান
বিহারের নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরই লোকসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি, ওয়াইসি-কে বিজেপির নিযুক্ত 'ভোটকাটার' বলে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ধর্মনিররেক্ষ দলগুলিকে ওয়াইসি-র থেকে সাবধান থাকতে হবে।
ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ ওয়াইসি
তবে শুধু বাংলাতেই নয়, গোটা ভারতবর্ষেই নয়া রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করছেন ওয়াইসি, এমনটাই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। দীর্ঘদিন ধরে এআইমিম দল আটকে ছিল হায়দরাবাদ-তেলেঙ্গানার গণ্ডিতে। এখন ধীরে ধীরে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং বাংলার মতো ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে শক্তিবৃদ্ধি করছে তারা। সব মিলিয়ে মহম্মদ আলি জিন্নার পর ফের মুসলিম সমাজ ভিত্তিক এক সর্বভারতীয় নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করছেন ওয়াইসি, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।